করোনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে

সাহাদাত পারভেজ
 | প্রকাশিত : ১০ জুলাই ২০২০, ১১:৪৫

করোনা আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে এটা ঠিক। আবার করোনা কিন্তু আমাদের চোখও খুলে দিয়েছে। অনেকের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে এত উন্নত, এত ভালো করোনা না আসলে আমরা বুঝতেই পারতাম না।

‘করোনা না আসিলে কি আমরা রিজেন্টের মো. সাহেদ, জেকেজির আরিফ চৌধুরী, ডা. সাবরিনা, জেএমআইয়ের আবদুর রাজ্জাক, এলান কর্পোরেশনের আমিনুল ইসলাম আমিন, মেডিটেকের মো. হুমায়ূন কবির, তমার মতিউর রহমান কিংবা ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মডিক্যাল কলেজের মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর মতো এমন দেশ প্রেমিকদের নাম জানিতে পারিতাম? করোনাই কিন্তু তাহাদের মতো মহান ব্যক্তিদের নাম আমাদের জানিবার সুযোগ করিয়া দিয়াছে।’ তাহলে কি করোনা একটা ধন্যবাদ পেতে পারে? পারে।

তবে আমি দিব না। কারণ করোনা কারো কোরো বিষয়ে বড় নির্দয় আবার কারো কারো ব্যাপারে খুবই সদয়। তাই আমার কাছে করোনা বড় রহস্যময়। এর মতি গতি বোঝা যায় না। করোনা আমাদের অনেক প্রিয় মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, মানুষের জীবিকা কেড়ে নিয়েছে; জীবন স্থবির করে দিয়েছে। আবার এই একই করোনা অনেক কুলষিত মানুষকে পাহাড়সমান অবৈধ ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছে। আবার তাদের মুখোশ উন্মোচনেও সাহায্য করেছে। তাই আমি তাকে রহস্যময় বলেছি। করোনা কারনে সমাজ যাদের নতুন করে ভিন্ন পরিচয়ে চিনতে পারলো, তাদের যোগাযোগ সমাজের উঁচু জায়গায়।

তাদের হাত বেশ লম্বা। এরা সবসময় ধরা ছোয়ার বাইরে। কাছে না গেলে দূর থেকে এদের দেখাও যায় না। এই যে সাহেদ নামের যে লোকটার নাম এখন সবার মুখে মুখে, কার সঙ্গে ছবি নাই তার? বড় বড় মানুষের সঙ্গে ছবি তুলে, সেলফি তুলে, মাঝরাতে টেলিভিশনে টকশো করে গলা ফাটিয়ে এত দিন সে মানুষের সঙ্গে প্রতারণাই করে গেছে। সমাজে করোনা বিস্তারে তার যে অবদান, এ কারণে সমাজ তাকে দীর্ঘ দিন মনে রাখবে। এই যে জেকিজির আরিফ আর সাবরিনা দিনের পর দিন মানুষকে ধোকা দিয়েছে। বোকা বানিয়েছে। করোনার জাল সনদ বানিয়ে ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। জেনেশুনে তারা করোনা ছড়িয়েছে।

তাদের অফিসে নাকি পাওয়া গেছে ইয়াবা খাওয়ার নানা সরঞ্জাম। ভাবা যায়! এই যে রাজ্জাক নামের যে লোকটা, জেএমআইয়ের মালিক; মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া তার কারখানা। সেই কারখানায় পিপিই কিংবা মাস্ক বানানো হয় না। সিরিঞ্জ বানানো হয়। কিন্তু চতুর এই লোকটা বাজার থেকে নকল মাস্ক ও পিপিই কিনে তার কারখানায় প্যাকেট করে অরজিনাল এন-৯৫ মাস্ক সিল লাগিয়ে চালিয়ে দিল। কেন্দ্রিয় ঔষধাগারও তা সাদরে গ্রহণ করলো। অতি নিম্নমানের এই মাস্ক ও পিপিই ব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের অনেক ডাক্তার কোভিডে আক্রান্ত হলো, মারা গেল। তদন্ত শেষে জানা গেল, তাদের পণ্য করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম না।

তাহলে এর দায় কে নেবে? রাজ্জাক জামাতের একজন পৃষ্ঠপোষক বলে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর বেড়িয়েছে। এমন একজন লোক কেমন করে ঔষধ প্রশাসনের এত ঘনিষ্ট হয়, কেউ কি বলতে পারেন? আমার কিন্তু মাথায় আসে না। প্রায় একই রকম অভিযোগ বাকিদের বেলায়ও। প্রতারণার দায়ে দুদক এদের তলফ করেছে। কেউ দেখা করে গেছে আবার কেউ এখনো দেখা করতে আসে নাই। দুদক হয়তো দুদকের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিচারের বিষয়ে মানুষের মনে যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে; তা দূর হচ্ছে না। মানুষ এখন কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে, এদের কোনো বিচার হবে।

আজ সারা দিন ফেসবুকে বিভিন্ন জনের টাইম লাইনে দেখলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেন্ডারে অংশ নিয়েছে দুটি টেলিভিশন। কেউ কেউ অবশ্য বলার চেষ্টা করছে, টেলিভিশন না, টেলিভিশনের মূল প্রতিষ্ঠান। তারা আবার শর্ট লিস্টেড হয়েছে। টেলিভিশন আর টেলিভিশনের মূল অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আলাদা কিছু না; যাহা লাউ, তাহাই কদু। টেলিভিশন যদি ঠিকাদারী ব্যবসায় নামে, আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি তাদের গোপন সমর্থন কিংবা নেপথ্য পৃষ্ঠপোষকতা পায় তাহলে দিন শেষে মানুষ কতটুকু স্বাস্থ্যসেবা পাবে তা নিয়ে আমি খুবই সন্দিহান।

লেখক: সংবাদচিত্রী ও শিক্ষক

ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :