ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে কিছুক্ষণের হাঁটাচলায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৯ | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৫

সুস্বাস্থ্যের জন্য উৎকৃষ্ট ব্যায়াম হলো হাঁটা। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে পারলে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। তাই বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত হেলেদুলে হলেও কিছুক্ষণ হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যান্ত্রিক জীবনে অলসভাবে সবার সময় কাটে। এতে করে শরীরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকে শরীরচর্চা করার সময় পান না। ওজন কমানো কিংবা চনমনে থাকা—প্রতিদিন কিছুটা সময়ের জন্য হাঁটা জরুরি।

হাঁটলেই শরীর থাকবে সুস্থ। ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। নিয়ম করে যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটতে পারেন, তা হলে বেশি সুফল পাবেন। রোজ হাঁটলে শুধু শরীর ভালো থাকে তা নয়, ভালো থাকে মন, আয়ুও বাড়ে। হাঁটাহাঁটি করলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। মন এবং মস্তিষ্ক দুই-ই ফুরফুরে হয়। চিকিৎসকদের মতে, কয়েক পা হাঁটার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সুস্থতার চাবিকাঠি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশির ভাগ মানুষ জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতে অপারগ। তবে তারা চাইলে নিয়ম করে প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটলে রেহাই পাবেন জিম করার ঝামেলা থেকে। কারণ, হাঁটতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। যেকোনো বয়সের মানুষ চাইলেই এ কাজটি করতে পারেন। শুধু হাঁটুর হাড় ক্ষয় হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। এ ছাড়া সবাই হাঁটতে পারেন অনায়াসে।

হাঁটা থেকে যদি উপকার পেতে হয় তাহলে হাঁটতে হবে ঘাম ঝরিয়ে। আরাম করে হাঁটলে হবে না। হাঁটার সময় ঘাম ঝরান, একটু হাঁপ লাগবে তাতেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত উপকার।

প্রতিদিন নিয়মিত মাত্র ১৫ মিনিট হাঁটলেই বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায়। এমনটাই বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, রোজ ১৫ মিনিট হাঁটলেও আয়ু ৩ বছর পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

দুপুরের খাবার বা রাতের খাবার খাওয়ার পর ১৫ মিনিট হাঁটলে রক্তে শর্করা মাত্রা কম হতে পারে। এমনকি, যারা প্রত্যেক দিন ৪৫ মিনিট করে সকালে হাঁটছেন, তারা যদি একটানা অতক্ষণ না হেঁটে প্রত্যেকটা মিলের পর ১৫ মিনিট করে হাঁটতে পারেন, তা হলে বেশি উপকার পাবেন।

প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যেকদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা উচিত। কিন্তু অনেকেই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন না। ওজন ঝরানোর জন্য শুধু ১৫ মিনিট হাঁটলে চলবে না। তবে যে ক্যালোরিগুলো এমনি ঝরবে না, সেগুলো ঝরানোর জন্য ১৫ মিনিটও যথেষ্ট। তবে এইটুকু শরীরচর্চার যদি রোগা হতে হয়, তা হলে হাঁটার পাশাপাশি লো-ক্যালোরি ডায়েটও করতে হবে। জেনে রাখুন, এই অল্প সময় হাঁটলেও আপনার কী কী উপকার হতে পারে।

হার্ট ভালো থাকে

চিকিৎসকদের মতে, প্রতি সপ্তাহে মাত্র আড়াই ঘণ্টা হাঁটলেই নাকি হার্টের অনেক সমস্যার সমাধান হয়। অর্থাৎ, দিনে যদি মাত্র একুশ মিনিট হাঁটাহাঁটি করেন, তা হলে আপনার হার্ট তো ভাল থাকবেই, সেই সঙ্গে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কাও কমবে। নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি করলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমে।

ওজন কমায়

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটার জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস চর্বি কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকরা রোগা হওয়ার পর্বে হাঁটার পরামর্শ করে দেন। কিন্তু কাজটা অতটাও সহজ নয়। রীতিমতো ঘাম ঝরিয়ে দ্রুত পায়ে একই গতিতে হাঁটা, ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই হাঁটার সময়ে গতি কমালে চলবে না। তবে রোজ যদি কিছুটা সময় হাঁটাচলা করা যায়, তা হলে শরীর এমনিতে অনেক হালকা থাকবে।

উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। ওষুধ খেয়ে, খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম মেনেও সব সময়ে বশে রাখা যায় না উচ্চ রক্তচাপ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, নিয়ম করে যদি হাঁটা যায়, তা হলে রক্তচাপের মাত্রা অনেকটাই বশে রাখা সম্ভব। হাঁটলে রক্তচাপ কমে। এমনকি, অনেকের ওষুধ খাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিসের হাত ধরেই জন্ম নেয় আরও অনেক শারীরিক সমস্যা। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে রেহাই পাবেন অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হাঁটার ভূমিকা অপরিসীম। তবে ডায়াবেটিস থাকলে হাঁটতেও হবে নিয়ম মেনে। প্রথমে ধীর গতিতে শুরু করতে হবে। তিন থেকে পাঁচ মিনিট ধীরপায়ে হাঁটার পর গতি বাড়াতে হবে। মাঝারি গতিতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত হাঁটতে হবে। টাইপ টু-র ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভাবে হাঁটাহাঁটি স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশ ভাল।

মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করে

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে তিনবার এক ঘণ্টা দ্রুত হাঁটেন তাদের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যারা শিক্ষা সেমিনারে অংশ নেয় তাদের তুলনায় ভালো। অন্যান্য গবেষণা দেখায় যে শারীরিক ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, বয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, নিয়মিত হাঁটার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। তাই যখন হাঁটা-চলা করবেন, তখন আপনার মস্তিষ্কও ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করবে।

মন ভালো থাকে

গবেষণায় দেখা গেছে,ব প্রতিদিন হাঁটলে তা স্নায়ু প্রক্রিয়া ঠিক রাখে, যা আপনার রাগ এবং আক্রমণাত্মক আচরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। শীতকালে রোদে হাঁটা মনের জন্য আরো ভালো যা আপনাকে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। সর্বোপরি হাঁটতে বের হলে আপনি আশেপাশের মানুষের সাথেও দেখা, সাক্ষাৎ ও গল্প করতে পারেন; যা মনের জন্য অনেক ভালো।

শক্তি বৃদ্ধি করে

বহু মানুষের শরীরে এনার্জির (শক্তির) ঘাটতি থাকে। তাই তারা সারা দিন ক্লান্ত অনুভব করেন। এই পরিস্থিতি জীবনকে জটিলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। নিয়মিত হাঁটা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখে।

আয়ু বাড়ায়

হাঁটা-চলা আপনার জীবনীশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতি সপ্তাহে মাত্র ১০ থেকে ৫৯ মিনিট হাঁটাহাঁটি করেন, অলস ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৮% কম।

হাড় ও পেশির শক্তি বৃদ্ধি

নিয়মিত হাঁটা শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি পেশি ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ। তাই নিয়মিত হাঁটতে হবে। তবেই মানুষ সুস্থ থাকতে পারবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :