যশোর-১ আসনে নৌকার বৈঠাকে মজবুত করেছেন এমপি শেখ আফিল উদ্দিন

বেনাপোল প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:১০

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত যশোর-১ (শার্শা) আসনটির নৌকা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল একসময়। শক্ত হাতে বৈঠা ধরে সেই আসনে নৌকাকে মজবুত করে রেখেছেন দেশের শীর্ষ আকিজ শীল্প গোষ্ঠীর মালিক শেখ আকিজ উদ্দিনের ছোট ছেলে আফিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার শিল্পপতি শেখ আফিল উদ্দিন।

আফিল উদ্দিন নৌকার টিকিট পেয়ে পরপর ৩ বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে যশোরের ৬টি আসনের মধ্যে তিনিই সবচয়ে জনপ্রিয় এমপি।

আফিল উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার নির্বাচনী আসন শার্শা উপজেলায় পয়ে ১ লাখ সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য নির্মাণ করেছেন আফিল জুট মিল, আফিল মৎস প্রকল্প, মুরগির ডিমের ফার্মসহ বেশ কটি ইন্ডাস্ট্রিজ। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন পুরুষ ও মহিলাদের কর্মসংস্থান করে দিয়ছেন, সেজন্যই তিনি এই আসনে একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। মাঠ পর্যায়ের মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি তার জুট মিলেই সাধারণ শ্রমিকদের সুখে-দুখে পাশে থাকার জন্য বাড়ি নির্মাণ করে তার পরিবার নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গেই বসবাস করছেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে তিনি একক হাতে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে রেখেছেন। সারা বছর ধরেই তিনি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে থেকে তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে আছেন। দুর্দিনের পরীক্ষিত শার্শার অভিভাবক হিসেবে সব দলের কাছে তিনি খুবই প্রিয়ভাজন ব্যক্তি।

আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকার মাঝি হতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বেনাপোলের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন।

পাশাপাশি বিএনপির ৫ প্রার্থীও ধানের শীষ মার্কা পেতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানেও রয়েছে দলের মধ্যে বিবাদ। সংস্কারপন্থী খ্যাত বহিষ্কৃত সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে ঠেকাতে মরিয়া অপর একটি পক্ষ। আবার জামায়াতের অস্তিত্ব নিয়েও রয়েছে বিএনপিতে ভয়। এসব কারণে যশোর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে রয়েছেন নানা আলোচনা-গুঞ্জন।

যশোরের শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে যশোর-১ আসন গঠিত। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল অবস্থিত এ গুরুত্বপূর্ণ আসনটি। সব দলের জন্য এই আসনটি মর্যাদার। বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৫ বার, বিএনপি ৩ বার, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত একবার করে বিজয়ী হয়েছেন।

এই আসনে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৭৯ সালে বিএনপির আলী তারেক, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম, ১৯৮৮ সালে জামায়াতের নূর হোসেন, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ২০০১ সালে বিএনপির আলী কদর, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের পর থেকে শেখ আফিল উদ্দিন নির্বাচিত হয়ে আজও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শার্শার তৃণমূলের রাজনীতিতে শেখ আফিল উদ্দিনের অবস্থান অত্যন্ত সুসংসহ। ২০০১ সালে রাজনীতিতে এসে শার্শা আওয়ামী লীগের ভাঙা সংসার নতুন করে সাজিয়ে দলকে মজবুত করে গড়ে তোলেন। এ কারণে বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচন, ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়।

২০০১ সালে নৌকা মার্কা নিয়ে রাজনীতির মাঠে আসা বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ আফিল উদ্দিন প্রথম নির্বাচনে পরাজিত হলেও দল পুনর্গঠন ও সুসংহত করেন। এ জন্য প্রথম দিকের এক দশক ধরে শার্শা ও বেনাপোলে আওয়ামী লীগের একক নেতৃত্ব দেন। ২০০৮ সালে তাই ঝামেলা ছাড়াই তিনি নৌকায় ধানের শীষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন।

আফিলের বিপক্ষে চলে যান বেনাপোলের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন। মেয়র লিটন আফিল উদ্দিনের বিরধিতা করেও খুব একটা লাভ করতে পারেননি। ১০ম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী ছাড়াই নৌকার টিকিট পেয়ে এমপি হয়েছিলেন আফিল উদ্দিন।

আফিল উদ্দিনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে যশোর-১ আসনে বর্তমান সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিনে বিকল্প নেতৃত্ব আজও গড়ে ওঠেনি। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এমপি শেখ আফিল উদ্দিন নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন। রাস্তা, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করেছেন। শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে খাতা-কলম দিচ্ছেন। জুটমিল স্থাপন করে প্রায় ১০ হাজার নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। ফলে এমন নেতাকে মনোনয়ন না দেয়ার কোনো কারণ নেই।

বিএনপি নির্বাচনে গেলে ধানের শীষ প্রতীকের জন্য বিএনপির ৫ প্রার্থী আশায় বুক বেঁধেছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু ,সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির, কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুজ্জামান লিটনের নাম শোনা যাচ্ছে। আর এই প্রার্থীরা আতঙ্কে আছেন বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে নিয়ে।

তৃপ্তির পক্ষে-বিপক্ষে কয়েক বার সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী শার্শা উপজেলা বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু দলের দুর্দিনে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির ও নুরুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৫/২০টি করে মামলা। এদের বাইরে দলের মনোনয়ন দেওয়ার কারণ নেই।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :