ঋণ পরিশোধে চাপ তৈরি হবে আগামী বছর

অনলাইন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:০৯

চলতি বছর বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লাগবে ৪০২ কোটি ডলার। ফলে আগামী বছর ঋণ পরিশোধে চাপ তৈরি হবে। আর ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ৫১৫ কোটি ডলার খরচ হবে। সবচেয়ে বেশি ভোগাবে রাশিয়া, চীন ও ভারতের কাছ থেকে নেওয়া কঠিন শর্তের ঋণগুলোই ।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ১১২ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে আরও ৮৩ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। বাকি ৮৩ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাত্র ১১৭ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল সরকারকে। এরপর প্রতিবছরই তা বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২০১ কোটি ডলার। তার মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বার্ষিক ঋণ পরিশোধ ২০০ কোটি ডলার ছাড়ায়।

জানা গেছে, রাশিয়া, চীন ও ভারতের কাছ থেকে নেওয়া কঠিন শর্তের ঋণগুলোই বেশি ভোগাবে। গত এক দশকে এই তিন দেশের কাছ থেকে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৬২৮ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার চুক্তি হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে চীনের ১২ প্রকল্পে ১ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলার, রাশিয়া রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার এবং ভারত তিনটি লাইন অব ক্রেডিটে (এলওসি) ৭৩৬ কোটি ডলার দিচ্ছে।

যদিও বিশ্বব্যাংক, এডিবির ঋণ পরিশোধের জন্য সময় পাওয়া যায় ৩২ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু গ্রেস পিরিয়ডের পর চীন ও ভারতের ঋণ পরিশোধ করতে হবে ১৫ থেকে ২০ বছরে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বিদেশি ঋণের পরিমাণ একশ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এই বছর শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। আর ২০২৪ সাল শেষে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে।

গত বছরের জুন শেষে সরকারি-বেসরকারি খাত মিলিয়ে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯৫ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন (৯ হাজার ৫৮৫ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমান বিনিময়হার অনুযায়ী বিপুল অংকের এ ঋণের ৭৩ শতাংশ সরকারের। বাকি ২৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে দেশের বেসরকারি খাত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। গত ৭ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে আমদানির দায় হিসেবে রিজার্ভ থেকে ১০৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর ফলে গত বুধবার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে। এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের (প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন হিসাবে) আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক মানদন্ডের আলোকে হিসাব করলে রিজার্ভ এখন ২৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। এই অবস্থার মধ্যেও আইএমএফের পূর্বাভাস বলছে, আগামী অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ বাড়বে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন বৈশ্বিক বাস্তবতায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী জুন পর্যন্ত বিদেশি ঋণের বিপরীতে বড় কোনও কিস্তি পরিশোধ নেই। ফলে আগামী মে মাস পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আশা, এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৩২ বিলিয়নে দাঁড়াবে। তবে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ থেকে আকু পেমেন্ট বা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) কাছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এতে আগামী মে মাস পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থাকবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘কয়দিন পর শুরু হচ্ছে রমজান মাস। এই রমজান ও ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন। রমজানের পর কোরবানির ঈদেও প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। পাশাপাশি রপ্তানিতেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। বিদেশি ঋণের বড় কিস্তি পরিশোধ যদি না থাকে তাহলে জুন পর্যন্ত রিজার্ভ থাকবে স্বস্তিদায়ক।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে অবস্থায় আছে মার্চ শেষে প্রায় সেই অবস্থাতেই থাকবে। এপ্রিলে একটু বাড়তে পারে। তবে মে মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের কাছে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে এখন রিজার্ভ একটু একটু বাড়লেও মে শেষে ৩২ বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই থাকবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :