ঝোপজঙ্গল ছেড়ে ১৭ বছর পর লোকালয়ে এলেন মুজিবুর

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৩, ১৬:২২| আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১৬:৫৭
অ- অ+

সৎ ভাইদের কাছ থেকে পিতার পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ না পেয়ে গত ১৭ বছর আগে একটি ঝোপজঙ্গলে পলিথিন দিয়ে খুপরি করে বসবাস শুরু করেন মজিবুর। কখনো অনাহারে কখনো অর্ধাহারে কখনো বা শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটত তার। ভাইদের মারধর ও অত্যাচারের শিকার হয়ে ঘর ছেড়ে এক বুক অভিমান নিয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এ খুপরিতে। এখন তার বয়স ৬০ এর কাছাকাছি। এক চোখে সমস্যা। মুজিবুর গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়ার মৌলভীবাড়ির মৃত লাল মিয়ার পুত্র।

ঝোপজঙ্গলে খুপরি ঘরে ১৭ বছর ধরে বসবাস এ খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সোমবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম এর নির্দেশনায় দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিগার সুলতানা মুজিবুরের খোঁজে মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়ার মৌলভীবাড়ির বিশাল একটি জঙ্গলের ঝোপ-বাঁশঝাড় পেরিয়ে সেই খুপরি ঘরে যান। তিনি তার শারীরিক খোঁজখবর নেন। মুজিবুর অসুস্থ হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন।

সোমবার দুপুরে সেই ঝোপজঙ্গলের ভিতরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পলিথিনে মোড়ানো ছাউনির একটি ছোট খুপরিতে বসে আছেন ৬০ বছর বয়সী চিরকুমার মুজিবুর। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসার খবর পেয়ে খুপরি ঘর থেকে নিচু হয়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। এরপর কান্নাজড়িত কণ্ঠে জীবনের গল্প শোনালেন মুজিবুর।

গল্পের শুরুতে মজিবুর বলেন, আমার আব্বা রেলওয়েতে চাকরি করত। আব্বার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আমার মাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আমাদের সুখের সংসার ছিল। এ সংসারে আমিই একমাত্র ছেলে। এরপর বাবাও মারা যায়। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি কখনোই তাদের সৎ ভাই ভাবতাম না। আমি তাদের লেখাপড়া করিয়েছি। আজ তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আমাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।

আজ ১৭ বছর এ জঙ্গলে পলিথিন টাঙ্গিয়ে খুপরি ঘরে বসবাস করছি কেউ আমার খোঁজ নিতে আসেনি। আমার পিতৃসম্পদ থেকে তারা আমাকে বঞ্চিত করেছে। এসময় তিনি খুপরি ঘরে থাকা পুরাতন কিছু দলিলপত্র দেখিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, এ জঙ্গলে সাপ, বিচ্চু, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রাণী বসবাস করে তাঁরা হিংস্র হলেও কোন দিন আমার ক্ষতি করেনি, মানুষ যতটা আমার ক্ষতি করেছে, তাই রাগ ক্ষোভে মানুষ প্রাণী থেকে দূরে এসে এই হিংস্র প্রাণীদের সঙ্গে বসবাস করছি। সহায় সম্বল নেই, থাকার ঘর নেই তাই বিয়েও করতে পারিনি। মুজিবুর রহমান আরও বলেন, প্রথম সংসারে দুই ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সংসারে আমি মুজিবুর রহমান। সৎ ভাই ফরিদুল পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন।

আমি কাঁচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে জহিরুলকে বিএ পাস করাই। সেই ভাই-ই পৈতৃক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেতে চাই। তবে গ্রামের লোকজন বলছে ভিন্ন কথা। তাঁরা এ প্রতিবেদককে জানায়, মজিুবুর একটু দরবেশ প্রকৃতির মানুষ। সেই বিভিন্ন ওরস ও মাজারে দিন কাটাত। সেই বিভিন্ন লোকজন নিয়ে বাড়িতে মাদক সেবনের আড্ডা জমাত যার কারণে ভাইয়েরা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে বাড়ি ছেড়ে যেতে বলেন, কিন্তু তাড়িয়ে দেয়নি। মজিবুরই রাগে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বের হওয়ার কয়েক বছর পর দেখি সে পার্শ্ববর্তী ঝোপজঙ্গলে খুপরি ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করে। যে জায়গায় সে বসবাস করছে সে জায়গাটাও তাঁর।

মজিবুরের চাচি সুফিয়া বেগম বলেন, পৈতৃক সম্পত্তি এখনো ভাগ-বাটোয়ারা হয়নি। তাঁর সম্পদ যেভাবে ছিল সেভাবেই আছে, সে নেশা ছেড়ে ভালো হয়ে বাড়ি ফিরলে তাকে সব বুজিয়ে দেওয়া হবে। মজিবুরের ভাতিজা আল আমিনও একই কথা বলেন। আল আমিন বলেন, চাচায় বিভিন্ন মেয়ে ছেলে নিয়ে বাড়িতে মাদকের আড্ডা বসাতেন। আমাদের ধার্মিক পরিবার, সে কারণে তাকে এসব ছাড়ার জন্য প্রায় বলা হতো কিন্তু তিনি এসব শুনতেন না, যার কারণে তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে কিন্তু বের করে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশক্রমে সোমবার (২৯ মে) আমি সরেজমিনে মজিবুরের খুপরি ঘরে যাই। সে অসুস্থ থাকায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ব্যবস্থা করি। এছাড়াও তাকে ঘর তোলার জন্য টিন বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯মে/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা