পরিবহন ধর্মঘটে রাজশাহীতে অচলাবস্থা
রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে পুরো অঞ্চলে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া অনিদিষ্টকালের এ ধর্মঘটে রাজশাহীর সঙ্গে সড়ক পথে সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন এ পথের যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধর্মঘট শুরুর পর রাজশাহী থেকে দুরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এছাড়া রাজশাহীতেও কোনো বাস প্রবেশ করেনি। তবে রেল পথে যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে বাস ধর্মঘটের ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন দুর-দুরান্তের সাধারণ যাত্রীরা। এছাড়া শনিবার রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরাও বিপাকে পড়েন।
শিরোইল টার্মিনালে যাত্রী রাকিবুল হোসেন বলেন, ঢাকায় যেতে টার্মিনালে এসে দেখি কোনো বাস চলছে না। এখন বাসায় ফিরে যেতে হবে।
অটোরিকশা-লেগুনা ধর্মঘট: রাজশাহীতে বাস ধর্মঘটের পর এবার মহাসড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও থ্রি–হুইলার যানও ধর্মঘট ডেকেছে জেলা মিশুক–সিএনজি মালিক সমিতি। সব ধরনের সড়কে অবাধ চলাচল ও হয়রানিমুক্ত নিবন্ধনের দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহীতে অনির্দিষ্টকালের ও ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।
দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ: বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ধর্মঘট ডাকায় উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বাস টার্মিনাল এলাকায় এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কোনো বাস না পেয়ে ফিরে যান অনেকে।
কৃষি শ্রমিক জাহিদ হাসান বলেন, গাইবান্ধার ফুলছড়ি থেকে ধান কাটার কাজে ১৪ জনের দল নিয়ে বগুড়ার কাহালু উপজেলার বিবিরপুকুর এলাকায় এসেছিলাম। প্রায় দুই সপ্তাহ কাজ শেষে বৃহস্পতিবার বাড়িতে ফেরার জন্য বগুড়া বাস টার্মিনাল এলাকায় এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাইনি।
বিভাগের আট জেলায় ধর্মঘটে অচলাবস্থা: রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশের দুদিন আগে থেকেই বিভাগের ৮ জেলায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। এর আগে ২৬ নভেম্বর নাটোরে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ সভায় ধর্মঘটের ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব।
নাটোর: দশ দফা দাবি আদায়ে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটে নাটোর থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার সাধারণ যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলায় বাস ধর্মঘট শুরু হয়।
এছাড়া যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলও বন্ধ আছে। শুক্রবার সকালের দিকে শহরের হরিশপুর এলাকায় কিছু শ্রমিক ইজিবাইকসহ সিএনজি থ্রি-হুইলার গাড়ি আটক করে ফিরে যেতে বাধ্য করেন। এছাড়া শহরতলির কয়েকটি এলাকা ছাড়া জেলার বাইরে ইজিবাইকসহ সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম কালিয়া বলেন, জেলায় ইজিবাইকসহ সব ধরনের হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধন, মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ ও জ্বালানি তেল এবং যন্ত্রাংশের অস্বাভাবিক মূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এতে আন্ত:জেলা বা দূরপাল্লার কোনো বাস এ জেলা থেকে ছেড়ে যায়নি বা প্রবেশ করেনি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। এছাড়া বাস বন্ধ থাকার সুযোগে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে রিকশা ও অটোরিকশাগুলো।
জামিল উদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘বাস টার্মিনালে এসে জানলাম পরিবহন ধর্মঘট। এখন যেকোনো মূল্যে আমার রাজশাহীতে যেতে হবে।’
বগুড়া: বগুড়া থেকে প্রতিদিন ৩৬ জেলায় প্রায় ১২০০ বাস চলাচল করে। পরিবহন ধর্মঘটের ফলে সব বাস বন্ধ রয়েছে।
বগুড়া-ঢাকা রুটের বাস চালকের সহকারী সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘বাস মালিকেরা বলেছেন বাস বন্ধ।’
জয়পুরহাট: পরিবহন ধর্মঘটের কারণে জয়পুরহাট বাস টার্মিনাল থেকে বগুড়া, নওগাঁ ও দিনাজপুর রুটে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বাস যাত্রীরা জানান, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। সিএনজি ও ইজিবাইক চলাচল করছে। এসব যানবাহনে ভাড়া অনেক বেশি। আজকের ধর্মঘট পরিবহন মালিকদের স্বার্থে নয় বলে তারা মনে করেন। পাবনা: ধর্মঘটে বন্ধ রয়েছে ঢাকা-পাবনা রুটের দূরপাল্লার বাস। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। রাজশাহীর অন্যান্য জেলার মতো পাবনায়ও সকাল থেকে শুরু হয় এ ধর্মঘট। জেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ সব বাসস্ট্যান্ডগুলো বন্ধ আছে।
একাধিক বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, টার্মিনালে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে বাস। সাধারণ যাত্রীরা যানবাহনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। কম দূরত্বের যাত্রীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা ছোট যানে রওনা দিলেও দূরের যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে।
সিরাজগঞ্জ: ধর্মঘটের মধ্যেই উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার সিরাজগঞ্জের অভ্যন্তরে বৃহস্পতিবার থেকে বাস চলাচল করেছে। তবে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত যানবাহন দিনভর চলাচল করলেও জেলা শহর থেকে রাজশাহী, পাবনা ও রংপুর অভিমুখে দূরপাল্লার বাস চলাচল করেনি। মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্বের সিরাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত বাস চলাচলে যাত্রী বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ কিছুটা কমলেও বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা।
নওগাঁ: রাজশাহী বিভাগের অন্য জেলাগুলোর মতো নওগাঁয়ও চলে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন নেতাদের দাবি, মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজশাহী বিভাগে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, রাজশাহীর গণসমাবেশে জনগণের অংশগ্রহণ ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে এই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে আসা যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা, ভ্যান ও ইঞ্জিনচালিত ভটভটিযোগে যাতায়াত করছেন।
প্রসঙ্গত, শনিবার নাটোরে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ সভায় এ ধর্মঘটের ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ যান চলাচল বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় চলছে এ পরিবহন ধর্মঘট।
উল্লেখ, শনিবার রাজশাহী ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নেতা-কর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের সব বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এটি শেষ বিভাগীয় সমাবেশ।
(ঢাকাটাইমস/২ডিসেম্বর/এসএম)