কাকডাকা ভোরে মিছিলে নেতৃত্ব দেন তিন আওয়ামী লীগ নেতা

আলম রায়হান
 | প্রকাশিত : ০৩ মার্চ ২০২২, ১৮:০২

ঢাকায় আমার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু ১৯৮০ সালে সাপ্তাহিক জনকথা দিয়ে। রাজনৈতিক রিপোর্টিং শুরু এই পত্রিকা দিয়েই। এর আগে রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় ছাত্র রাজনীতির সুবাধে। জাসদ ছাত্রলীগ। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেশাগত পথ চলার অভিজ্ঞতা। সংবাদপত্র জীবন শুরু হয়েছিলো পলিটিক্যাল ও ক্রাইম বিট দিয়ে অন্তত তিনটি পত্রিকায় শুরুতে আমাকে ক্রাইম বিট দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি ছিলো আমার জন্য বিরক্তিকর। তবুও সে সময়ের রেওয়াজে ‘না’ বলার উপায় ছিল না। তবে রাজনৈতিক বিট শুরুতেই ভালো লেগেছিল। এ নিয়ে আমার ইনবিল্ড প্রবণতাও ছিল। এই প্রবণতা প্রকাশ করার সুযোগ হয়েছিলো সাপ্তাহিক জনকথার মাধ্যমে। এবং নেতাদের ম্যানেজ করার দীক্ষার সূচনা এই পত্রিকা দিয়েই।

সাপ্তাহিক জনকথা দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠার সূচনা হয়। আতাউর রহমান খান, খন্দকার মোশতাক, অলি আহাদ, কাজী কাদের, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ তোহা, সাইফুদ্দিন মানিক, মালেক উকিল, আবদুল মান্নান, কে এম ওবায়দুর রহমান, কাজী জাফর, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ, শাহ মোয়জ্জম, আবদুর রাজ্জাক, সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসের আমু, তোফায়েল আহমেদ, কর্নেল আকবর, মেজর জলিল, এডভোকেড মাহবুবুর রহমানসহ সেই সময় অনেক রাজনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছিল, চার পৃষ্ঠার সাপ্তাহিক জনকথার বদৌলতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইরানের রাষ্ট্রদূতসহ অনেক কূটনীতিকের সঙ্গে পেশাগত ঘনিষ্ঠতাও হয়েছিলো চার পৃষ্ঠার সাপ্তাহিক জনকথায় থাকাকালেই। পরে রাজনীতিকদের সাথে পেশাগত এই সম্পর্কের আরও ব্যাপ্তি ঘটে সাপ্তাহিক রিপোর্টার ও সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ দিয়ে। সম্পর্কের এই ধারা আরও প্রসারিত হয়েছে দৈনিক ও টেলিভিশনে কাজ করার সময়ে।

ছাত্র জীবনে আমি ছিলাম জাসদের ছাত্র সংগঠনের বরিশাল জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে ইউটোপিয়ান ও রহস্যজনক রাজনীতির ধারক ছিলো জাসদ। অলীক স্বপ্নের এই ধারায় যুক্ত হয়ে কতো যুবকের জীবন নষ্ট হয়েছে তার হিসেব মিলানো কঠিন। সঙ্গে প্রাণ গেছে অসংখ্য মানুষের! আর সদ্য স্বাধীন দেশের যে সর্বনাশ হয়েছে তা হয়তো পরিমাপযোগ্যই নয়। কেবল তাই নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো হিমালয়সম নেতার উপর আঘাত হানার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য যেসব শক্তিকেন্দ্র কাজ করেছে তার মধ্যে জাসদ অন্যতম। নেপথ্যের খেলার বিষয়টি জাসদ শীর্ষ নেতাদের হয়তো কারো কারো জানা ছিলো। তবে জাসদের মাঠ পর্যায়ের নেতারা তা জানতেন না। ১৯৭৪ থেকে ৭৯ সাল পর্যন্ত আমার অর্জিত অভিজ্ঞতা এরকমই।

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকার এবং বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার আমলে, ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। আমাদের বিরোধিতার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ থাকলেও, বঙ্গবন্ধু ছিলেন না। এ অন্তত বরিশালের বাস্তবতা। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায়, আমাদের বলা হতো, বঙ্গবন্ধু এক সময় সমাজতন্ত্রের পতাকা তুলবেন। এ জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে, চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ কথা কেন্দ্রে বলা হতো কিনা তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। তবে বরিশালে বলা হতো। একই কথা ’৭৪ সালে বরিশাল এসে বিএম কলেজের ক্যান্টিনে বৈঠকে প্রকারান্তরে বলেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া। তখন তো মাঠের আমরা জানি না, নানান কেন্দ্র থেকে আসলে কোন ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। কে বাড়ছে গোকুলে। হয়তো কেন্দ্রে কেউ কেউ জানতেন। অথবা জানতেন না। যেমন, তখনও আমরা জানতাম না, জাসদের নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়েছিলো ভারতে, মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বে। উদ্দেশ্য ছিলো বঙ্গবন্ধু সরকারকে চাপে রাখা। পরে এই উদ্দেশ্যকে আরও জটিল রূপ দেয়া হয়েছিলো কিনা তা গভীর গবেষণার বিষয়।

জাসদের জন্ম, অকল্পনীয় দ্রুততায় উত্থান, স্বাধীনতা বিরোধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়া এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দলটির বিনাশ- পুরো বিষয়টি অনেকের মতোই আমার ধারণায়ও বেশ ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। আর একটি বিষয় এখনো আমার কাছে বড় একটি প্রশ্নবোধক হয়েই আছে। বিএম কলেজের জাসদের নেতা নজরুল-সদরুল-সমরেশ গুম হয়েছিলো। তাদের লাশও পাওয়া যায়নি। সে সময় কেউ এ নিয়ে টুঁ’শব্দটি করার সাহস পায়নি। কেবল বিএম কলেজের তৎকালীন প্রিন্সিপাল এমদাদুল হক মজুমদার বারবার বলেছেন, ‘আমার ছেলেদের ফেরত দাও।’ এ সময় তিনি অঝোরে কেঁদেছেন। অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর কাছে এ তথ্য জেনেছি সম্প্রতি। তিনি ছিলেন বিএম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান (সম্মান)-এর ছাত্র। তখন বিএম কলেজের অবস্থা ছিলো অনেকটা মৃত্যুপুরী। সেই বিএম কলেজ ক্যান্টিনে কোন ভরসায় শরীফ নূরুল আম্বিয়া আমাদের নিয়ে ‘গোপন’ বৈঠক করলেন, তা বলা কঠিন!

শরিফ নুরুল আম্বিয়াকে কে বা কারা ভরসা দিয়েছিলো জানা যায়নি। তবে আমরা কয়েকজন মোটেই ভরসা পাচ্ছিলাম না। আরো পরিষ্কার করে বলা চলে, চরম আতঙ্কে ছিলাম। এই আতঙ্ক বহুগুণ বেড়ে যায় আ স ম ফিরোজ ক্যান্টিনে প্রবেশ করায়। তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ মিনিট খানেক। আমাদের দিকে সরাসরি তাকিয়েছেন বলেও মনে হলো না। কারো সাথে কোন কথাও বলেননি। কেবল সুজির হালুয়ার মান নিয়ে টেবিল বয়ের সঙ্গে মৃদু উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘এতো রোগীর খাবার।’

এরপরই আ স ম ফিরোজ দ্রুত ক্যান্টিন ত্যাগ করেন। তাহলে তিনি কি আমাদের নিয়ে এক ধরনের ভয়ে ছিলেন, নাকি অভয় দিতে এসেছিলেন। এটি জানা যায়নি। তবে এটি সবাই জানেন, ১৫ আগস্ট কাকডাকা ভোরে বরিশালে যে বিশাল ‘আনন্দ মিছিল’ বের হয়েছিলো তার নেতৃত্বে ছিলেন নুরুল ইসলাম মঞ্জু।

আমাদের একটি ফিলিপস রেডিও ছিলো। কিন্তু এটি ব্যবহারের একমাত্র স্বীকৃত অধিকার ছিলো বাবার। তিনি বাড়ি থাকলে খেয়াল বা এই জাতীয় গান শুনতেন। আমাদের রেডিও শোনা বারণ ছিলো। বলা হতো, রেডিও শুনলে ছোটরা বখে যায়! বলাটা হয়তো ছিলো জুজুর ভয় দেখানো। বাবা বাইরে গেলে আমি সুযোগ নিতাম। বেশ ভালো লাগতো গান শুনতে। কিন্তু সতর্ক থাকতাম কখন বাবা বাড়িতে এসে পড়ে। এই লুকোচুরি নিয়ে আমাদের কোন ক্ষোভ ছিলো না। কিন্তু বিরক্ত লাগতো যখন বাবা ভোরবেলা রাগপ্রধান গান শুনতেন। কারণ খেয়ালের সুর খুব জোরালো, ঘুমে ব্যাঘাত হতো। তবু প্রতিবাদ করার উপায় ছিলো না। মৃদুও না। এ রকম ভাবতামও না। এটি ভাবার বিষয়টি ছিলো তখনকার প্রবণতার বাইরে। পরে রাগ প্রধান গানের জন্যই আমার এক ধরণের শ্রবণ প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিলো। এধারায় প্রথম দিকে ভক্ত হই রবীন্দ্র সঙ্গীতে, পরে নজরুল সঙ্গীতে।

খুব ভোরে বাবার খেয়াল শোনার অভ্যাসের কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়ংকর দুঃসংবাদ শুনেছিলাম সম্ভবত শুরুর দিকেই। এক ঝটকায় বিছানা ছাড়লাম। আমাদের বাড়ি থেকে খানিকটা পূর্ব দিকে ছিলো মোল্লার দোকান। সেটি এখন মোল্লার বাজার হিসেবে পরিচিত। এখন অনেক দোকান, তখন ছিলো একটি মাত্র দোকান। দেখলাম দোকানটি বন্ধ। সে সময় আসলে বন্ধ থাকারই কথা। নামাজ পড়ে কেউ কেউ বাড়ির দিকে যাচ্ছেন। মনে হলো, কেউ কিছু জানেন না। বাড়ি ফিরে গেলাম। ঢুকতেই পড়লাম বাবার সামনে। তার চোখ লাল। বললেন, খবরদার বাড়ির বাইরে যাবি না। কিন্তু আমি ঠিকই বাড়ির বাইরে গিয়েছি। শহরে। নতুল্লাহবাদ হয়ে সোজা সদর রোডে। লক্ষ্য ছিলো টাউন হল সংলগ্ন বিপ্লবী বাংলাদেশ অফিস। এ পত্রিকার মালিক সম্পাদক নূরুল আলম ফরিদ ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগ নেতাদের একজন। তিনি নূরুল ইসলাম মঞ্জুর ছোট ভাই।

শহরের সদর রোডের গুলবাগ হোটেলের উল্টো দিকে ছিলো আওয়ামী লীগ অফিস। পাশে শান্তিশাল রিপেয়ারিং হাউজ। এ দোকানের সামনে দাঁড়ানো ছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ। সেখানে তিনটি ট্রাক ছিলো। ট্রাকে মূলত ছিলো ঘাট-শ্রমিকরা। সবাই উল্লাস করছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে আ স ম ফিরোজ এসে একটি ট্রাকে উঠে গেলেন। তিনি তখন উল্টো দিকের একটি টিনের ঘরে থাকতেন। এর আগে মহিউদ্দিন বক্তৃতায় বললেন, ‘চিন্তার কিছু নেই, এখনো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়।’

খুনিচক্রের দোসর হিসেবে বরিশাল আওয়ামী লীগের বিশাল এই উল্লাসের বিপরীত অবস্থানে বরিশালের আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ছিলেন। তবে তাদের মধ্যে যারা সদর রোড পর্যন্ত আসার সাহস দেখিয়েছিলেন তাদের সংখ্যা ১০/১২ জনের বেশি নয়। এদের মধ্যে ছিলেন খান আলতাফ হোসের ভুলু, ডা. পিযুসসহ আরও কয়েকজন। এই ১০/১২ জনই মৃগয়া ত্রস্ত প্রতিবাদ মিছিল বের করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিবির পুকুর পাড়ে খুনিচক্রের বিশাল মিছিলের সামনে পড়ে তারা বাটার গলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। অবশ্য মিছিল বের করার এই দৃশ্য আমি দেখিনি। খান আলতাফ হোসেন ভুলুর কাছে শুনেছি। যদিও নূরুল আলম ফরিদ দাবি করেছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে বরিশালে কোনো মিছিল বের হয়নি। এ রকম কথা আরও কয়েকজন বলেছেন।

তবে এটি অনেকেই বলেছেন, ইতিহাসের জঘন্যতম দিনে বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের পেশকার বাড়িতে খিচুড়ি রান্না করা হয়েছে। আনন্দ-উল্লাসের আতিশয্যে উলঙ্গ নৃত্য করেছেন কেউকেউ। এরা সবাই ছিলো আওয়ামী লীগের। শুধু শহরে নয়। দুপুরের দিকে এই রকম বীভৎস উল্লাস দেখেছি আমাদের গ্রাম ধর্মাদীতেও। এরাও ছিলো আওয়ামী লীগের। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বিহারী হুজুর নামে পরিচিত একজন মাওলানা। ৭০ এর নির্বাচনের সময় রাস্তা জুড়ে নৌকার প্রতীক থাকায় তোরণের নীচ থেকে না গিয়ে রাস্তার কিনার দিয়ে যেতেন। তিনি হয়ে উঠলেন, ১৫ আগস্টের বীভৎস উল্লাসের মধ্যমণি। আমি সোজা বাড়ি চলে গেলাম। ঢুকতেই আবার বাবার সামনে পড়লাম। তিনি আবার বললেন সেই সকালের কথা, ‘খবরদার বাড়ির বাইরে যাবি না!’ আমি পরবর্তী অন্তত এক সপ্তাহ বাড়ির বাইরে যাইনি, আতঙ্কে অথবা হতাশায়। এমনকি খুব কাছের মোল্লার দোকানেও না।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনায় বরিশাল আওয়ামী লীগের বিশাল অংশ যখন উল্লাসিত তখন জাসদের অবস্থা ছিলো ভিন্ন। এতো দিন বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধী শক্তি জাসদের নেতা-কর্মীরা ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ছিলেন আতঙ্কে। আবার বলি, এ দৃশ্যপট বরিশালের। সে সময় বরিশালে জাসদের প্রধান নেতা ছিলেন আবদুল বারেক। অনেকের মতো তিনিও মহা অঘটনের খবর পেয়ে সদর রোডে এসেছিলেন। তিনি তাঁর মালিকানার গুলবাগ হোটেলের দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পর তিনি নিঃশব্দে ভিতরে চলে গেলেন। হয়তো প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উল্লাস দেখে ব্যথিত বা বিরক্ত হয়েছিলেন। আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে থাকতে পারেন। অথবা অন্য কোন কারণ থাকতে পারে। এ নিয়ে বারেক ভাইর সঙ্গে কখনো কথা হয়নি। কোন মিটিং-এ বিষয়ে তাকে কোন বক্তব্য দিতে শুনিনি। তবে এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন জেড আই খান পান্না। তিনি ছিলেন বরিশাল জাসদের প্রধান তাত্ত্বিক। পান্না ভাইকে আমরা বলতাম, বরিশালের সিরাজুল আলম খান।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

(ঢাকাটাইমস/৩মার্চ/এসকেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :