কুড়িগ্রামে সরকারি হাসপাতালে সার্জারি করেন রাঁধুনী, মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম
| আপডেট : ০৬ মে ২০২৩, ০৯:৪৪ | প্রকাশিত : ০৬ মে ২০২৩, ০৯:৩৯

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত সার্জারিতে অংশ নেন রাঁধুনী, মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ভয়াবহ এমন ঘটনা স্বীকার করে এর জন্য জনবল সঙ্কটকে দায়ী করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৫০ শয্যায় এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকের সঙ্গে সার্জারিতে অংশ নিয়েছেন অবসর নেওয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী রবি দাস। শুধু অপারেশন থিয়েটার নয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও তিনি নিয়মিত সার্জারির কাজ করে আসছেন।

তার মতো জরুরি বিভাগসহ অপারেশন থিয়েটারে নিয়মিত সার্জারির কাজ করেন রাঁধুনী, মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী। আর এ কাজ করে রোগীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী রবি দাস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি গত ১ ডিসেম্বরে ঝাড়ুদার পদ থেকে অবসর নিয়েছি। আমি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) ও জরুরি বিভাগে নিয়মিত কাজ করে আসছি। ডেসিং ও সেলাইয়ের কাজ করতে পারি। সাবেক অনেক চিকিৎসকের সঙ্গেও আমি কাজ করেছি।’

রাঁধুনী বাচ্চু মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার পদ রাঁধুনী হলেও আমি জরুরি বিভাগের সব কাজই পারি। এর আগেও আমি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, ফুলবাড়িসহ অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ড বয় হিসেবে কাজ করেছি। এই হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় না থাকায় জরুরি বিভাগ দায়িত্ব পালন করছি।’

মালি দেলোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি ফুলের বাগান দেখভালের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। জরুরি বিভাগেও পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। পাশাপাশি সেলাই ও ডেসিংয়ের কাজও করতে পারি।’

উপজেলার বৈদ্যের বাজারের বাসিন্দা শ্রী বাবলু চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার মায়ের বয়স প্রায় ৭৫ বছর। তার বাম পা একটু কেটে গিয়ে ইনফেকশন হয়ে পায়ে পচন ধরেছে। দুসপ্তাহের বেশি সময় ধরে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। রবি ভাই, দেলোয়ার ভাই আমার মায়ের পা ডেসিং করেন নিয়মিত। এজন্য আমি খুশি হয়ে তাদেরকে ডেসিং করার সময় কিছু বকশিস দেই যেন ভালো করে কাজ করেন।’

রোগী সুনিল চন্দ্র রায় বর্মন বলেন, ‘পারিবারিক কোন্দলের জেরে আমার উপর হামলা হয়। এতে করে আমার ডান হাতের আঙ্গুল ও বাম হাতের একটি আঙ্গুলে কোপ লেগে কেটে যায়। পরে আমি হাসপাতাল গিয়ে দেখি দেলোয়ার ভাই অন্য রোগীদের ডেসিং করছেন। আমার ভাঙা হাতে প্লাস্টার করেন ডা. বাপ্পি স্যার আর দেলোয়ার ভাই কাটা আঙ্গুলে সেলাই করেন।’

ছাটমল্লিক বেগ গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ডান পাশে কোমড়ের উপরে একটি টিউমার হয়েছে। এটা দেখানোর জন্য রবি ভাইয়ের কাছে এসেছি। তিনি কি পদে কাজ করেন সেটা তো বলতে পারিনা। এরআগেও তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছি।’

মেকুরটারি গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, ‘এই হাসপাতালে ঝাড়ুদার সেলাই করেন আবার তিনিই ওষুধ দেন। ভর্তি রোগীদের দেখতে নিয়মিত ডাক্তারও আসেন না। সঠিকভাবে রাজারহাট উপজেলার মানুষ চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছেন না।’

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এ হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় পদে কেউ না থাকায় চিকিৎসা সেবা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে থাকলেও জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জনবল সঙ্কটের কারণে রাঁধুনী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালি ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটারে কাজ করানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতালে ৩ জন ওয়ার্ডবয়ের বিপরীতে আছে একজন। তিনি বর্তমানে কর্মরত আছেন উমর মজিদ ইউনিয়ন সাব সেন্টারে।’

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সঙ্কটের চিত্র:

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ২৫ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়। কিন্তু জনবল সঙ্কট কাটেনি। এতে মেডিকেল অফিসার রয়েছেন ১০ জনের মধ্যে ৮ জন। নার্সিং সুপারভাইজার আছেন ১ জন। সিনিয়র নার্স ২৬ জন, মিড ওয়াইফ ৬ জন, ল্যাব টেকনিশিয়ান ২ জন, প্রধান সহকারি ১ জন, অফিস সহায়ক ৩ জন, ফার্মাসিস্ট ২ জন, পরিসংখ্যান ১ জন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ২ জন, এ্যাম্বুলেন্স চালক ১ জন, মালি ১ জন, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ৭টি পদে মধ্যে আছেন ৫ জন, পরিচ্ছন্নকর্মী ৫টি পদের মধ্যে আছেন ৩ জন।

আরও পড়ুন: শূন্য হাতে ফিরছেন জেলেরা, মিলছে না ইলিশ

এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারি ৩০টি পদের মধ্যে রয়েছেন১৭ জন, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৬ পদের মধ্যে আছেন ৪ জন, ওয়ার্ড বয় ৩টি পদের মধ্যে আছেন ১ জন। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেন্টাল চিকিৎসক, এমটি ডেন্টাল, ইপিআই, রেডিও গ্রাফার, কার্ডিওগ্রাফার, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপার, জুনিয়র মেকানিক্যালগুলো শূন্য রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৬মে/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :