কভিড-১৯: মৃত্যুর আসল কারণ

অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ
  প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ১৯:৪৫| আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২০, ২০:২৩
অ- অ+
অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ

কেভিড ১৯ কেন এত লোকের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে এবং আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেন তাকে ঠেকাতে পারছে না, তা নিয়ে একটু আলোচনা হোক।

আমাদের শ্বাসতন্ত্রের(Respiratory System) দুটো ভাগ আছে। ঊর্ধ্ব শ্বাসনালি ও নিম্নশ্বাসনালি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যদি শুধু ঊর্ধ্ব শ্বাসনালিতে সীমাবদ্ধ থেকে আমাদের কিছুদিন কষ্ট দিয়ে চলে যায়, তা তেমন ক্ষতিকর নয়। অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণেও আমরা এভাবে ভুগি ও আবার সুস্থ হয়ে যাই।

তবে কভিড ১৯ এর সাথে অন্য ভাইরাসের তুলনা করবেন না। কভিড ১৯ হয়ে উঠতে পারে সাক্ষাত যমদূত। করোনাভাইরাস যদি উর্ধ্ব শ্বাসনালি ছেড়ে নিচে নামতে থাকে তাহলে লংকাকাণ্ড বেঁধে যেতে পারে। এ ভাইরাস নিচে নামার সময় শ্বাসনালির ভেতরের সেললাইনে ঢুকে সব ধ্বংস করে দিয়ে যায়। নিচে আবরণযুক্ত লাল রংয়ের যে করোনা ভাইরাসটি দেখছেন, তার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য প্রোটিন দ্বারা তৈরি গজাল বা স্পাইক।

এই গজালসমৃদ্ধ লিপিড বাইলেয়ারের ভেতরে নিরাপত্তাবলয়ে আবদ্ধ ভাইরাসটি শ্বাসনালির ভেতরের দেয়ালের সেল বা কোষের রেসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে সেলের প্রাচীর গলিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। সেলের ভেতরে বিদ্যমান ফিউরিন নামের এক ধরনের এনজাইম স্পাইকসমৃদ্ধ আবরণকে দ্বিখণ্ডিত করে ভাইরাসটিকে(RNA)বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে।

এই ধ্বংসাত্মক আরএনএ ভাইরাস মানব কোষের পুষ্টি ও সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করে অগুনতি ভাইরাসের কপি তৈরি করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। করোনা ভাইরাস এত দ্রুত কাজগুলো করে ফেলে যে শরীরের ইম্মিউন সিস্টেম তা বুঝে ওঠার সময় পায় না। কারণ কভিড-১৯ হলো সম্পূর্ণ নতুন শত্রু, যাকে আগে কোনোদিন ইম্মিউন সিস্টেম দেখেনি।

আগ থেকে পরিচিত হলে দক্ষ স্পেশাল ব্রাঞ্চের সৈন্যসামন্ত নিয়ে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুত থাকতে পারতো এবং সন্ত্রাসী কভিড ১৯ কে উপযুক্ত যুদ্ধকৌশল ব্যবহার করে ঘায়েল করতে পারতো। এটাই কভিড-১৯ এর বাহাদুরি। জেনেটিক কোড পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে শরীরে ঢুকে পড়ে শরীরের ইম্মিউন সিস্টেমকে হতবাক ও অকার্যকর করে দিয়ে সামনে এগিয়ে চলে। কিন্তু তারপরও ইম্মিউন সিস্টেম কিছু একটা তো করে। অনভিজ্ঞ সাধারণ সৈন্যবহর নিয়ে ইম্মিউন সিস্টেম ভাইরাসকে কাবু করার জন্য এলোপাথাড়ি আক্রমণ চালিয়ে শরীরের ভালো সেলগুলোরও ক্ষতিসাধন করে ফেলে। ইতোমধ্যে কভিড ১৯ ফুসফুসের অ্যালভিউলি পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং বংশবিস্তার অব্যাহত রাখে।

অন্য ছবিতে দেখুন অ্যালভিউলি কীভাবে কাজ করে। ফুসফুসের অ্যালভিউলি হচ্ছে আঙুরের থোকের মতো, যার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে দুই ধরনের রক্তনালি। নীল রংয়ের রক্তনালি হলো সেল থেকে সংগৃহীত বিষাক্ত কার্বনডাইঅক্সাইডে ভর্তি। এই রক্তনালি থেকে বিষাক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড অ্যালভিউলি হয়ে ফুসফুসে ঢুকে এবং ফুসফুস তা শরীর থেকে বাইরে বের করে দেয়। আর লাল রংয়ের যে রক্তনালি দেখছেন, তা অ্যালভিউলি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সারা শরীরের প্রত্যেকটি সেলে পাঠিয়ে দেয়। অক্সিজেন ছাড়া আমরা বেশিক্ষণ বাঁচতে পারি না।

ফুসফুস কভিড ১৯ দ্বারা আক্রান্ত হলে অ্যালভিউলিসহ ও রক্তনালির দেয়ালে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং অ্যালভিউলিতে তরল পদার্থ(fluid) জমে যায়। এ অবস্থায় সেকেন্ডারি ইনফেকশন পরিস্থিতিকে ভীষণ জটিল করে ফেলে। ফলে অক্সিজেন ও কার্বনডাইঅক্সাইডের আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে শরীরের কোটি কোটি সেল অক্সিজেন পায় না এবং সারা শরীরে কার্বনডাইঅক্সাইড জমে গিয়ে শরীর নীল হয়ে যায়। এটা নিউমোনিয়ারও লক্ষণ। এতে প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

এ অবস্থায় রোগীকে ভেন্টিলেটরে রেখে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখতে হয়। এতে কেউ কেউ বেঁচে গেলেও অধিকাংশ রোগী মারা যায়। ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায় রোগী ভাইরাসমুক্ত হয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগ রোগী মারা যায়। কারণ কভিড-১৯ ইতোমধ্যে তার ফুসফুসকে অকেজো করে দিয়ে গেছে।

লেখক: বিভাগী প্রধান, ফার্মেসী বিভাগ, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টঙ্গীতে মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক মাহফুজকে হত্যা
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে Industry Academia Collaboration Summit-2025 শুরু
নির্বাচনি প্রতীক: নৌকা বাদ ও শাপলা তালিকাভুক্ত করার দাবি এনসিপি’র
কুষ্টিয়া পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ফটকে ময়লা ফেলে কর্মবিরতি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা