ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়ার কবিতা: নগ্ন নির্জনতা
বিরান বটবৃক্ষে ঝুলে থাকা বাদুড়ের মতো ঝুলে আছে দুঃসময়
যেন ঘড়ির কাঁটা ঠায় দাঁড়িয়ে ঠিক বারোটায়;
ডায়ালের কারাগারে বন্দি ভাঙাচোড়া ঘড়ির কাঁটা
পরিত্যক্ত আস্তাকুঁড়ে নিয়ন্ত্রিত নিদ্রায়
যেন পরাজিত যুদ্ধক্ষেত্রে ভাঙা তলোয়ার, কিংবা
সূতোকাটা ফুটো ঘুড়ি ঝুলে আছে শুকনো গাছের মগডালে;
অথবা আধাছেঁড়া দড়িতে সুতীক্ষ্ণ ত্রিশূল ঝুলে আছে
এক্কেবারে বুকের পাঁজরের ঠিক এক আঙুল উপরে।
এরকম সময়ের কী নাম দেয়া যায়?
এরই নাম কি বন্ধ্যা সময় ?
নাকি প্রজননে অক্ষম কালের সঙ্গে
নিষ্ফলা রমণ!
অথবা বোদ্ধাদের অভিধায় ‘বেজন্মা সময়’।
অবশ্য তাদের কাছে এ নিবেদন নির্মোহ নয়
যাদের জন্যে বর্তমান এক রত্নগর্ভা প্রসন্ন প্রসূতি:
ঘাতকের জঠর থেকে জন্ম নিয়েছে
তথাগত অযুত সাফল্য, নিযুত সার্থকতা;
তবে সে সবে যুক্তির কানাকড়ি জোড় নেই, আছে জোরের যুক্তি
কে জানে এর গভীর কুঠরিতে কতোটা রহস্যে ঢাকা নিষ্ঠুর রসিকতা!
সাপ বিচ্ছু ভাইরাস ভিমরুল ঘুণপোকা আরশোলা পঙ্গপাল
উইপোকা উঁকুন টিকটিকি ছারপোকা চামচিকে মাছি-মশা নেঙটি ইঁদুর
সে সবের পরও কি
রক্তচোষা বহুরুপি গিরগিটির প্রজনন ভারি প্রয়োজন?
নাকি এরাই ধারণ করে ওসবের প্রতীকী স্বরূপ
জীবন ধারণের প্রয়োজনে যারা দ্বিপদী স্তন্যপায়ী
আর স্বভাবে রপ্ত করেছে সরীসৃপের নর্তন কুর্দন!
কী নাম দেবেন এই সঙ্গিন সময়ের?
সে নামেই ডাকুন, যে নামের বিউটি বক্সে থাকুক
প্রেমের মাশকারা, আইশ্যাডো, আইলাইনার, আইল্যাশ কার্লার
কিংবা কল্পিত কাজল
তবে কোন ক্রমেই যাতে আর্টিফিসিয়াল টি য়ার ড্রপ না থাকে
মেক-আপ কিটে কিংবা ভ্যানিটি ব্যাগে।
প্রেমের জন্যে হৃদয়ের চেয়েও বেশি দরকার চকিত চোখের
কখনো কখনো উষ্ণতা থেকে অশ্রুই বেশি প্রয়োজন;
আকাশ যদি বৃষ্টিই না ঝরায় আকাশ থেকে লাভ কি?
চোখ যদি অশ্রুই না ঝরায় চোখ থেকে লাভ কি?
হৃদয় যেহেতু নির্বাসনে
হৃদিতার নিশ্রিত ভালোবাসা ডুবে গেলে শরীরের ঢেউয়ের দোলায়
চোখের প্রস্রবণ বইয়ে দেবে মমতার সিঞ্চন
এভাবেই তপ্ত বুকের পাটাতনে নেমে আসবে
শ্রাবণের শান্তি, শান্তির বর্ষণ।
সময়ের সতিন হয়ে কতো বাঁচা যায়?
দুঃসময় দুর্বলের ঘরে নিত্য দেয় হানা;
লোকালয় ছেড়ে তাই নিরাপদ গুহাতেই গড়েছি আস্তানা।
পুষ্পিত আরোপিত বেশভূষা
কথার কারুকাজ, কূটনৈতিক কুটিলতা
অকারণ উল্লাস, কৌতুক কোলাহল
আতস বাতির আমোদে চিতারোহণ
যে রাজ্যে নির্বাসিত;
জনান্তিকে নির্ভেজাল নগ্ন নির্জনতা
অন্তর্গত শক্তির সঙ্গে একান্তে পরিচয়ের চিন্ময় সুযোগ;
তারপর, অপেক্ষা অপেক্ষা কেবলই অপেক্ষা:
সময়ই জীবনের জন্যে নির্ধারিত যম,
সময়ের সূক্ষ্ম একক
ভিন্ন রূপে দম;
সময়ের সঙ্গে সন্ধি বীরের জন্যে নয়
সময়ের আঁচলে মুখ লুকায় তারা, যারা নিতান্ত অধম
তবুও সময়
কেবলি সময়
শুধুই সময়
একমাত্র সময়ই গভীর ক্ষতের অব্যর্থ উপশম,
কিংবা নির্জনতা নিরাময়ের মোলায়েম মলম।