সংসদ সদস্যের শাড়ি নিতে গিয়ে মার খেলেন বৃদ্ধা, ভিডিও ভাইরাল
সাতক্ষীরায় দরিদ্রদের মধ্যে শাড়ি বিতরণকালে এক বৃদ্ধ নারীর মাথায় শাড়ি দিয়ে বাড়ি মারার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা পৌর ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনকে ঘিরে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়। শাড়ি দিয়ে বৃদ্ধার মাথায় আঘাত করা মীর হাবিবুর রহমান বিটু সাতক্ষীরা-২ সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির আপন মামাতো ভাই।
ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি ঈদ উপলক্ষে সাতক্ষীরা-২ সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির পক্ষে তার বাসভবনের সামনের রাস্তায় শাড়ি বিতরণ করা হচ্ছিল। এমপির পক্ষে যেটি বিতরণ করছিলেন তার মামাতো ভাই মীর হাবিবুর রহমান বিটু।
ভিডিওতে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো নারীদের মধ্যে শাড়ি বিতরণ করছেন বিটু । এ সময় ষাটোর্ধ্ব মর্জিনা তার সামনে শাড়ি নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। তখনই একটি শাড়ি দিয়ে তার মাথায় অমানবিক ভাবে আঘাত করে লাঞ্ছিত করেন মীর হাবিবুর রহমান বিটু। এ সময় সদর এমপির আপন ছোট ভাই ও যুবলীগ নেতা মীর মহিতুল আলম মাহি উপস্থিত ছিলেন।
লাঞ্ছিত হওয়া ওই মহিলার নাম মর্জিনা বেগম। তিনি শহরের মুনজিতপুর এলাকার বাবুলের স্ত্রী।
লাঞ্ছিত মর্জিনা বেগম বলেন, প্রতিবছর রমজানে এমপি সাহেবের পক্ষ থেকে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করা হয়। আমি বিগত কয়েক বছর ধরে এমপি সাহেবের দেওয়া শাড়ি নিয়ে থাকি। আর প্রতি বছর এসব শাড়ি লুঙ্গি বিতরণ করেন এমপি সাহেবের মামাতো ভাই বিটু। সে প্রতি বছরই বিতরণকালে মানুষের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে।
মর্জিনা বলেন, এ বছর শাড়ি বিতরণকালে আমি শাড়িতে হাত বাড়িয়ে দিলে আচমকাই আমার মাথায় তিনটি বাড়ি মেরে আমাকে লাঞ্ছিত করে। পরে তিনি আমাকে শাড়িটিও দেন। আমরা গরিব, আমার মারির বিচার কে করবে? তাই আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রেখেছি।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মীর হাবিবুর রহমান বিটুর নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মর্জিনা বেগম আরও বলেন, জানতে পারলাম আমাকে মারপিট করে লাঞ্ছিত করা বিটু নাকি আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছে। সে যদি আওয়ামী লীগের সভাপতি হয় তাহলে আমরা নৌকায় ভোট দেব কীভাবে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে দরিদ্র মানুষের মাঝে শাড়ি বিতরণকালে এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক। শুধুমাত্র লোক দেখাতে এসব বিতরণ করলে হবে না। মানুষের পাশে থেকে ভালোবাসা নিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা শহরের জুবিলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মাঠে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ সম্মেলনটি ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়, কিন্তু বিপত্তি বাধে দ্বিতীয় অধিবেশনে। সম্মেলনে সদর এমপি পকেট কমিটি গঠন করতে গেলে সাধারণ কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। অতিথিদের সামনে এক পর্যায়ে চেয়ার ভাংচুর ও ছুড়াছুড়ি শুরু হয়। এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে।
পরবর্তীতে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি পরবর্তীতে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় পুলিশ পাহারায় অতিথিরা সম্মেলন স্থান ত্যাগ করেন। তবে রাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই পকেট কমিটি ঘোষণা করেন। ওই কমিটিতে সদর এমপির মামাতো ভাই মীর হাবিবুর রহমান বিটুকে সভাপতি করা হয়। এর পরেই বৃদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/কেএম)