কাজে আসছে না ৫ কোটি টাকার সেতু
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার জিঞ্জিরাম নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু স্থানীয়দের কোনো কাজেই আসছে না। সংযোগ সড়ক না থাকায় তিন বছর ধরে প্রায় অকেজো হয়েই পড়ে আছে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকায় নির্মিত সেতুটি। সাম্প্রতিক বন্যায় সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় পারাপারে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইজলামারী গ্রামে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, একদিকে দায়সারা ভাবে বালু দিয়ে ব্রিজে ওঠার সংযোগ দেওয়া হলেও অপরদিকে ব্রিজ থেকে নামতে কিংবা উঠতে নেই কোনো সংযোগ সড়কের ব্যবস্থা। অপর প্রান্তে ঝুঁকি নিয়ে ইস্পাতের শিট নামতে বা উঠতে হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ (এলজিইডি) ২০১৭ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করলেও তৈরি করেনি সংযোগ সড়ক। ফলে ব্রিজের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন প্রত্যন্ত এই জনপদের মানুষ।
এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, ‘হামাগো সরকার কুটি ট্যাহা দিয়া ব্রিজ দিলেও সেটা দিয়া পার হবার পাবাইছি না। ব্রিজের দোনো পাশে নাই কোন ঘাডা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হবার নাগে। বন্যার সময় তো আরো কষ্ঠ বেশি হয়। ব্রিজ উঠা-নামা করবার যায়া মেলা মাইনসের ঠ্যাং-হাত ভাংগিছে।
এখানকার বাসিন্দা ছকমল আলী বলেন, হামরা বাহে কৃষি কাজ করি সংসার চালাই। বাজারত ফসল বেচপার গেলে ৩/৪ কিলোমিটার ঘুরি যাওয়া নাগে। ৪/৫শ টাকা বেশি খরচ হয়। ইয়াতে করি খরচ বেশি পড়ে। তোমরায় কন ক্যামতে হামার গরিব মাইনসের পোষায়। এই ব্রিজটার আস্থা ভাল থাকিল হয় তাইলে এত্যিকার মাইনসের টাকা বাচি গেইল হয়। অল্প সময়ে বাজার যাওয়া গেইল হয়।
এমন দৃশ্য উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বড়ুয়া শ্রীবল্লভ এলকায় একটি ব্রিজে। ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ায় এখান বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্রিজের দুইপাশে বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।
পাশ্ববর্তী যাদুরচর ইউনিয়নেও একই দশা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধিনে কয়েক বছর নির্মিত দুটি সেতুর। মূল রাস্তা থেকে ব্রিজে ওঠার জায়গা প্রায় ৫/১০ফুট পর্যন্ত মাটি না থাকায় চলাচল করা যাচ্ছে না। কর্তিমারী-বড়াইবাড়ি সড়কের কাশিয়াবাড়ি এলাকায় ব্রিজ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার করতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন বলেন, উপজেলায় এমন অনেক সড়কে ব্রিজ রয়েছে সেগুলোর এ্যাপ্রোচ রোডের করুণ দশা। এমন দুর্ভোগের কথা উচ্চ পর্যায় জানিয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে উন্নয়নের বরাদ্দের মাঠ পর্যায় বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেগুলোর সঠিক তদারকির অভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছেও বলে তার দাবী।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, চলতি বছর প্রায় ৬টি বন্যায় অনেক ব্রিজ/কালভার্টের সড়কের মাটি ধসে গেছে। কেননা এই অঞ্চলের বালু মাটির পরিমাণ অনেক বেশি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সেগুলো ঠিক করে দেবার জন্য ঠিকাদারদের কঠোর ভাবে বলা হয়েছে।
ঢাকাটাইমস/৩ জানুযারি/পিএল