ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৯:৫১

ফ্রি ফায়ার খেলায় ভুক্তভোগী কিশোর সাব্বির তার প্রতিপক্ষ ফেরদৌসের কাছে পরাজিত হয়। এই পরাজয় সহ্য করতে না পেরে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। আর ফেরদৌস সেই গালিগালাজের উপযুক্ত প্রতিশোধ নেওয়ার কারণে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সাব্বিরকে হত্যা করে। বাগেরহাটের পিবিআই, এই ঘটনায় অভিযুক্ত ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার পিবিআই। হত্যার পর সাব্বিরের লাশ গ্যারেজের খাটের পাশে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে।

ফ্রি ফায়ার গেম খেলাকে কেন্দ্র করে বন্ধুর হাতে খুন হওয়া কিশোর সাব্বির হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে বাগেরহাট জেলা পুলিশ ব্যুরো ইনভেশটিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার সাথে জড়িত কিশোর ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার মেঘনা ব্রিজের সামনে এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

নিহত সাব্বির শেখ পাতলা টু তেরখাদা রাস্তায় বেশির ভাগ সময় ভ্যান চালাত। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ভ্যান চালানোর জন্য বাড়ি থেকে ভ্যানসহ বাইরে যায়। ওই দিন বিকাল আড়াইটার দিকে সাব্বিরের মা তাকে ফোন দিয়ে বাড়ি আসার কথা বললে, সাব্বির তার মাকে, আমি ভাড়া নিয়ে পাতলা টু তেরখাদা যাচ্ছি, আসরের দিকে বাড়ি আসব।

সন্ধ্যা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাব্বির বাড়িতে না আসলে, মোবাইলে কল করলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে সাব্বিরের বাবা শেখ বোরহান ১১ জানুয়ারি তেরখাদা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন।

১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সাব্বিরের বাবা জানতে পারেন যে, বাগেরহাটের মোল্লাহাট থানার ছোট কাচনা গ্রামের ওমরের মোড়ের সামনে শেখ ওবায়দুর রহমানের নির্মিত গোডাউনের নিচে ফাঁকা জায়গায় একটি পঁচাগলা লাশ পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন মোল্লাহাট থানায় সংবাদ দিলে থানা পুলিশ ওই জায়গায় উপস্থিত হয়ে মৃত দেহ দেখতে পান। সাব্বিরের বাবাসহ তার আত্মীয় স্বজন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে মৃত দেহ দেখে লাশ শনাক্ত করেন। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ভুক্তভোগী সাব্বিরকে হত্যা করে তার কাছে থাকা ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও সাথে থাকা একটি এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়। ওই ঘটনায় নিহত সাব্বিরের বাবা মোল্লাহাট থানায় একটি মামলা করেন।

নিহত সাব্বির খুলনা জেলার তেরখাদা থানার কুশলা গ্রামের শেখ বোরহানের ছেলে।

পিবিআইয়ের ভাষ্যমতে, থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই মামলাটির তদন্ত চলমান রাখে। মামলাটি পিবিআইয়ের তফসিলভুক্ত হওয়ায় ৩০ জানুয়ারি পিবিআই মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করে। আর পুলিশ পরিদর্শক (নি.) আশরাফুল আলম মামলাটির তদন্তের কাজ শুরু করে। মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের জন্য পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের দিক-নির্দেশনায় এবং পিবিআই বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. আবদুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক (নি.) আশরাফুল আলমকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়।

পিবিআই বলছে, তদন্তের এক পর্যায়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নি.) আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে পিবিআই বাগেরহাটের একটি তদন্ত টিম ঘটনার সাথে জড়িত আইনের সাথে সংঘাতে জড়িত মো. ফেরদৌসকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার মেঘনা ব্রীজের সামনে এলাকা থেকে সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেখানো মতে হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, ভুক্তভোগী সাব্বিরের ভ্যান গাড়ি ও এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোনের অংশ বিশেষ উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ফেরদৌসের বরাত পিবিআই জানায়, ফ্রি ফায়ার খেলায় সাব্বির ফেরদৌসের কাছে পরাজিত হয়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। ফেরদৌস তার উপযুক্ত প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৯ জানুয়ারি বেলা পৌনে তিনটার দিকে শিশু বায়জিদের মাধ্যমে সাব্বিরকে ডেকে নিয়ে আসে। গ্যারেজের মধ্যে বসে সাব্বির গেম খেলা অবস্থায় ফেরদৌস পেছন থেকে গামছা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গ্যারেজের খাটের পাশে কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখে। আর সাব্বিরের ভ্যান গাড়িটির ছোট ছোট করে ভাঙ্গারীর ক্রেতার কাছে বিক্রি করেছে। আর চারটি ব্যাটারি আলামিনের ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে এখলাছের ভাঙ্গারীর দোকানে বিক্রি করে।

গত ১০ জানুয়ারি রাত দুইটার দিকে শেখ ওবায়দুর রহমানের নির্মিত গোডাউনের নিচে লাশ ফেলে দিয়ে আর্বজনা দিয়ে ঢেকে রাখে। পরের দিন সকালে নারায়ণগঞ্জে চলে যায়।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রহমান বলেন, মামলাটি পিবিআইয়ের তফসিল ভুক্ত হওয়ায় আমরা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণ করি। আমরা ঘটনার সাথে জড়িত কিশোর মো. ফেরদৌসকে আটক করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ফেরদৌস আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

গ্রেপ্তারকৃত মো. ফেরদৌস বাগেরহাট জেলার সদর থানার ডিংসাইপাড়া কোড়ামারা গ্রামের মো. মনিরুল সেখের ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/০১ফেব্রুয়ারি/এএ/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

তাপদাহ: দিনাজপুরে নাবি টমেটোর বাম্বার ফলনেও কৃষকের মাথায় হাত

এক পাগলা কুকুরের কামড়ে শিশুসহ ২২ জন আহত, হাসপাতালে নেই ভ্যাকসিন

বাউফলে জেলেদের ভিজিএফের ৬ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ

দেশের আলোচিত কিশোরী ইয়াসমিনের মা শরিফা বেগমের অস্বাভাবিক মৃত্যু!

তরুণীর প্রেমের জাল, ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয়ে সর্বস্ব লুট: গ্রেপ্তার ৭

কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত বাতিল দাবি

সুন্দরবনের গহিন অরণ্যে আগুন

লিবিয়ায় সালথার কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতনের ঘটনায় দালালের স্ত্রী গ্রেপ্তার

শিবালয়ে আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত ভোটের মাঠ

কোম্পানীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী, আলোচনায় ওবায়দুল কাদেরের ভাই

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :