( ৪র্থ কিস্তি)
ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র অণুকাব্য
১. পরমের রঙ-তুলি
কোন তুলি আর কোন রঙে তুমি এমন মনোরম ছবি আঁকো!
তোমার প্রেমের মহিমার রঙ মনের গহনে কোথায় রাখো?
আমরা কখনো পাবো না কি সেই রঙের মণির খনির খোঁজ?
মেধা ও মননে ত্রিভুবন চষে সে-খোঁজই অবিরাম চালাই রোজ।
তোমার দিব্য আলো যে পেয়েছে তারই হলো সেই বোধ-উদয়,
সৃষ্টির কতো বিচিত্র শোভায় তুমি হে বিধাতা মহিমময়
কল্পনা রঙে আল্পনা আঁকায় ভাব দিলে যারে কাল্পনিক,
তোমার মনের রঙের আঁচড়ে যে মন হয়েছে নান্দনিক।
২. স্বর্গ সুখ
ধন জন বিত্ত; থাক যতো অফুরান,
সব ফেলে করো আগে স্বস্তির সন্ধান।
বস্তির ঘুপচিতে যে দু:খীর বসতি,
তার সারা জীবইতো আঁধারের নিশুতি।
এক বেলা খেতে পেলে তার মহাশান্তি,
নিমেষেই দূর হয় তার সব ক্লান্তি।
তার জানা নেই কাকে বলে জৌলুস,
জন্ম থেকেই সে একইতো মানুষ।’
থাকে যদি শান্তি; প্রেম আর স্বস্তি,
স্বর্গীয় সুখ দেয়— হোক না তা বস্তি।
৩.নবীর শিক্ষা
যেই নবী পেটে পাথর বেঁধেছেন ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে,
তার উম্মত নাম লিখিয়েছে মজুতদ্বারের খাতাতে।
পাড়া প্রতিবেশি আছে রোগে শোকে; দিন কাটে অনাহারে,
তোমার কেবল ভোগের বিলাশ আহারে বাহারে বাড়ে।
পেট ভরে খেয়ে তৃপ্ত ঢেকুড়ে আরামে কাটিয়ে দিন,
কোন তরিকায় নবীর উম্মত দাবি করো হে মুমিন?
৪. ত্যাগের তাগিদ
অনন্তকাল যদি স্বর্গের বাসিন্দা হয়ে থাকতে চাও,
ইহকালের এই আয়েশি স্বভাব চিরতরে ছেড়ে দাও।
বিধাতার পায়ে করে প্রাণ-ধন পূর্ণ সমর্পণ,
ইহকাল আর পরকালে করো তাঁর কৃপা অর্জন।
৫.বিধাতার কৃপার দান
বেহেস্ত চেয়ে কোঁদোনা মুমিন; কাঁদো আল্লাহর দয়া চেয়ে,
সে আশা করোনা;শুধু ইবাদতে আখেরাতে যাবে পার পেয়ে।
স্বর্গ নরক সব বাদ দিয়ে কেবল খোদার দয়াই চাও,
বেহেস্ত তোমার কী বা প্রয়োজন,যদি বিধাতার কৃপাই পাও।
তাঁর দয়া মানে জান্নাতবাস,অনাদি অসীম অশেষ সুখ,
দুর্ভাবনার চির অবসানে মিলবে তৃপ্ত নন্দালোক।
৬.মুমিনের বন্দেগি
প্রতিবেশি যদি অভুক্ত থাকে;বৃথা মুমিনের বন্দেগি,
সহানুভূতির দুহাত বাড়িয়ে,
গরীবকে বুকে নাও হে জড়িয়ে-
তা হলে সফল হবে মুমিনের দুই জাহানের জিন্দেগি।
৭.মানবসেবা ব্রত
নিজ পরিবার পুত্র কন্যা; এদের জন্যে বিলালে সব,
শুধু কি তাদের ভোগের জন্যেই ধন দিয়েছেন তোমার রব?
পাড়া প্রতিবেশি আর মানবতা তারাও সে ধনের অংশিদার,
তোমার বিত্ত শুধু কি তোমার; গরীবেরও আছে ন্যায্য হার।
কী জবাব দেবে, যেদিন তোমাকে প্রশ্ন করবে তাদের হক,
বুঝবে সেদিন তোমার ধনের ব্যয় ছিলো কতো নিরর্থক।
৮.অশ্রুর ভাষা
হাজার চেষ্টা করে যে-কথা বোঝাতে পারিনি
মুখের ভাষায় ব’লে ব’লে,
সে সব অবলা কথা মর্মের আকুতি হয়ে
অশ্রু ধারায় পড়ে গলে।
মুখের বোল যখন গুমড়ে মরে গহন গুহায়;
চোখের জলই তখন অব্যর্থ ভাষা হয়ে
সে কথা বোঝায়।
তবুও জগত যদি সে কথার মর্ম না-ই বোঝে,
তবেতো যেতেই হবে ভিনলোকে যোগ্য প্রিতমের খোঁজে।
৯.অঘোর আঁধার
আঁধার যখন লেগেই আছে আরো আঁধার নামুক,
দূর সীমান্তে আলোর রথের বেগের চাকা থামুক।
কতো আঁধার নামতে পারে দেখবো কেবল মন ভরে,
নাবতে নাবতে আঁধার দানব নিজেই যাবে পরপারে।
আঁধার আঁধার কেবল আঁধার আঁধারেরও শেষ আছে,
কিন্তু আঁধার চিরস্থায়ী; বিশ্বে এমন দেশ আছে।
এমন দেশের নাম ঠিকানা যদি কারো রয় জানা,
কইলজা থাকলে কইতে পারো; আমার কইতে ঘোর মানা।