ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তক এনাম আলী এমবিই আর নেই

লন্ডন প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ জুলাই ২০২২, ১৫:২১

অস্কারখ্যাত ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তক ও স্পাইস বিজনেন্স ম্যাগাজিন সম্পাদক ব্রিটেনে বাঙালি কমিউনিটির প্রিয় ব্যক্তিত্ব এনাম আলী এমবিই আর নেই। লন্ডন সময় ভোর ৩টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সকিনা আলী, এক মেয়ে জাস্টিন আলী, দুই ছেলে জেফ্রি আলী ও জায়েদ আলীসহ চার ভাই তিন বোনসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ তথা এশিয়ান রন্ধন শিল্পকে ব্রিটিশ মূলধারার অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন এনাম আলী। তিনি নব্বই দশকের শুরুতে গিল্ড অব বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টস প্রতিষ্ঠা ও এর মাধ্যমে হাউজ অব কমন্সে “ডাইন বাংলাদেশ” ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসাকে স্বনামে পরিচিতি করার কাজে হাত দেন। তিনি প্রথমত শেফ অব দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হয়ে লাইম লাইটে আসেন এবং সেই সময়ে লীরাজ এভিয়ন নামে উড়ন্ত রেস্টুরেন্টের জন্ম দিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেন।

এনাম আলী ১৯৯৮ সালে রেস্টুরেন্ট ম্যাগজিন স্পাইস বিজনেস প্রকাশের মাধ্যমে ব্রিটিশ অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি বাঙালির কারি ইন্ডাস্ট্রিকে ব্রিটিশ মূলধারায় নিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম শুরু করেন। সারের বিখ্যাত লী রাজ রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী স্বপ্নবাজ মি. আলী স্পাইস বিজনেস প্রকাশনা শুরু করেই ক্ষান্ত হননি, কারি ইন্ডাস্ট্রিকে ব্রিটেনসহ বিশ্ব নাগরিকদের মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে চালু করেন ‘ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড’। বিগত ১৬ বছর ধরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানগুলোতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীসহ মেইন স্ট্রিম রাজনীতিবিদসহ হাই প্রোফাইল সেলিব্রেটিরা অংশ নিয়ে আসছেন। কারি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িতদের মূলধারায় স্বীকৃতি প্রথম ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমেই শুরু হয়।

কারি শিল্পে অনন্য অবদানের জন্য ২০০৯ সালে এই কারি কিংবদন্তি ভূষিত হন এমবিই খেতাবে। ২০১১ সালে তাকে ‘ফ্রিডম অব দ্যা সিটি অব লন্ডন’ সম্মাননায় সম্মানিত করা হয়। তিনি সব সময় বাংলাদেশি কমিউনিটির স্বার্থ সংরক্ষণে তৎপর ছিলেন। ২০১৭ সালে অক্টোবরে তিনি বিবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সিলেট চেম্বারের সঙ্গে যৌথভাবে সিলেটে এনআরবি কনভেনশন এনআরবিদের নিয়ে বিশ্ব সম্মিলনের আয়োজনটি ছিল ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। যেখান থেকে এনআরবি ডে’র ঐতিহাসিক ঘোষনা উচ্চারিত হয় আজকের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের মুখ দিয়ে।

এনাম আলী গ্রেটার লন্ডনের সারে এলাকায় বসবাস করতেন। তার দেশের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলা বাজার এলাকায়। মরহুম এনাম আলী এমবিই’র প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বাদ-জোহর ইস্ট লন্ডন মসজিদে। একই দিন সারের এপসম সেমিট্রি প্রাঙ্গণে মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে এপসম সেমিট্রিতে তাকে সমাহিত করা হবে।

ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস’র প্রবর্তক এনাম আলী ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে এবং বরিস জনসনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও ব্রিটেনের মূলধারায় একজন প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বিভিন্ন সময় বিবিসি, চানেল ফোর, সিএনএন, আল-জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তার অভিমত কারি ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে খুবই অর্থবহ এবং সময়ের দাবি পূরণে সহায়ক হয়েছে। এনাম আলী এমবিই ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সরকারের হসপিটালিটি এডভাইজারি কমিটির সদস্য হিসেবে ৫ বছর সার্ভিস প্রদান করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সময়কাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এ সময় কারি ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন নীতিমালা ফেয়ার থাকার ব্যাপারে তিনি সর্বাত্মক ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রস্তাব নিয়ে হাউজ অব কমন্সে জমজমাট বিতর্ক হয়েছে। সাম্প্রতিক বিন্দালূ ভিসা চালুর প্রক্রিয়ায়ও তার সরব ভূমিকা অব্যাহত ছিল।

বিভিন্ন মহলের শোক:

বৃটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তক, স্পাইস বিজনেস ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এনাম আলী এমবিই এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি। এক শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এনাম আলী এমবিই ব্রিটেনে কারি শিল্পের অগ্রযাত্রায়, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের জন্য অনুকরণীয় ভূমিকা রেখে গেছেন। তার উদ্যোগেই ২০০৫ সালে বৃটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত হয় যেটা সারাবিশ্বের কারি শিল্পের অস্কার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এনাম আলী ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ ছিলেন। তিনি তার শ্রম ও মেধা দিয়ে কারি শিল্পে অবদান রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। এছাড়া ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি মরহুম এনাম আলীর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়া এনাম আলী এমবিই‘র মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, বিবিসিএ, রিপোর্টার্স ইউনিটি ইউকে, বাংলাদেশ সেন্টারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

প্রবাসের খবর এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :