যে দুই চিকিৎসক পেলেন স্বাধীনতা পুরস্কার

যখন অনেকে অর্থাভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করার কথা ভাবতেও পারতেন না তখন তিনি নামমাত্র খরচে এক হাজারের বেশি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। নিরবে নিভৃতে এই মানবিক কাজ করে আসা কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম পেলেন স্বাধীনতা পুরস্কার।
এবছর জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১০জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে এই পুরস্কার। তারমধ্যে দুজন চিকিৎসক। কামরুল ইসলাম ছাড়াও পুরস্কার পেয়েছেন স্নায়ুশল্যচিকিৎসক অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের সাবেক উপাচার্য।
পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।
এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে আসছে সরকার।
এক নজরে ডা. কামরুল ইসলাম
পাবনার ঈশ্বরদীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. আমিনুল ইসলামের ছেলে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। ১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্বর্ণপদকসহ এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে এফসিপিএস এবং ২০০০ সালে বিএসএমএমইউ থেকে ইউরোলজিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ থেকে তিনি এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ইউরোলজি সোসাইটি স্বর্ণপদক প্রদান করে।
দেশে যখন অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে না পারা অসংখ্য কিডনি রোগী অনিশ্চিত গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছিলেন ঠিক তখনই ২০০৭ সালে নামমাত্র মূল্যে কিডনি সংযোজনসহ এ রোগের চিকিৎসায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতাল। করোনাকালেও থেমে থাকেনি তার চিকিৎসা।
তার প্রতিষ্ঠিত সিকেডি হাসপাতালে বিকল কিডনি রোগীদের জন্য অল্প খরচে কিডনি ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। নিজেই কিডনিদাতা ও গ্রহীতার অপারেশন করেন। বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক নেন না। শুধু অপারেশনই নয়, প্রতিস্থাপন-পরবর্তী রোগীর সব চিকিৎসাসেবা বিনা পয়সায় করেন তিনি।
সিকেডি হাসপাতালে অপারেশন-পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বিনামূল্যে করার ব্যবস্থা করেছেন। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সফলভাবে এক সহস্রাধিক রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। সাফল্যের হার শতকরা ৯৫ ভাগ, যা আন্তর্জাতিকপর্যায়ের সমকক্ষ।
প্রতি সপ্তাহে চার থেকে পাঁচটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় তার হাসপাতালে। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তার ভাষ্য- সিকেডি হাসপাতাল একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। অর্থ নয়, সেবাই তাদের কাছে প্রথম।
সহপাঠীরা যখন উন্নত দেশে বিলাসি জীবন যাপন করছেন তখন বিভিন্ন সময়ের অফার গ্রহণ করেননি এই চিকিৎসক। গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমিও অনেক অফার পেয়েছি, কিন্তু এ মাটি আমাকে ছাড়েনি। আমার বাবা এ দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। এ দেশের মাটিতে বাবার রক্ত লেগে আছে। আমিও চেষ্টা করছি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করার।
এক নজরে কনক কান্তি বড়ুয়া
অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া একজন নিউরোসার্জন। ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করা কনক কান্তি ১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৯০ সালে এফসিপিএস, ২০০৩ সালে এমএস (নিউরো সার্জারি), ২০০৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস থেকে এফসিপিএস অর্জন করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুশল্যবিদ্যা বিভাগের (নিউরোসার্জারি) সভাপতি এবং শল্যবিদ্যা অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।
এখন পর্যন্ত ৪৭টিরও বেশি গবেষণাপত্র দেশি-বিদেশি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে কনক কান্তি বড়ুয়ার।
তিনি ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফআইসিএস, ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে সম্মানসূচক এফএসএলসিএস এবং কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স, পাকিস্তান থেকে সম্মানসূচক এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। নিউরোসার্জারিতে অসামান্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক ‘বিএমএএনএ রিকোগনিশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৮ লাভ করেন। ২০১৯ সালে অধ্যাপক পিএস রামানি লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এই চিকিৎসক প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্যখাত নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে কনক কান্তি বলেছেন, আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। কাঙ্ক্ষিত উন্নতির জায়গাগুলো নির্দিষ্ট করে সেগুলোতে মনোনিবেশ করে এগিয়ে যেতে হবে। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি গবেষণাতেও আমাদের আরও মনোনিবেশ করতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/বিইউ)

মন্তব্য করুন