পাঁচ শতাধিক প্রকল্পে ধীর গতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১০:৪২ | প্রকাশিত : ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৭:৪৯

সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি সন্তোষজনক নয়। গত এক বছরে ২৩৬টি প্রকল্পে কোনও অগ্রগতি হয়নি। সাড়ে পাঁচশ প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। এ নিয়ে বিব্রত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বার বার প্রকল্প কাজের গতি বাড়ানোর জন্য তাগাদা দিয়েও কোনও কাজ হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্তরা নানা অজুহাত উপস্থাপন করছেন। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কঠোর হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, সরকারের ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলো যেসব কারণে এগোয়নি তার মধ্যে রয়েছে– সময়মতো অর্থছাড় না হওয়া বা দেরিতে অর্থছাড় হওয়া, প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে না পারা, সময়মতো দরপত্র আহ্বান না করা, আবার যে সব দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে সেসব দরপত্র রেসপন্সিভ না হওয়া, প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ না পাওয়া, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না করা বা কম করা, প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়- যেমন প্রকল্পে ব্যবহারের জমি নিয়ে মামলাজনিত সমস্যা, প্রকল্পের জন্য তৈরি করা ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বার বার সংশোধন করা, প্রকল্পের জন্য আরডিপিপি অনুমোদনে বিলম্ব করা, দরদাতার সঙ্গে চুক্তিতে দেরি হওয়া। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রান্ত নানা ধরনের জটিলতাও রয়েছেই।

জানা গেছে, গত এক বছরে সরকারের নেওয়া ২৩৬টি প্রকল্পে কোনও অগ্রগতি হয়নি। এসব প্রকল্পের অফিস ব্যবস্থাপনা এবং ভাড়া করা গাড়ির খরচ জোগান দিয়ে পার করেছে পুরো অর্থবছর। আবার ৯৪টি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কোনও টাকাই খরচ করতে পারেনি। এর বাইরেও ৫৫৪টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন যেটুকুই হয়েছে তাও সন্তোষজনক নয়। আইএমইডির ‘২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২২ সালের ১৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনীতি পরিষদ (এনইসি) পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের পাশাপাশি সরকারি তহবিলের অপব্যবহার রোধ করে সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। আগামী অর্থ-বছরের (২০২৩) জন্য দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ দশমিক ৯ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয় ওই বৈঠকে।

সূত্র জানিয়েছে, ওই অর্থবছরের মূল এডিপির মধ্যে এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি ৯৩ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রকল্প বাবদ নিজস্ব বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ফলে অর্থ বছরের এডিবির মোট আকার দাঁড়ায় দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি ২৭ লাখ টাকা।

উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা পরে কমিয়ে দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় করা হয়। সুতরাং মূল এডিবির তুলনায় পরবর্তী অর্থবছরের এডিবি প্রায় ৯ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি এবং বরাদ্দের দিক থেকে ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

চলতি ২০২৩ সালের ফেরুয়ারিতে তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওই অর্থবছরের (২০২১-‘২২) চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৪৪টির আর্থিক এবং ৩০৭টির বাস্তব অগ্রগতিসহ মোট ৫৪৭টি প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। পাশাপাশি ৪৩৪টি প্রকল্পের আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে ৮২৪ প্রকল্পের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে বাস্তবায়ন সন্তোষজনক।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট প্রকল্প ছিল এক হাজার ৮৩৪টি। এগুলোর মধ্যে ৯৪টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি শূন্য। অথচ এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল এক হাজার চার কোটি ৯১ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে বাস্তব অগ্রগতি শূন্য থাকা ১০১টি প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ২৩ কোটি টাকা। এছাড়া ৫০টি প্রকল্পের অনুকূলে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও মাত্র ১২টি প্রকল্পে সেই টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ৪১টি প্রকল্পে এক লাখ টাকাও খরচ হয়নি।

জানা গেছে, অগ্রগতি শূন্য প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, সিলেটে কিডনি হাসপাতাল স্থাপন, উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা শহরের ড্রেন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অ্যাশফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন ও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।

এছাড়াও হিলি, বুড়িমারী ও বাংলাবান্দায় এলসি স্টেশন নির্মাণে এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি শূন্যই রয়েছে। এছাড়া ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পে খরচ হয়েছে ছয় কোটি ৬০ লাখ টাকা, অগ্রগতি নেই। নোয়াখালী অঞ্চলে বন্যার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে খরচ হয়েছে ছয় কোটি টাকা।

শূন্য অগ্রগতির আরও কয়েকটি প্রকল্প হলো ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এক্সটেনশন প্রজেক্ট, বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা জেলার হাইওয়ে সড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন এবং জেদ্দায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে বাস্তবায়ন পিছিয়ে থাকলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে থাকবে। কেননা সম্প্রতি রড, সিমেন্টসহ সব পণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। সেই সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকসহ সব জনবলের বেতনভাতাসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ছে। যদি এসব প্রকল্প কম গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে শুরুতেই এসব প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল বলেও মনে করেন তারা। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের জবাবদিহিতা অবশ্যই প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আমরা প্রায়ই প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মিটিং করছি। তাগাদা দিচ্ছি। কিন্তু ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতির কোনও উন্নতিও লক্ষ করা যাচ্ছে না। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সামনে কঠোর না হওয়ার বিকল্প নাই।

(ঢাকাটাইমস/৩১মার্চ/আরআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

নাথান বমের স্ত্রী কোথায়

চালের বস্তায় জাত-দাম লিখতে গড়িমসি

গুলিস্তান আন্ডারপাসে অপরিকল্পিত পাতাল মার্কেট অতি অগ্নিঝুঁকিতে 

সিদ্ধেশ্বরীতে ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু: তিন মাস পেরিয়ে গেলেও অন্ধকারে পুলিশ

রং মাখানো তুলি কাগজ ছুঁলেই হয়ে উঠছে একেকটা তিমিরবিনাশি গল্প

ঈদের আনন্দ ছোঁয়নি তাদের, নেই বাড়ি ফেরার তাড়া

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :