যে কারণে বিটিভিকে বলা হয় তারকা তৈরির কারখানা, আপনি কি জানেন?

বাংলাদেশ টেলিভিশন আর টিভি নাটক, একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে একটির সঙ্গে অন্যটিকে আলাদা করা কঠিন। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা টেলিভিশন যাত্রা শুরুর পর থেকে একের পর এক দুর্দান্ত নাটক উপহার দিয়েছে। সেই নাটক যেমন এই অঞ্চলে টেলিভিশনের প্রভাব বাড়িয়েছে, তেমনই বেড়েছে নাটকের জনপ্রিয়তাও। নাটক জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এর অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও।
মজার বিষয় হচ্ছে, এখন যেমন আমরা ভারতের বাংলা সিরিয়ালগুলো দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি, আশির দশকে এমন আগ্রহ নিয়ে কলকাতার দর্শকরা আমাদের নাটকের জন্যও অপেক্ষা করতেন। হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও মুস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিকটি শেষ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের দর্শকদের হতাশা প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সেই খবর কলকাতার পত্রপত্রিকাতেও ছাপা হয়েছিল। এর একটি শিরোনাম ছিল ‘এখন আমরা কী দেখবো?’
সেই সময় এখনকার মতো এত চ্যানেল ছিল না। ভরসা ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন। টেলিভিশনের নাটক, সংগীতানুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান এমনকি বিদেশি সিরিজ ও ছায়াছবিতে দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকতেন। স্বাধীনতার আগে যে পথচলা শুরু হয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। এই বিটিভি অনেককেই তারকায় পরিণত করেছে। শুধু পারফরমারদেরই নয়, এর নেপথ্যে যারা কাজ করেছেন বা করছেন, তাদের অনেকেই এখন তারকা। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলেও আমরা এ পর্যন্ত শোবিজে যত তারকা পেয়েছি, তাদের জন্মই হয়েছে বিটিভি থেকে।
আশির দশকের কথাই বলা যাক। নাটক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সে সময় বিটিভি দারুণ আলোচনায় আসে। পারফরমার-কুশলীদের অনেকেই তখন দর্শকদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। পারফরমারদের তো পর্দায় দেখা যায়, কিন্তু নাটক বা অনুষ্ঠানের নেপথ্য কুশীলবদের নামও তখন দর্শকদের মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে। আবদুল্লাহ আল মামুন, মুস্তাফিজুর রহমান, মোস্তফা কামাল সৈয়দ, আতিকুল হক চৌধুরী, জিয়া আনসারী, কাজী কাইয়ূম থেকে শুরু করে ম. হামিদ, রিয়াজউদ্দিন বাদশা কিংবা ফখরুল আবেদীনের নাম ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে।
বিটিভির এই প্রযোজকদের নাম দর্শকদের কাছে এতটা জনপ্রিয় হওয়া বলতে গেলে নজিরবিহীন ঘটনা। বিশ্বের কোনো দেশেই এমনটি ঘটেনি। দেশে দেশে নাটক বা অনুষ্ঠান কে বানাচ্ছেন, তা নিয়ে দর্শকদের কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ টেলিভিশন এটি করে দেখিয়েছে। তারকা পারফরমারদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি তারকা নির্মাতাও তৈরি করেছে।
দর্শক সে সময় জানতেন কোন নির্মাতা কোন ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণ করেন। আবদুল্লাহ আল মামুনের নাটকে সামাজিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু তাতে দর্শক আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকবেন, আতিকুল হক চৌধুরী নাটক বানাবেন বোদ্ধা দর্শকদের জন্য, মোস্তফা কামাল সৈয়দের নাটক মানে মিষ্টি প্রেমের কিছু একটা হবে, মুস্তাফিজুর রহমান নাটক বানাবেন ভিন্ন কোনো বিষয় নিয়ে এমন একটি ধারণা দর্শকদের মধ্যে বদ্ধমূল ছিল। এ কারণে তাদের নির্দিষ্ট একটি ঘরানা তৈরি হয়েছিল। খ্যাতিমান এই নির্মাতাদের নাটকই আসলে টিভি নাটকের অবয়ব ও আঙ্গিক তৈরি করে দিয়েছে। এখন সেই কাঠামোর মধ্যে থেকেই বিটিভি তার নাটক বা অনুষ্ঠান তৈরি করে যাচ্ছে।
এখন দেখা যাক, তারকা নির্মাতাদের পাশাপাশি বিটিভিতে তারকা পারফরমাররা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেন? বিটিভির স্মরণকালের সবচেয়ে গুণী ও মেধাবী অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির কথাই ধরা যাক। হুমায়ূন ফরীদি বিটিভিতে অভিনয় করা শুরু করেন আতিকুল হক চৌধুরীর ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকের মাধ্যমে। প্রথাগত নায়কের কাঠামো ভেঙে, শুধু অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে আসতে পেরেছিলেন এই অভিনেতা।
শুরুতে অনেক অনেক নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু জনপ্রিয়তার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল সেলিম আল দীন রচিত এবং নাসিরউদ্দিন ইউসুফ প্রযোজিত ‘ভাঙ্গনের শব্দ শুনি’ ধারাবাহিকটি পর্যন্ত। এই ধারাবাহিকে গ্রামীণ এক জোতদারের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন ফরীদি। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এই ধারাবাহিকে তার সংলাপ ‘আমি তো জমি কিনি না, ফানি কিনি ফানি’ এখনো দর্শক মনে রেখেছেন। এরপর ফরীদির আরেক মাইলফলক ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’। আবদুল্লাহ আল মামুনের এই ধারাবাহিকে ক্রমাগতভাবে অন্য সব অভিনেতাকে পেছনে ফেলে নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন হুমায়ূন ফরীদি। নাটকে রমজান চরিত্রে তিনি যে জাদু সৃষ্টি করেছিলেন, তা তাকে স্বতন্ত্র অবস্থান এনে দেয় এবং এ নাটকের কল্যাণেই চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ এসে যায়। ফরীদি এরপর চলচ্চিত্রে থিতু হন এবং ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করে তাকে নায়কের চেয়েও জনপ্রিয় করে তোলেন। ট্রেন্ড ভেঙে ভিলেন চরিত্রটিকে ভিন্ন এক স্থানে প্রতিষ্ঠিত করলেন তিনি। নায়কের সমান্তরাল হিসেবে ফরীদি অভিনীত ভিলেন চরিত্রগুলো প্রতিষ্ঠিত হলো।
আশির দশকে টিভি নাটকে রোমান্টিকতার আরেক নাম ছিল আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনীত নাটক। সত্তর দশকের শেষাশেষি এই দুই তারকার জুটি পোক্ত হয়ে ওঠে। আর এতে বিশেষ ভূমিকা রাখে আফজাল হোসেনের নিজের লেখা ও মুস্তাফিজুর রহমানের প্রযোজনায় প্রচারিত ‘পারলে না রুমকি’ নাটকটি। প্রচারের পরপরই নাটকটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। আফজাল-সুবর্ণা পরিণত হন ভালোবাসার আইকন-এ। এরপর অনেক নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন এই দুই তারকা। নাটকগুলো দর্শকপ্রিয় হয়েছে। আফজাল এরপর অনেক নাটকে অন্য পারফরমারদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সুবর্ণার সঙ্গে তার যে জুটি, সেটি আর কারও সঙ্গে গড়ে ওঠেনি।
এদিকে সুবর্ণার সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে ওঠে ফরীদিকে নিয়ে। কিন্তু সে জুটি রোমান্টিক জুটি হিসেবে আফজাল-সুবর্ণা জুটির জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি। তবে হুমায়ূন ফরীদি বাংলাদেশে যে প্রথাগত নায়কের ইমেজ রয়েছে, তা ভাঙতে পেরেছিলেন। অভিনয়গুণে তিনি নিজেকে প্রেমিক পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ইমদাদুল হক মিলনের লেখা ‘সখা তুমি সখী তুমি’ নাটকটিই তার দুর্দান্ত উদাহরণ।
এদিকে অ্যান্টিহিরো অর্থাৎ প্রতিনায়ক হিসেবেও আফজাল হোসেন যে কম যান না, সেটি প্রমাণ হলো ‘কুসুম ও কীট’ নাটকের মাধ্যমে। নাটকটি নিজেই লিখেছিলেন আফজাল। এতে মাদকাসক্ত এক তরুণের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর ইমদাদুল হক মিলনের ‘ফুলের বাগানে সাপ’ তাকে আরও খানিকটা এগিয়ে দেয়। মিলনের প্রচার শুরু হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘নায়ক’ ধারাবাহিকেও অ্যান্টিহিরো চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন এই তারকা অভিনেতা।
কিন্তু এই আফজাল-সুবর্ণা-ফরীদি যখনই আতিকুল হক চৌধুরীর নাটকে অভিনয় করেছেন, তখন তাদের পুরোপুরি ভিন্নভাবে দেখেছেন দর্শক। এই নির্মাতার একাধিক নাটকে তারা একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। তখন তাদের আর অন্য নির্মাতাদের নাটকের মতো মনে হয়নি। মনে হয়েছে, এ যেন অন্য আফজাল-সুবর্ণা-ফরীদি।
তারিক আনাম খান, খালেদ খান, নাদের চৌধুরী অথবা সালাহউদ্দিন লাভলু অনেক অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। তবে দর্শকদের কাছে তাদের ইমেজ নির্দিষ্ট এক চরিত্রে এখনো স্থির হয়ে আছে। ইমদাদুল হক মিলনের ‘বারো রকম মানুষ’ ধারাবাহিকে তারিক আনামের বলা সেই সংলাপ ‘থামলে ভালো লাগে’ এখনো দর্শকরা মনে রেখেছেন। একই ধারাবাহিকে গ্রামের লজিং মাস্টার চরিত্রে নাদের চৌধুরীর ‘বালিকা’ সম্বোধনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
মিলনের ‘রূপনগর’ ধারাবাহিকে মাস্তান চরিত্রে খালেদ খান ছিলেন অনবদ্য। তার মুখের ‘ছি ছি তুমি এত খারাপ’ দর্শকমহলে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। জনপ্রিয় হয়েছিল ‘কোন কাননের ফুল’ ধারাবাহিকে সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘মিয়া’ সংলাপটিও।
দেখা যাচ্ছে কিছু অভিনেতা আছেন, তাদের কোনো কোনো নাটক দর্শকরা এখন আর মনে করতে না পারলেও এ সংলাপগুলোর কারণে কাউকে কাউকে মনে রেখেছেন। টিভি নাটকে আঙ্গিকগত একটা পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের হাত ধরে। তিনি নাটক লেখা শুরু করার পরই আসলে নাটকের চরিত্র বদলে যায়। ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’ বা ‘অয়োময়’ বিটিভি নাটককে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে আসে। শুধু তা-ই নয়, হুমায়ূন আহমেদের লেখা নাটকের মাধ্যমে বিটিভিতে অনেক তারকার জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে সবার আগে আসে আসাদুজ্জামান নূরের নাম।
‘এইসব দিনরাত্রি’ থেকে শুরু করে ‘অয়োময়’ পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদ নূরকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে গেছেন। কখনো বাড়ির দায়িত্বজ্ঞানহীন ছোট ছেলে, কখনো বিপত্নীক দুই সন্তানের জনক, কখনো পাড়ার মাস্তান বাকের আবার কখনো ক্ষয়িষ্ণু জমিদার ছোট মির্জা হিসেবে পর্দায় তিনি হাজির করেছেন নূরকে। আগেপরে অনেক নাটকে নূর অভিনয় করেছেন, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের নাটকে তাকে যেভাবে পাওয়া গেছে, অন্য কোনো নাট্যকারের নাটকে সেভাবে পাওয়া যায়নি।
শুধু আসাদুজ্জামান নূরই নন, হুমায়ূন আহমেদের নাটকের মাধ্যমে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন ডলি জহুর, লুৎফুন্নাহার লতা, দিলারা জামান, আফজাল শরীফ, মোজাম্মেল হোসেন, সালেহ আহমেদ, আবদুল কাদের, আবুল খায়ের, আমিরুল হক চৌধুরী প্রমুখ অভিনেতা।
নওয়াজীশ আলী খান প্রযোজিত ‘নিমফুল’ হুমায়ূন আহমেদ রচিত দর্শকনন্দিত এক নাটক। অনেক বছর আগে নাটকটি প্রচারিত হলেও এখনো এর দারুণ জনপ্রিয়তা। নাটকে ডাকাতরূপী আসাদুজ্জামান নূরকে আটকের বর্ণনা আমিরুল হক চৌধুরী যেভাবে দিয়েছিলেন, তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
নাটকের কিছু সংলাপ ছিল
আবুল হায়াত: মনারে ধরলো কে!
আমিরুল: জে চৌধুরী সাব, আমি ধরছি।
আবুল হায়াত: ঘটনাটা বলো
আমিরুল: সে এক বিরাট ইতিহাস। আমার ঘরে ছিল না কেরোসিন। পরিবার বলল কেরোসিন আইনা দেন। আমি বললাম, গেল হাট থিকা এক পোয়া কেরোসিন আনছি, আইজ বলতেছো কেরোসিন নাই। বিষয় কী? স্ত্রী বলল, আমি কি আপনের কেরোসিন খাইছি? আমার উঠলো রাগ। বেজায় রাগ।
নূর: আরে আসল ঘটনা বলো। চৌধুরী সাব তোমার কেরোসিনের গপ শুনতে চায় না। চৌধুরী সাব মানী লোক, টাইমের দাম আছে।
আবুল হায়াত: ওই, তুমি কথা বলতেছো কেন?
নূর: আরে দেখেন না রাজ্যের প্যাঁচাল পারতেছে। আমারে ক্যামনে ধরলো, সেই ঘটনা না বইলা নিজের স্ত্রীর গপ।
আবুল হায়াত: মনা।
নূর: জি।
আবুল হায়াত: বেশি ফড়ফড় করবা না। তোমার কপালে কী ঘটবো এইটা নিয়া এখন চিন্তা কর। আল্লাহ খোদার নাম নেও। কুদ্দুস
আমিরুল: জে।
আবুল হায়াত: তুমি যে কামডা করছো, এইডা একটা বিরাট সাহসের কাম। অহন তুমি বলো মনারে ধরলা কেমনে, ঘটনাটা বলোÑ
আমিরুল: কেরোসিনের বোতল হাতে রওয়ানা দিলাম। পথে সোলেমানের সঙ্গে দেখা। সোলেমান বললো চাচাজি কই যান? আমি বললাম কেরোসিন কিনতে যাই, তুই চল আমার সাথে স্টলে চা খাওয়ামু। সে বললো, জে আচ্ছা। আমি আর সোলেমান রওয়ানা দিলাম।
আবুল হায়াত: আরে মনারে ধরলা কেমনে?
আমিরুল: আমি তো বলতেছি বিরাট ইতিহাস।
আবুল হায়াত: সংক্ষেপ কর।
আমিরুল: সংক্ষেপ কইরাই তো বলতেছি।এই হচ্ছে নাটকের একটি দৃশ্যের কিছু সংলাপ। সিরিয়াস কিছু নেই। কিন্তু তারপরও এটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। আমিরুল হক চৌধুরীর সুঅভিনয় কুদ্দুস চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছিল। এরপর হুমায়ূন আহমেদের নাটকে একপ্রকার নিয়মিতই ছিলেন তিনি।
একই কথা বলা চলে মোজাম্মেল হোসেনের ক্ষেত্রে। হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকেই তিনি অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু ‘খাদক’ নাটকটি তাকে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ‘অয়োময়’ ধারাবাহিকে তার প্রাঞ্জল অভিনয় দর্শকদের দারুণ বিনোদন দিয়েছিল। এই ধারাবাহিকে তার চরিত্রটি ছোট মির্জার সামনে গেলেই কাশতে শুরু করতো। চরিত্রটি জনপ্রিয় হয়েছিল এবং মোজাম্মেল হোসেনও দর্শকমহলে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করে সেই সময়।
হুমায়ূন আহমেদের সেরা বাজি ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। এই নাট্যকারের সব নাটকেই নূর ছিলেন সমান সফল। তবে ‘কোথাও কেউ নেই’-এর বাকের চরিত্রটি আর সব চরিত্রকে ছাপিয়ে গেছে। বলা হয়ে থাকে, নূরকে হুমায়ূন আহমেদ যেভাবে বুঝতে পেরেছিলেন, অন্য কোনো নাট্যকার তা পারেননি। অন্য কোনো নাট্যকার ও অভিনেতার মধ্যেও এই কেমিস্ট্রি আর গড়ে ওঠেনি।
আরেক সুঅভিনেতার নাম রাইসুল ইসলাম আসাদ। দুর্দান্ত শক্তিশালী অভিনেতা। বিটিভির অনেক নাটকে সেই প্রমাণ রেখেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিকে শিল্পী সরকার অপুর নিরীহ প্রকৃতির স্বামীর ভূমিকায় তার ধীরস্থির অভিনয় দর্শকদের আলোড়িত করেছে। এই আসাদই আবার মামুনুর রশীদ রচিত এবং মুস্তাফিজুর রহমান প্রযোজিত ‘সময় অসময়’ ধারাবাহিকে মধু পাগলা চরিত্রে ছিলেন অনবদ্য। কিংবা ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিকের লেকু চরিত্রে আসাদের অভিনয়ের কোনো তুলনাই খুঁজে পাওয়া যায় না।
এ ছাড়া তৌকীর, জাহিদ, শমী, বিপাশা, মিমি এরা সবাই তারকাখ্যাতি পেয়েছেন বিটিভির নাটকে কাজ করেই। তারা হয়তো তাদের পূর্বসূরিদের খ্যাতি স্পর্শ করতে পারেননি, কিন্তু জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এখনো তাদের নামে দর্শক নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হন।বলা বাহুল্য, এসব পারফরমার তারকা হয়েছেন বিটিভিতে কাজ করেই। সে সময় ছিল না এত চ্যানেল, ছিল না ইউটিউব-ওটিটি। কিন্তু এখনো দর্শকদের মানসপটে এসব তারকা সেদিনের মতোই সমান উজ্জ্বল। সময়প্রবাহে হয়তো তা কিছুটা ম্লান হয়েছে; কিন্তু দর্শকরা তাদের ভুলে যাননি।

মন্তব্য করুন