নায়ক জাফর ইকবালের মৃত্যুবার্ষিকী: শেষ জীবনটা ছিল করুণ

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫২
অ- অ+

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ের সাড়া জাগানো নায়ক জাফর ইকবাল। বাংলা চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ নায়কদের মধ্যে অন্যতম তিনি। চিরসবুজ নায়ক হিসেবেও বেশ পরিচিত। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন গিটারিস্ট ও সংগীতশিল্পী।

জাফর ইকবালের আরও একটি বড় পরিচয়, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন প্রয়াত এই নায়ক। তবে বহু প্রতিভাধর এ অভিনেতার শেষ জীবনটা সুখের ছিল না। সেই কাহিনিটা খুবই করুণ।

পারিবারিক জীবনে দুই সন্তানের বাবা ছিলেন জাফর ইকবাল। তার স্ত্রীর নাম ছিল সনিয়া। অভিনয় ও সংগীত দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আলো ছড়ালেও সেই আলোর রেশ ছিল না অভিনেতার পরিবারে। পারিবারিক অশান্তির কারণে এক সময় খুব ভেঙে পড়েন জাফর ইকবাল। মদ হয়ে যায় তার নিত্যসঙ্গী।

মদের তীব্র নেশা আর নিয়ন্ত্রণহীন জীবন যাপনের কারণে একসময় ক্যানসারে আক্রান্ত হন জাফর ইকবাল। দেখা দেয় হার্টের সমস্যা। নষ্ট হয়ে যায় দুটি কিডনিই। নানা জটিল রোগে জর্জরিত নায়ক ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪১ বছর বয়সে চলে যান আপন ঠিকানায়। রবিবার সেই হারানো নক্ষত্রের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী।

১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মেছিলেন জাফর ইকবাল। তার বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ এবং ছোট বোন শাহনাজ রহমতুল্লাহ দুজনেই ছিলেন সংগীতশিল্পী। তারা কেউই বেঁচে নেই।

মুক্তিযুদ্ধের আগেই চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন জাফর ইকবাল। তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘আপন পর’। এতে জাফর ইকবালের বিপরীতে অভিনয় করেন প্রয়াত কবরী সারোয়ার। পরবর্তীতে নায়িকা ববিতার সঙ্গে তার জুটি দর্শক নন্দিত হয়ে ওঠে। ৩০টির মত ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেন জাফর ইকবাল ও ববিতা।

এ জুটির বাস্তব জীবনে রসায়নও বেশ জমে উঠেছিল বলে গুঞ্জন আছে। গত বছর চিত্রনায়িকা ববিতার তার জন্মদিনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকারও করেন যে, জাফর ইকবাল এবং তিনি একে অপরকে পছন্দ করতেন। তবে বেশিদূর গড়ায়নি সে সম্পর্ক।

১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি ‘অবুঝ হৃদয়’ দারুণ ব্যবসাসফল হয়। সে ছবিতে আপন দুই বোন চম্পা ও ববিতার বিপরীতে জাফর ইকবালের অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে প্রায় ১৫০টি ছবি করেন প্রয়াত এ নায়ক। যার বেশিরভাগই ব্যবসাসফল।

শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানাতো জাফর ইকবালকে। তবে সব ধরণের চরিত্রেই তার স্বাচ্ছন্দ বিচরণ ছিল। ১৯৭৫ সালে ‘মাস্তান’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় জাফর ইকবালকে ওই প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাগী, রোমান্টিক, জীবন যন্ত্রণায় পীড়িত কিংবা হতাশা থেকে বিপথগামী তরুণের চরিত্রে জাফর ইকবাল ছিলেন পরিচালক ও প্রযোজকদের প্রথম পছন্দ। অভিনয়ের পাশাপাশি চমৎকার গানও গাইতেন তিনি। বেশকিছু ছবিতে গায়ক চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন।

১৯৬৬ সালে একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন জাফর ইকবাল। তার প্রথম সিনেমায় গাওয়া গান ছিল ‘পিচ ঢালা পথ’। ১৯৮৪ সালে জাফর ইকবালের কণ্ঠে বড় ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে রাজ্জাক অভিনীত ‘বদনাম’ ছবিতে ‘হয় যদি বদনাম হোক আরো’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

মূলত জাফর ইকবাল ছিলেন নামকরা গিটারিস্ট। ভালো গিটার বাজাতেন বলে প্রখ্যাত সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে অনেক ছবির আবহসংগীতও তৈরি করিয়েছিলেন। পরে গিটারিস্ট থেকে জাফর ইকবাল হয়ে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্রের নামকরা নায়ক।

(ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজবাড়ীতে ডেকে নিয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৪
আজ সরকারি অফিস-ব্যাংক-পুঁজিবাজার খোলা
মাগুরার শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড
হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গেছেন ৪৮ হাজার ৬৬১ বাংলাদেশি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা