এক শিঙাড়ার ওজন দুই কেজি!
ভাজাপোড়া অনেকেরই পছন্দ। আর গরম গরম মচমচে শিঙাড়ার স্বাদই আলাদা। তবে, সেই শিঙাড়া যদি হয় দুই কেজি ওজনের তাহলে বেড়ে যায় কৌতুহল। দুই কেজি ওজনের শিঙাড়া তৈরি করে রীতিমতো সাঁড়া ফেলেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার চারুলিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন নামে এক দোকানী। তার তৈরি বড় বড় শিঙাড়ার খ্যাতি ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল হলেই শুরু হয় সুস্বাদু শিঙাড়া ভাজার কর্মযজ্ঞ। একবারে ভাজা হয় দুই কেজি ওজনের শিঙাড়া। দুই কেজি ছাড়াও এক কেজি, ৫০০ গ্রাম, ২৫০ গ্রাম ওজনের শিঙাড়াও মেলে জসিম উদ্দিনের দোকানে। শিঙাড়া ভাজার গন্ধে মৌ মৌ করে ওঠে চারপাশ। গরম গরম মচমচে সুস্বাদু শিঙাড়া খেতে অপেক্ষা করেন ভোজন রসিকরা। ইতোমধ্যে চারুলিয়া গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ভাইরাল বড় শিঙাড়ার গ্রাম হিসেবে।
কালো জিরা, বাদাম, কিসমিসসহ ৩০ পদের মসলা ও মাংস দিয়ে তৈরি হয় বড় বড় শিঙাড়া। কেউ পছন্দ করেন গরুর মাংস, কেউ খাসির মাংস আবার কেউ পছন্দ করেন মুরগির মাংসের শিঙাড়া। পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছে শিঙাড়া সরবরাহ করেন জসিম।
শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, কুষ্টিয়া, মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলার মানুষ শিঙাড়া খেতে আসেন এখানে। কেউ বন্ধু-বান্ধবের সাথে বসে শিঙাড়ার স্বাদ নেন। কেউ আবার নিয়ে যান পরিবারের সদস্যদের জন্য। জসিমের দোকানে দুই কেজি ওজনের শিঙাড়া বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়। আর এক কেজি ওজনের শিঙাড়া বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়, ৫০০ গ্রাম ওজনের শিঙাড়া বিক্রি হয় ১৫০ টাকায় ও ২৫০ গ্রাম ওজনের শিঙাড়া বিক্রি হয় ৭৫ টাকায়। বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বেচাবিক্রি।
দীর্ঘ ৫ বছর ধরে শিঙাড়ার ব্যবসা করেন জসিম উদ্দিন। প্রথমে পরিবারের লোকজনের জন্য একটি দুই কেজি ওজনের বড় শিঙাড়া তৈরি করেন তিনি। পরে সেই বড় আকারের শিঙাড়া আকৃষ্ট করে ক্রেতাদের। প্রথমদিকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেও সময়ের ব্যবধানে বেড়েছে তার কাজের পরিধি। প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার টাকার শিঙাড়া বিক্রি হয় তার দোকানে। শিঙাড়া বিক্রির টাকা দিয়েই চলে তার সংসার। চলে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। ক্রেতাদের মুখে শিঙাড়ার সুনাম শুনে আত্মতৃপ্ত হন জসিম।
শিঙাড়া ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ৭ বছর আগে মেহেরপুরের বামনপাড়া গ্রামে আমার নানা শামছদ্দিনের কাছ থেকে সিঙ্গার বানানো শিখেছি। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। গত ৩ মাস থেকে বড় শিঙাড়া তৈরি করে আসছি। প্রথমে পরিবারের সদস্যদের খাওয়ার জন্য একটি বড় শিঙাড়া তৈরি করি। সুস্বাদু হওয়ায় দোকানে বড় শিঙাড়া বানানো শুরু করি। আস্তে আস্তে বড় শিঙাড়ার চাহিদা বাড়তে থাকে।
তিনি আরও জানান, এই শিঙাড়ার বিশেষত্ব হচ্ছে, কালো জিরা, বাদাম, কিসমিসসহ ৩০ পদের মসলা এবং গরু, খাসি ও মুরগির মাংস। কেউ পছন্দ করেন গরুর মাংস, কেউ খাসি আবার কেউ পছন্দ করেন মুরগির মাংস। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী শিঙাড়া ভেজে বিক্রি করি। যখন কেউ আমার শিঙাড়া খেয়ে প্রশংসা করেন তখন আমি খুবই আনন্দিত হই। আমি খুব তৃপ্তি পাই।
তিনি বলেন, আমার মাঠে তেমন জমিজমা নেই। শিঙাড়ার ব্যবসা করে আমার সংসার চলে। আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। আমার ব্যবসার টাকা দিয়ে চলে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। আমার কাজে আমার স্ত্রী ও সন্তানরা সহযোগীতা করে।
পার্শ্ববতী জেলা মেহেরপুর থেকে শিঙাড়া থেকে আসা আবির হাসান বলেন, ফেসবুকে জসিম উদ্দিনের বড় শিঙাড়ার ছবি দেখে বন্ধুদের নিয়ে খেতে চলে এসেছি। এতো বড় শিঙাড়া আমি আগে কখনও দেখিনি। আমরা বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজু শিঙাড়া খেয়েছি। কিন্তু এই শিঙাড়ার স্বাদই আলাদা। সবাই মিলে বসে মজা করে খেলাম। বাড়ির জন্যও চার কেজি নিয়ে যাচ্ছি।
দামুড়হুদা উপজেলার চারুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিজন শেখ বলেন, চারুলিয়া গ্রামের দোকানী জসিম উদ্দিনের সুস্বাদু দুই কেজি ওজনের শিঙাড়ার খ্যাতি এখন সবার মুখে মুখে। ফেসবুকে তার শিঙাড়া দেখে অনেকেই স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৭মে/এমআর)
মন্তব্য করুন