একদিন পর মুসলিমদের সহযোগিতায় পুরোহিতের সৎকার

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ মে ২০২০, ২৩:৪১

ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার কামারগ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মৃত ব্যক্তির সৎকারে বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে স্থানীয় মুসলিমদের সহযোগিতায় ওই মৃত ব্যক্তি দাহ করেছেন এক হিন্দু যুবক।

গত শুক্রবার রাতে বোয়ালমারী পৌরসভার কামারগ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ও বোয়ালমারী কেন্দ্রীয় রক্ষাচন্ডী মন্দিরের সাবেক পুরোহিত অমরেশ ঠাকুর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। স্থানীয় গ্রাম্য কোন্দলের জেরে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মৃতদেহের সৎকারে এগিয়ে আসেনি হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ। পরবর্তীতে শনিবার বিকালে স্থানীয় মুসলিমদের সহযোগিতায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহার চেষ্টায় তার দাহ সম্পন্ন হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ সাত বছর যাবত গ্রাম্য দ্বন্দ্বের কারণে অমরেশ ঠাকুরের পরিবারকে একঘোরে করে রাখে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী একটি গ্রুপ। স্থানীয়ভাবে মাসখানেক আগে বিষয়টির সমাধানও হয়। তবুও অমরেশ ঠাকুরের মরদেরহ দেখতে গেলে বোয়ালমারী কেন্দ্রীয় রক্ষাচন্ডী মন্দির কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার সাহার সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ এবং সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করেন অমরেশের পরিবারের সদস্যরা। এতে শ্যামল কুমার সাহা ও তার অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মৃতের সৎকারে আসতে স্থানীয় হিন্দুদের বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন অমরেশ ঠাকুরের মেয়ে শিউলী ঠাকুর। মৃত্যুর একদিন পরও কেউ সৎকারে না আসার খবর পেয়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহা স্থানীয় মুসলমানদের সহযোগিতায় পৌরসভার রায়পুর শ্মশানঘাটে মৃত ব্যক্তির সৎকার সম্পন্ন করেন।

এ বিষয়ে সঞ্জয় সাহা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অমরেশ ঠাকুরের সৎকারে বাধা দেয়ার খবরটি জেনে কামারগ্রামস্থ তার বাড়িতে যাই। সব কিছু জানার পর স্থানীয় হিন্দুদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় প্রতিবেশি মুসলমানদের সহযোগিতায় মৃতের দাহ সম্পন্ন করি।

মৃত অমরেশ ঠাকুরের মেয়ে শিউলী ঠাকুর জানান, আমার দুই ভাই বর্তমানে ভারতে অবস্থান করার কারণে আমরা মা-বাবাকে দেখার জন্য এখানেই থাকি। বাবার সঙ্গে গ্রাম্য দ্বন্দ্ব থাকায় স্থানীয় হিন্দু নেতা বাবলু সিকদার, কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রবিন লস্কর, পলাশ বৈরাগী, অরূপ সাহা দীর্ঘ সাত বছর যাবত আমাদের পরিবারকে একঘোরে করে রাখে।। এরই সূত্র ধরে রক্ষাচন্ডী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হওয়া সত্বেও তাকে তাড়িয়ে দেয় মন্দির কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার সাহা। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও আমাদের যোগদানে বাধা সৃষ্টি করেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর শ্যামল সাহা বাবাকে দেখতে এলে আমার মেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করে। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে ফিরে যান। পরে জানতে পারি, আমার বাবার সৎকারে স্থানীয়দের না আসতে নিষেধসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়েছেন তিনি।

সৎকারে বাধা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বাবু শ্যামল কুমার সাহা বলেন, আমার জীবনে স্থানীয় নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডে সবসময়ই আমি অগ্রগামী। অমরেশ ঠাকুরের সৎকারে বাধা দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। বরং মাসখানেক আগে সম্প্রদায়ের অন্যদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাই। ঘটনার দিন তাকে দেখতে তার বাড়িতে গেলে তার পরিবারের সদস্যরা আমার সাথে রূঢ় আচরণ করে। এতে আমার অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে তার সৎকারে না যায় তাতে আমি কিইবা করতে পারি।

(ঢাকাটাইমস/৩মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :