সালাম দিয়ে অভিনব কায়দায় দীর্ঘদিন ছিনতাই, অবশেষে চক্রের ৩২ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৫০ | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:০০

টার্গেট ব্যক্তিকে অনুসরণ। এরপর তাকে সালাম দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলত। কথা বলার একপর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যেত। সেখানেই পূর্ব থেকে চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত থাকত। তাদেরই (চক্র) একজন ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ত এবং মারধর শুরু করত। লোকজন এগিয়ে আসলে বলত নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি। আর ততক্ষণে কেউ একজন ছিনতাই সেরে ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে অভিনব পদ্ধতিতে ছিনতাই করছিল একটি চক্র। রবিবার এই চক্রের ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

সোমবার রাজধানীর টিকাটুলি র‍্যাব-৩ এর কার্যালায়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্যাটেলিয়নটির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

র‌্যাব বলছে, রাজধানীর কোতোয়ালী, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তারা হলেন- মোহাব্বত মিয়া, মো. মাসুম, ফজল খাঁ, মো. সাইফ, মো. আকাশ, মো. আবু বকর, নজরুল ইসলাম, আলমগীর, জাহাঙ্গীর, মো. সোহেল, মো. সোহানুর রহমান সাগর, মো. সোহেল, মো. মামুন, লিটন, মো. আলমাস, সুজন মিয়া, রাকিব, মো. রিপন, মো. কালাম, মো. নজরুল ইসলাম, মো. সুমন মৃধা, অন্তর হোসেন রবিন, মো. আব্দুল রসুল, মো. কবির, মো. ছামিদুল রহমান, ইকবাল হোসেন, কামরুল, শহীদুল ইসলাম উজ্জল, মো. কালু, মো. সুমন, মো. হৃদয় ও সাজিদ খান। তাদের কাছ থেকে সুইচ গিয়ার, চাকু, ক্ষুর, এন্টিকাটার, কাঁচি, ব্লেড, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকাসহ দেশিয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে এসব ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বাড়ে। মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে এবং একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর লোকসমাগম হয়ে থাকে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিনতাইয়ের মাধ্যমে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।

বেশ কিছুদিন ধরে বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক এ চক্রটি রাজধানীর কোতোয়ালী, মতিঝিল, খিলগাঁও, রামপুরা, হাতিরঝিল, সবুজবাগ, শাহজাহানপুর ও ওয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ছিনতাই করারও পরিকল্পনা করে চক্রটি।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সাধারণত এসব এলাকায় ছিনতাইকারী এই চক্রটির সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। এছাড়াও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন অলি-গলিতে ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না। এছাড়াও তারা ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে থাকে এবং ছিনতাইয়ের কাজে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। যখন কোনো রিকশা অথবা সিএনজি আরোহী যাত্রীদের টার্গেট করে তারা অন্য একটি রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে ওই ব্যক্তির পেছনে যেতে থাকে।

ছিনতাইকারীদের সুবিধামত স্থানে পৌঁছে যাত্রীকে এবং চালককে দেশিয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রিকশা ও সিএনজি যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয়। ছিনতাইকারীরা তাদের ছিনতাই করা অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেশা করে এবং কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ চক্রের সদস্যদের অধিকাংশেরই রাজধানীতে বসবাসের জন্য স্থায়ী কোনো বাসস্থান নেই।

তারা সবাই রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে জানিয়ে লে. কর্নেল আরিফ বলেন, চক্রের প্রায় সব সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়ায়।

(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/এসএস/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :