সংকট মোচন

ড. নেয়ামত ভূঁইয়া
| আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ১৬:৫৬ | প্রকাশিত : ১৪ মে ২০২৩, ১৬:৫৩

আপদে-বিপদে পড়লেই নাকি মানুষকে চেনা যায়,

আমার দেখি নেই হেরফের যে কোন অবস্থায়।

নিজেকে চেনার প্রজ্ঞাই নেই পরকে চিনবো কী আর!

নিজের মর্মবেদনার অস্ত্রে নিজে হই সংহার।

মানুষ চেনার কসরত করে সময় কাটানো বৃথা,

মানব সৃষ্টির আদিতেই আছে ভায়ে ভায়ে শত্রুতা।

সে পরম্পরায় চলছে জীবন; চিরায়ত রেশারেশি,

সহমর্মিতা যতটুকু মিলে; সেটাই বরং বেশি।

‘সকলের তরে সকলে আমরা’ কোথায় সে নীতিকথা?

জীবনের প্রতি পরতে পরতে দেখি এর অন্যথা।

মানুষ কেন যে আত্মকেন্দ্রে ঘুরপাক খায় নিত্যদিন!

পরের হিতের কৃত্য না করে বাড়ায় পাতকী আত্মঋণ!

ব্যতিক্রমের বৃত্তে রয়েছে কিছু কিছু মহাপ্রাণ,

নষ্ট সমাজে তাঁরাও পায় না যথাযথ সম্মান।

জন্মও একা, মৃত্যুও একা, জীবন চলাও একা,

অকারণে কেন সহযাত্রির পথ চেয়ে বসে থাকা!

পথও তোমার,পা-ও তোমার,কষ্টও তোমার একার,

বিপদে তোমার নিজের ছায়াও সঙ্গ দেবে না সে তার।

সময় যখন অনুকূলে তখন পাই বন্ধুর ছায়া,

নিজের স্বার্থ হাসিল হলেই রহস্যময় হাওয়া।

সংকটে যদি বন্ধুকে ডাকো সকাতরে বারবার,

কর্পুর হয়ে উড়ে যায় সখা,পলকে পগারপার।

কেউ নেই সেই সুহৃদ সখা যে নেবে তোমার দু:খের ভার?

মর্মবোধে এগিয়ে এসে সে হবে যে দু:খের অংশিদার?

এই জগতের রীতির সঙ্গে তোমার নীতির নেই যে মিল,

দোসর পাবে,তবে তারা হবে ফাগুন দিনের সঙ কোকিল।

তোমার নিয়তি লিখেছে এ লেখা ‘তুমি শুধু দিয়ে যাবে’,

দুর্দিন এলে বন্ধুরা সব নিজ রূপ বদলাবে।

বঁধুর বিপদে সাধ্যের সীমা ছাড়িয়ে হয়েছো সহায়,

প্রতিদান চেয়ে ভুগবে কেবলই মর্মের বেদনায়।

সহায়তা তুমি যেদিন দিয়েছো সেদিনই শত্রু কিনিছো,

বুঝে নেবে ঠিক তোমার ক্ষতির পাত্রকে তুমি চিনেছো।

এই কথা যদি মানো,

জীবনের সকল কঠিন পাথরে নিজেরই কুঠার হানো।

পরের কুঠার আদলেই কুঠার,এর মাঝে নেই ধার,

বাহারি কুঠার বন্ধুত্বের বাহ্যিক হাতিয়ার।

তোমার কুঠারে দিয়ে রেখো ঘামের ধারালো তীক্ষ্ণ শান,

বুঝবে তখন কুঠারে কুঠারে আসলে কী ব্যবধান!

কোনো মাল্লার ভরসা না করে সাঁতরে যে করে সাগর পাড়,

বলো দেখি সেই নির্ভীক মাঝির সঙি-সাথির কী দরকার?

মানুষের উপর বিশ্বাস তবু রাখা চাই অবিচল,

নইলে সৃষ্টির সেরা জীব হবার ধারণাই নিষ্ফল।

মানুষকে তুমি ভলোবেসে যাবে,চাইবে না বিনিময়,

এই নীতিতেই তোমার কর্ম হবে যে মহিমাময়।

প্রসন্ন হয়ে ঈশ্বরই নেবেন তোমার দু:খের ভার,

তাঁর করুণার অমীয় ধারায় পেয়ে যাবে উদ্ধার।

সংকটমোচন করে না কখনো তাবিজ-কবজ, মন্ত্রবল,

প্রবল ইচ্ছাশক্তিই আসল অভেদ্য সম্বল।

সংকট হোক পাহাড় সমান,তবু কারো দয়া মাগবে না,

বান্ধব এসে তড়াবে তোমাকে; মিছে সে আশায় থাকবে না।

বুকভরে রাখো অমিত সাহস,মুশকিল হোক যতো প্রবল,

জগতকে জানাও লড়াইয়ের মাঠে নও তুমি নির্বল।

বীরত্ববলে প্রতিকূলতাকে করো উদাত্ত আহ্বান,

যুদ্ধক্ষেত্রে রচিবে যে ওর চিতা বা গোরস্তান।

বিপদাশংকা হোক বিধ্বংসী,হোক তা যতোই প্রকট,

নিজের দেহ ও মনের বলেই জয় করো সংকট।

বিপদের মুখে বুক উঁচিয়ে একাই দাঁড়াও উচ্চ শির,

হারলেও তুমি মহাযোদ্ধা,আখেরে তুমিই বিজয়ী বীর।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :