‘সরকারি অনুদান পেলে সেই টাকাকে আমরা নিজের মনে করি’

দর্শকনন্দিত নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার তাহের শিপন। বিটিভিসহ দেশের অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলেই প্রচার হয়েছে তার নির্মিত নাটক। এর বাইরে নির্মাণ করেছেন অসংখ্য বিজ্ঞাপন। কাজ করেছেন বড় পর্দার জন্যও। ২০২০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তার নির্মিত সিনেমা ‘হলুদবনি’।
বর্তমানে দেশের একটি বেসরকারি টেভি চ্যানেলের রিয়েলিটি শো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাহের শিপন। এর জন্য ছুটছেন দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে। গুণী এই নির্মাতার মিডিয়া ক্যারিয়ার ও সমসাময়িক কাজ নিয়ে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আলাপচারিতায় ছিলেন লিটন মাহমুদ।
আপনার হাত ধরে সফলতার পাঁচ বছরে রিয়েলিটি শো ‘বাংলা বিদ’। যাত্রাটা শুরু কিভাবে?
শুরুতে ইস্পাহানি টি লিমিটেড চ্যানেল আইতে বাচ্চাদের জন্য একটা কুইজ শো করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেটা নিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে কিছু আইডিয়া শেয়ার করে। তাদের আইডিয়া নিয়ে আমরা কয়েকজন বসি। আমাদের সঙ্গে সে সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুমিত্র শেখরও ছিলেন।
আমরা সারাদেশে জিনিসটা অ্যাক্টিভেশন করতে একটা কাঠামো দাঁড় করি, যাতে আমরা বাচ্চাদের মধ্যে একটা উন্মাদনা তৈরি করতে পারি। বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ চর্চা, বাংলা পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা এবং সঠিকভাবে বাংলা অভিধান করতে পারে- এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে এগিয়ে গেলাম।
শুরুতেই একটা বাধা তৈরি হলো। কারণ এটা তো একটা টিভি রিয়েলিটি শো। এ ধরনের শো-তে ক্লাইমেক্স থাকতে হয়, একটু ড্রামা থাকতে হয়। এসব নানা বিষয় নিয়ে আমি ও আমার টিম বানান, উচ্চারণ ও অভিধান তিন বিষয় একত্র করি। পাশাপাশি বিষয়টি আরও আকর্ষনীয় করতে এর সঙ্গে একটা বড় অংশ সংগীত রাখা হয়। বাচ্চাদের কাছে যেন জিনিসটা বোরিং না হয় সেরকম কিছু জিনিস আমরা আবিষ্কার করি। এভাবেই আমাদের যাত্রা শুরু।
শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ‘বাংলা বিদ’-এর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। কেমন লাগে?
আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। প্রতিটি বিভাগে যখন বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হয়, আমি আমার টিমের থেকে একদিন আগে সেখানে পৌঁছে যাই এবং অসম্ভব পরিশ্রম করি। ভালোলাগা ও ভালোবাসা থেকে এই পরিশ্রম করি। আমি বিশ্বাস করি, এই ভালাবাসা ও ভালোলাগা বাকি টিম মেম্বারদের ভেতরেও সঞ্চারিত করতে পেরেছি। যার ফলে পাঁচ বছর পরেও এই প্রতিযোগিতার জনপ্রিয়তা আছে।
বাছাইপর্বের জন্য দেশের বিভাগীয় শহরে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের কেমন সহযোগিতা পান?
প্রথম বছর শো-টি সফলভাবে করার পরই আমরা স্কুলগুলো থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি সবার। তার কারণ হলো, প্রথম বছরেই স্কুলগুলো বুঝতে পেরেছে বাংলা ভাষাকে নিয়ে আরও কাজ করা দরকার। যার জন্য আমরা যেখানেই বাছাইপর্ব করতে গেছি, সেখানকার শিক্ষকরা প্রণোদিত হয়ে আমাদের সাহায্য করেছে। এমনকি পুলিশপ্রশাসন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক পাশে থেকে কাজ করেছেন এবং বলেছেন, এই ধরনের প্রতিযোগিতা আরও করা দরকার।
একসময় টিভি খুললেই আপনার নাটক দেখা যেত। বড় তারকাদের নিয়ে কাজ করেছেন। সে জায়গাটায় অনেক ভাটা পড়েছে এখন। কারণ কী?
দেশের অধিকাংশ বড় তারকাদের নিয়ে আমি কাজ করেছি। এখনো খুব ইচ্ছে করে নাটকে ফিরে যাই। কিন্তু এখন একটি বড় চ্যানেলের চাকরি এবং ইভেন্ট দেখাশোনা করতে হয়। এ জন্য সময় পাই না। তারপরও মাঝেমধ্যে আমি নাটক বানাই। আমি আসলে নাটকের জগতেরই লোক। নাটকে ফিরে যেতেও খুব ইচ্ছে করে। গ্যাপ হয়েছে হয়তো, তবে আবার সময় সুযোগ পেলে নাটকে ফিরব। নিয়মিত কাজ করব।
১০ বছর আগের নাটক আর এখনকার নাটকের তফাৎ কতটুকু?
আকাশ-পাতাল তফাৎ। প্রফেশনালিজমের অনেক বড় তফাৎ। কারিগরি দিক থেকে নতুন পরিচালকরা অনেকটা এগিয়ে গেছেন এবং গল্প বলার ঢংও পরিবর্তন হয়েছে। আগে আমরা খুবই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, গ্রামার ধরে কাজ করতাম। কিন্তু এখনকার পরিচালকরা সেসবের ধার ধারেন না। যেটা দেখতে ভালো লাগবে, দর্শক যেটাতে আনন্দ পাবে- ওই আনন্দ মজা দেওয়ার জন্যই এখন সবার চেষ্টা। এর মধ্যে কিছু ভালো কাজ হয়, কিছু খারাপ কাজও হয়।
দর্শকদের অভিযোগ, এখনকার নাটকে আগের মতো তৃপ্তি নেই।
এটা নাটকের প্রবলেম না। পুরো পৃথিবীতে ইন্টারনেটের যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে সেটাতে তৃপ্তি পাবেন কিভাবে? আপনাকে মনোযোগ দিয়ে কোনো কিছু তো দেখতে হবে। ধরুন আপনি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছেন। গাড়িতে বসে ছয় ঘণ্টায় ছয়টা নাটক দেখতে পারবেন। তো আপনি তো চাইবেনই সময়টা পার করতে। ছয় ঘণ্টায় ছয় নাটক দেখলে কিভাবে তৃপ্তি পাবেন? আগে এই সুযোগ ছিল না, এখন তা তৈরি হয়েছে। এই সুযোগই মানুষকে অস্থির করেছে।
বড় পর্দায় ফিরবেন কবে?
শিরগিরই ফিরব ইনশাআল্লাহ। বড় পর্দার জন্য সরকারি অনুদানের জন্য একটি গল্প জমা দিয়েছি। এটি ফরিদুর রেজা সাগরের গল্পে শিশুতোষ চলচ্চিত্র। অনুদান পেলেও কাজটি আমি করব, না পেলেও করব।
ইদানীং দেখা যায়, সরকারি অনুদানের কোনো সিনেমা হলে দর্শক টানতে পারছে না। কারণ কী?
শুনতে খারাপ এবং অনেকের কাছে অপ্রিয় লাগবে, সরকারি অনুদান পেলে সেই টাকাকে আমরা নিজের মনে করি। মনে করি এই টাকা আমাকে দান করে দেওয়া হয়েছে, এটা দিয়ে যা খুশি করা যাবে। পাশাপাশি যারা দিচ্ছেন তারাও সেভাবে নজর রাখছেন না। ফলে ভালো কিছু নির্মাণ হচ্ছে না। তাই অনুদান যারা দেন এবং যারা নেন- উভয়েরই জবাবদিহিতা থাকা উচিত। তাহলে অনুদানের সিনেমাও ভালো হবে। হলে দর্শকও আসবে।
নাটক-সিনেমার সঙ্গে বাজারে ওটিটির আবির্ভাব। কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
আমি ওটিটিকে এগিয়ে রাখব। কারণ এ মাধ্যমের কাজগুলো অনেক শ্রমলব্ধ, অনেক কষ্ট করে বানানো হয়। তবে আমি মনে করি না কেউ কারও পরিপূরক। ওটিটি একদম আলাদা জগৎ তৈরি করেছে। সেখানকার সিনেমাও অন্যরকম। সিনেমা হলে যে সিনেমা দেখি সে সিনেমাগুলো থেকে ওটিটির সিনেমা অনেক এগিয়ে বলে আমি মনে করি। কারণ, ওটিটি আপনাকে গল্প বলার ও নির্মাণের স্বাধীনতা দিচ্ছে।
এখনকার সিনেমার মান নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
সিনেমার মান এখনো গড়পড়তা। একটা থেকে আরেকটা ভালো সিনেমার গ্যাপ এখন বেশি। ভালো সিনেমার চেয়ে খারাপ সিনেমা বেশি তৈরি হচ্ছে। পরিচালক-প্রযোজকরা কষ্ট করে এগুলো কেন বানান, তার কারণ আমি খুঁজে পাই না। আড়াই ঘণ্টার একটা গল্প বলতে হলে যে পরিমাণ শিল্পী-কলাকুশলী, টাকা ও মেধা ব্যয় করে- তার কোনো মানে খুঁজে পাই না।
সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ঢাকা টাইমসকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। এই প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/এজে)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিনোদন এর সর্বশেষ

জায়েদ-সায়ন্তিকার বিচার উপরওয়ালার কাছে দিলাম: প্রযোজক

বিয়েতে না আসায় কটাক্ষ! ছোট বোন পরিণীতিকে যে বার্তা দিলেন প্রিয়াঙ্কা

স্বামীর ধর্মকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মেয়ের যে নাম রাখলেন স্বরা ভাস্কর

অসম্ভব সেই ইতিহাস গড়েই ফেললেন শাহরুখ খান!

এবার ভাগনিকে বলিউডে আনছেন সালমান খান

এক সিনেমায় পরী-বুবলী, শুটিং শুরু ভারতে

চট্টগ্রাম ডুবলেই মানুষ আমার হাতে মাছ ধরিয়ে দেয়: রিয়াজ

রাফি খুবই ভালো খেলে: তমা মির্জা

সৃজিতের জন্মদিনে কোলে চড়ে বসলেন মিথিলা! স্বামীকে উপহার কী দিলেন?
