বহুল প্রত্যাশিত সোনার বাংলা এভিনিউ ঘিরে মানুষের বাধভাঙা উল্লাস
শরীয়তপুরের সখিপুরের উত্তর তারাবুনিয়ায় প্রায় ৫৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর ডান তীর ঘেঁষে সুরেশ্বর চরমোহন থেকে উত্তর তারাবুনিয়ার শেষ সীমান্ত পর্যন্ত বহুল প্রত্যাশিত সোনার বাংলা এভিনিউয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।
শনিবার সারাদিন অঝোর বৃষ্টি হচ্ছিল। তারপর ও বহুল প্রত্যাশিত সোনার বাংলা এভিনিউ ঘিরে নদীর পাড়ে উপস্থিত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। শত শত জেলেরা নদীর পাড়ে নৌকা সাজিয়ে ঢাক ঢোল বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে করতে সোনার বাংলা এভিনিউতে এসে হাজির হয়েছেন। আজ যেন তাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। কিশোর কিশোরী ছাত্র ছাত্রী যুবক যুবতী বৃদ্ধ বৃদ্ধা সহ হাজার হাজার মানুষকে সাজ সজ্জা করে আনন্দ উল্লাস করে সারা দিন কাটাতে দেখা দিয়েছে।
নদীর পাড়ে বাসিন্দা জয়তুন নেছা ঢাকা টাইমসকে বলেন, কি আর কমু। আনন্দে আমার চোখ দিয়া পানি পড়ে। নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমাগো ঘর বাড়ি সব ভাসাইয়া লইয়া গেছে। আগে নদী ভাঙ্গতেই দেখছি। ভাঙ্গার থেকে বাচাইতে কাউরে আগাইয়া আইতে দেহি নাই। এনামুল হক শামীম এমপি মন্ত্রী হইয়া নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে বাচাইতে বেরিবাধ কইরা দিতেছে। আমরা এই নদীর পাড়ের মানুষ আল্লাহর কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আর আমাগো মন্ত্রী শামীম সাহেবের জন্য দোয়া করি।
স্কুল পড়ুয়া নাফিজা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি যে স্কুলে পড়ি। সেই স্কুল নদীতে কয়েকবার ভাঙ্গছে।শুধু স্কুলই না আমাদের বাড়ি ও নদীতে কয়েকবার ভাঙ্গছে। আজ আমাদের মাননীয় পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি মহোদয় আমাদের নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচাতে সোনার বাংলা এভিনিউর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বেরিবাধ করে দিচ্ছেন। এবার বুঝি নদী আর ভাঙ্গবে না। দোয়া করি প্রধানমন্ত্রীর জন্য ও আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের জন্য।
জামে মসজিদের ইমাম শফি হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, পদ্মা নদী এক আতঙ্কের নাম। পদ্মা নদীকে বলা হয় সর্বনাশা পদ্মা। এনামুল হক শামীম এমপি হইয়াই সবার আগে বেরিবাধ দিয়া নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে আমাদের বাঁচাইছে। নদীর ডান তীর ঘেঁষে সুরেশ্বর চরমোহন থেকে উত্তর তারাবুনিয়ার শেষ সীমান্ত পর্যন্ত আমাদের দীর্ঘ দিনের বহুল প্রত্যাশিত সোনার বাংলা এভিনিউয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন আমাদের মন্ত্রী এনামুল হক শামীম সাহেব।এটা ছিল আমাদের জন্য শুধুই স্বপ্ন। তিনি এখন তা বাস্তবে পরিণত করেছেন। শেখ হাসিনায় প্রধানমন্ত্রী বলেই এনামুল হক শামীম এমপি মন্ত্রী হইছে বলেই আমরা নদী ভাঙ্গার হাত থেকে বাঁচতে বেরিবাধ পেয়েছি,বিদ্যুৎ পেয়েছি। আমরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ছিলাম। এখন আমরা খুব খুশি।
৮৫ বছরের বৃদ্ধ জিলানী খা ঢাকা টাইমসকে বলেন,বাবারে আমার এই বুড়া বয়সে বেরিবাধ দেইখা যাইতে পারমু জীবনেও কল্পনা করি না। নদীতে বিলীন হইয়া গেছে আমাগো বাপ দাদার আমলের বসতভিটা।
আমি তো দূরের কথা আমার পোলাপান ও যে বেরিবাধ দেইখা যাইতে পারবো ভাবতেই পারি নাই। শামীম সাহেবে বেরিবাধ করবো শুইনা অসুস্থ শরীর নিয়া ছুইটা আইছি নদীর পাড়ে। রাস্তা দিয়া আইতে কালে দেহি রাস্তা দিয়া হাজার হাজার পুরুষ মহিলা আমার মতো বয়স্ক মানুষ ও হাইটা হাইটা নদীর পাড়ে আইতেছে।শামীম সাহেব আমাগো নিয়া খুব ভাবে।আমাগো বেরিবাধ কইরা দিতেছে যা আমি কখনোই ভাবি নাই। এহন মইরা ও শান্তি পামু। শেখ হাসিনার লাইগা দোয়া করি। একজন যোগ্য মানুষ এনামুল হক শামীমকে এমপি মন্ত্রী বানাইয়া আমাগো সেবা করতে পাঠাইছে। শামীমের লাইগাও দোয়া করি। আমরা চাই শামীমে আবারও এমপি মন্ত্রী হোক।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম এমপি ঢাকা টাইমসকে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই ১৪ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের উন্নয়ন করেছেন। এই সময়ে প্রচুর উন্নয়নমূলক হয়েছে। বারবারই প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে, জননেত্রী শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার বিকল্প নাই।
এজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে শরীয়তপুরকে বাংলাদেশের মধ্যে একটি অন্যতম উন্নত সমৃদ্ধ জেলায় রূপান্তরিত করতে কাজ করে চলছি। শরীয়তপুরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগসহ অবকাঠামোগত সকল উন্নয়ন করতে বদ্ধপরিকর। শরীয়তপুরে ফোর লেনের কাজও এগিয়ে চলছে। শরীয়তপুরে রেল লাইন হচ্ছে। শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন হয়েছে। মেঘনা সেতুও করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নড়িয়ায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হচ্ছে। তাই বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা ও নৌকার প্রশ্নে কোনো আপোস করা যাবে না।
পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব নাজমুল আহসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, একজন উপমন্ত্রী এভাবে পুরো চিত্র পালটে দিবে যা ভাবাও যায় না। পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি মন্ত্রী হওয়ার পরে বেরিবাধ নির্মান করে দেন। একটি বাড়িও যেন নদীতে না ভাঙ্গে সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আজ সোনার বাংলা এভিনিউর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। এখানকার হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘ দিনের বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ হুমায়ুন কবির মোল্যার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মানিক সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক নুরুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পশ্চিমাঞ্চল) মো. রমজান আলী প্রামাণিক, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিমাঞ্চল) আব্দুল হেকিম। বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার, সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান সিকদার প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এআর)