মু ক্ত ম ত

সুবর্ণজয়ন্তীর মহাক্ষণ

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
  প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৪৩
অ- অ+

অর্ধশত বছর। গুনে গুনে ৫০। বাংলাদেশের বয়স আজ। পরিণত বয়স বলা যায়? যায়। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছে দেশ। দাঁড়িয়েছেও। সাধ্যের অতীত ছিল, এমন অর্জনও এখন করতলে। স্বনির্ভর যে দেশের স্বপ্ন ধরা দিয়েছিল একাত্তরে, সেই স্বপ্নপূরণের যাত্রা থেমে নেই। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে গেছে, ছড়াচ্ছে। ধমনিতে যে লোহিত স্রোত বয়ে যায়, সন্তর্পণে লুকিয়ে থাকে স্লোগান। মিশে থাকে রক্তের টান। মৃত্যু নেবে বুক পেতে, তবু মাথা নোয়াবার নয়।

‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিল যারা, তাদের এখন চোখ পোড়ায়। ঈর্ষা হয়! হয়-ই তো। একাত্তরে তারা দাঁড়িয়েছিল শত্রুর পাশে। ভোলা যায়? পারে কি ভুলতে? ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছিল যারা, কালে কালে, তাদের অনেকেরই আজ অস্তিত্ব বিলীন। পরাভূতের শেষ পরিণতি তো এমনই হয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। যে সোনালি আভায় আলোকিত হয় দিগন্ত, দৃষ্টিসীমার শেষে, এই তো সেই আলো। উদিত সূর্যের অহংকার। তিমিরবিদারি। প্রজন্মের হাত ধরে বিশ্বজয়। উদ্যমী তরুণেরা আজ নির্ভীক, নির্ভয়। দেশের সীমানা পেরিয়ে অজানাকে জানার অদম্য আগ্রহ যাদের। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ তাদের হাতেই।

সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ এই ক্ষণে নবউদ্যমে শপথ নেবে দেশ। বাঙালি শপথ নেবেন নতুন সংগ্রামের। এই সংগ্রাম উন্নত দেশ গড়ার, অব্যাহত রাখা উন্নয়নের অগ্রযাত্রা।

তবে সব তিমির যে কেটে গেছে, তা তো নয়। এখনো অনেক পথ বাকি। যেতে হবে বহু দূর। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির আস্ফালন দমেনি একেবারে। হোঁচট খেতে হয়েছে বহুবার। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেখানে উদ্দীপ্ত, সেখানে ভেঙে পড়ার গল্প নেই। ঘুরে দাঁড়ানোই শেষ কথা।

তথ্যপ্রযুক্তির অনবদ্য সময় পার করছে দেশ। খুব পিছিয়ে নেই প্রাচ্য-পাশ্চাত্য থেকে। তবে মন ও মননে পিছিয়ে পড়াদের সংখ্যাও কম নয়। এখনো মুক্তির আলো থেকে দূরে অনেকেই। নির্যাতনের কবল থেকে শতভাগ মুক্তি মেলেনি নারীদের। শিশুদের ভবিষ্যৎ, সেও তো হাঁটছে কাঁটাবিছানো পথে। বাল্যবিয়ে ঠেকাতে এখনো ছুটতে হয় প্রশাসনকে। কেবল দেশ এগোলেই হয়? মানুষ, সে কি পিছিয়ে থাকবে?

মাদকের ভয়াবহতার কথা শোনা যায় প্রায়ই। কত প্রাণ ধুলোয় মিশে যাচ্ছে অজান্তে। কত সম্ভাবনা অঙ্কুরেই হচ্ছে বিলীন। এ হিসাব কতজন রাখে?

দুটি মহান সন্ধিক্ষণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অতিমারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী—পিঠাপিঠি। অনেক পরিকল্পনাই শেষতক সীমিত হয়েছে। তবে যে রেশ ছড়িয়েছিল প্রায় আঠারো কোটি মানুষের হৃদয়ে, মিলিয়ে যায়নি তা। উদযাপন আয়োজন ক্ষণস্থায়ী, স্থায়ী কেবল চেতনায় অনুরণন। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শই পারে উজ্জীবিত করতে দেশপ্রেমে। সীমাহীন সাহসের মন্ত্র লুকানো তাঁর অস্তিত্বে। অদম্য স্পৃহা জড়ানো জীবনের পরতে পরতে। মহাবিজয়ের মহানায়ক, জ্যোতিষ্মান বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতা- একই শব্দে লেখা মহাকাব্য।

৫০ বছরের বাংলাদেশের কাছে প্রত্যাশা কি নেই? আছে। দুঃখী মানুষের জন্য এখনো অনেক কিছু করার বাকি। এখনো নিরক্ষরমুক্ত হয়নি দেশ। শিক্ষার আলোবঞ্চিত শিশুদের মলিন মুখ, আলো ফোটার অপেক্ষায়। আরও কত কাজ! রয়েছে বাকি। সুবর্ণজয়ন্তী কেবল উচ্ছ্বাস আর প্রফুল্লের নয়, দায়িত্বেরও। ভাগাভাগি করে নিতে হবে সব। দায়িত্ব নাগরিকেরও। কী করে করি অবহেলা?

বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি, তাঁদের, যাঁদের রক্তের দামে এই বাংলা। ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/ কারো দানে পাওয়া নয়,/ দাম দিছি প্রাণ লক্ষ কোটি/ জানা আছে জগৎময়।’

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মোহাম্মদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযান, পেশাদার মাদক কারবারিসহ ৩৫ জন গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের উন্নয়নে পল্লীবন্ধু এরশাদের অবদান অনস্বীকার্য: মামুনুর রশীদ
বিএনপির প্রতি জনসমর্থন ক্ষুণ্ণ করতে ষড়যন্ত্র করছে দুই একটি ইসলামি দল: রিজভী
বিজিবির জুন মাসের অভিযানে ১৩৬ কোটি টাকার চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ, আটক ৩৫৯ জন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা