ঢাকা দক্ষিণের ‘যন্ত্রণা’ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৩৫ | প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৩০

পায়ে চালিত রিকশা-ভ্যানের সঙ্গে মোটর যুক্ত করে তাকে বানানো হয়েছে অটোরিকশা, অটোভ্যান। বিদ্যুতে চার্জ হওয়া এসব অটোরিকশা, অটোভ্যান এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো রাজধানী। একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছেয়ে গেছে ইজিবাইকে। অবৈধ এসব পরিবহন বন্ধে নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

নগর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় কর্নপাত নেই অটোরিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকের মালিক, চালকদের। দক্ষিণ সিটির সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ পরিবহনগুলো।

এদিকে সিটি করপোরেশন বলছে, নির্দেশনার পর অযান্ত্রিক পরিবহনকে যান্ত্রিক পরিবহনে রূপান্তরকারীদের পরিবহনগুলোকে পুনরায় অযান্ত্রিক পরিবহনে রূপান্তরের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়া হয়েছে। যারা নির্দেশনা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেড়িবাঁধ, হাজারীবাগ, বায়েরবাগ, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদা, খিলগাঁও, মান্ডা, নন্দিপাড়া, রামপুরা, ইসলামবাগ, ধানমন্ডি, কামরাঙ্গীরচর, সোয়ারিঘাট, বাবুবাজারসহ সকল এলাকাতেই দেখা মিলছে ব্যাটারিচালিত রিকশার। ইজিবাইক চলাচল করছে বেশিরভাগ এলাকায়।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর ডিএসসিসি নগর ভবন প্রাঙ্গণে রিকশা, ভ্যান, ঠেলা গাড়ি, টালি গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত কোন রিকশা, ইজিবাইক, ভ্যান আর সড়কে চলবে না। এগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের রিকশা বা যানবাহন ঢাকা দক্ষিণ সিটির সড়কে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সেদিনই এ বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে নির্দেশনার পরেও নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুলো সরতে দেখা যায়নি অবৈধ অটোরিকশা মালিক ও চালকদের। একই অবস্থানে রয়েছে ইজিবাইকও।

তবে নগর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, নির্দেশনার পর এসব অটোরিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক মালিক শ্রমিকদের কিছুটা সময় দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মালিক শ্রমিকরা অযান্ত্রিক যে বাহনকে যান্ত্রিক বাহনে রূপ নিয়েছেন তা পুনরায় অযান্ত্রিক বাহনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র আবু নাছের ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে সকল অযান্ত্রিক বাহনে মোটর বা ইঞ্জিন সংযোজন করে যেসব অযান্ত্রিক বাহনকে ইঞ্জিনচালিত বাহনে রূপান্তর করা হয়েছে, গত ১৩ তারিখ সেগুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা অযান্ত্রিক বাহনে যন্ত্র সংযোজন করে সেগুলো যান্ত্রিক বাহনে রূপান্তর করছে- আমরা তাদেরকে এ নির্দেশনা মানার আহ্বান জানাচ্ছি এবং তারা যেন অযান্ত্রিক বাহনে রূপান্তর করে সে আহ্বানও জানাচ্ছি।’

করপোরেশনের নির্দেশনা না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটির এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এখনো অনেকে এ নির্দেশনা মানছেন না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বিষয়টি সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যৌক্তিক সময়ে এসব বাহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’

জানা গেছে, সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা কমপক্ষে ১৭ লাখ। এর মধ্যে ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান। বাকি ৭ লাখ ইজিবাইক। আর ঢাকায় এই সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। এর মধ্যে ১০ লাখ রিকশা বাকি ২ লাখ ইজিবাইক।

২০১৭ সালে যখন আইন করে মহাসড়কে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তখন এই সংখ্যা ছিল এর অর্ধেকেরও কম। আইন করার পর হাইকোর্টও এক আদেশে এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পুলিশকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো নিষেধাজ্ঞাই কার্যকর হয়নি।

এদিকে এসব অটোরিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ‘লাইনম্যান’। একইভাবে লাইনম্যানের দেখা মিলবে ইজিবাইক স্ট্যান্ডগুলোতেও। যারা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে অটোরিকশা ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে লাইনম্যানরা মূলত বেতনভূক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ‘লাইন খরচ’ নামে প্রকাশ্যেই চাঁদা তোলেন লাইনম্যানরা।

আবার লাইনচার্জের বাইরে অঘোষিত অনুমোদন নিতে হয় অটোরিকশাকে। অনুমোদন হিসেবে একটি চক্র ভিজিটিং কার্ডের আকারের একটি কার্ডে সরবরাহ করে থাকে রিকশা মালিকদের। প্রতি মাসের জন্য একটি করে কার্ড নিতে হয় রিকশামালিকদের। আর এই কার্ডের বিপরীতে খরচ গুণতে হয় এলাকাভেদে হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। এদিকে অনুমোদনহীন মোটরযুক্ত পরিবহনগুলোর কারণে সড়কে দুর্ঘটনার ঘটনাও নিয়মিত। দ্রুতগতিসম্পন্ন এই পরিবহণের পেছনে খরচ হচ্ছে বিপুল বিদ্যুৎ।

(ঢাকাটাইমস/২২সেপ্টেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :