ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটে চরম ভোগান্তি

ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড দুর্জয় মোড়ে যানজটের কারণে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। আর এই চিত্র প্রায় প্রতিদিনের। এর মধ্যে কোনো উৎসবের ছুটিতে এই যানজট চরমাকার ধারণ করে। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, এই দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের হলেও স্থানীয় প্রশাসন এই সমস্যা সমাধানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষে শতাধিক অবৈধ বাস কাউন্টার, ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা দোকান-পাট, শতশত সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার সীমাহীন দৌরাত্ম্য এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নৈরাজ্য, এই যানজটের কারণ বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে নির্ধারিত বাস টার্মিনাল থাকা সত্ত্বেও মহাসড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ বাস কাউন্টার। কাউন্টারগুলোর সামনে থামিয়ে যাত্রী ওঠাতে গিয়ে মহাসড়কের অর্ধেক দখলে চলে যায়। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঢাকা-ভৈরব-সিলেট, ঢাকা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ, ঢাকা-ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভৈরব একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। উল্লেখিত মহাসড়কসহ এখান থেকে আঞ্চলিক আরো বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রীসহ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে থাকে। এছাড়া এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রোডের মৈত্রী বাস। কিন্তু এখানকার পরিবহণ সেক্টরের নৈরাজ্য আর প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে বাসস্ট্যান্ডটি ক্রমেই যাতায়াতের জন্য হয়ে উঠেছে অসহনীয়। ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ডের সকল অনিয়ম দূর করে যানজটমুক্ত ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থায় কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা সকল যাত্রীসহ স্থানীয়দের।

সিলেটগামী হানিফ পরিবহণের যাত্রী মো. রফিক বলেন, ঢাকা শহরের মতোই ভৈরবের দুর্জয় মোড়ে যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই যানজটের কারণে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। এই রোড দিয়ে সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা চলাচলের কারণে সৃষ্ট হয় যানজট। স্থানীয় ব্যবসায়ী মো.রায়হান মিয়া বলেন, দুর্জয় মোড়ের মাঝেই অসংখ্য বাস কাউন্টার এবং সবাই এখানে কোনো রকম নিয়ম না মেনে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠায়। এসব কর্মকাণ্ড মূলত রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মদদে সংগঠিত হয়ে থাকে। যার ফলে দুর্জয় মোড়ে প্রতিদিনই সৃষ্টি হয় যানজট।

ভৈরব পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মো. আল আমিন বলেন, দুর্জয় মোড়ের যানজট এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এই সমস্যার ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হয়। এই যানজট সমস্যা দূর করতে ভৈরব বাজার থেকে বঙ্গবন্ধু সরণি হয়ে দুর্জয় মোড়ে আসা অটোরিক্সা ও বিভাটেকের রাস্তা ঘুরিয়ে নিউ টাউন মোড় হয়ে কমলপুরের ভেতর দিয়ে পার হলে ঈদে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ভৈরব দুর্জয় মোড়ে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না বলে তার দাবি।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সড়ক নিরাপত্তা কমিটির সভাপতি মো. সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ভৈরব বাসস্ট্যান্ড দুর্জয় মোড়ের অসহনীয় যানজট নিরসনে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। ঈদের ছুটি শুরু হলেই এখানে একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে উপজেলা প্রশাসন। উচ্ছেদ করা হবে মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে তোলা সকল অবৈধ টিকেট কাউন্টার ও ফুটপাত দখল করে বসা দোকানপাট। ঈদের ছুটিতে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য এখানকার ট্রাফিক ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজানো হবে । তিনি আরো জানান, ঈদের ছুটি শুরু হলে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক মোবাইল কোর্ট ভৈরব বাসস্ট্যান্ড দুর্জয় মোড়ে অবস্থান করবে। দুর্জয় মোড় থেকে পৌর বাসটার্মিনালের পশ্চিম মাথা পর্যন্ত বাস থামিয়ে রেখে যাত্রী উঠালেই পরিবহগুলোকে আর্থিক জরিমানা করা হবে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/এআর)