আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে: মির্জা ফখরুল

আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

এদিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং দোয়া করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আরও পড়ুন>>দুর্নীতি মামলায় আমানের ১৩ বছর ও টুকুর ৯ বছর কারাদণ্ড বহাল রাখলেন হাইকোর্ট

আরও পড়ুন>>বাংলাদেশ ভয়ংকর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে: রিজভী

আরও পড়ুন>>বিএনপি বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত করে অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়: ওবায়দুল কাদের​

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ একদলীয় শাসনের দিকে যাত্রা করেছে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে তাদের পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আজকে সেই সময়ে আমরা আমাদের এই মহান নেতার শাহাদতবার্ষিকী পালন করছি। আমাদের সমগ্র জাতির কাছে তা প্রাসঙ্গিক।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই মহান নেতা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পুরো জাতি যখন অসহায়, তখন পুরো জাতিকে দিশা দেখানোর জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যখন দেশ রাজনৈতিক ব্যর্থতায় চলছিল তখন এই মহান মুক্তিযোদ্ধা দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি পুরো বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, তার সহধর্মিণী গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে এই সরকার। তার সন্তান তারেক রহমান আজ প্রবাসে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ৩৫ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও তাদেরকে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সময়ে আমাদের এই নেতার শাহাদতবার্ষিকী নতুন করে প্রেরণা জোগাবে। ’

বিএনপি ‘হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র’ পুনরুদ্ধার এবং একটি ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার’ শপথ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমরা এই শপথ এখান থেকে নিয়েছি।’

বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে পৃথক দুর্নীতি মামলায় সাজার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মামলাগুলোর রায়ে বোঝা যায় সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আমাদেরকে দমন করতে চায়। তারা নানাভাবে আমাদের আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চায়। এ আন্দোলন এক দিনের নয়, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ মামলার রায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি এটা একটা ফরমায়েশি রায়। এ ধরনের রায় দিয়ে কোনো আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। জনগণ তাদের অধিকার অবশ্যই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আদায় করবে। ’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের দাবি তাদের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই অবস্থান থেকে এক মুহূর্তের জন্য আমরা সরে দাঁড়াব না।’

এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘লাল সবুজের পতাকায়, জিয়া তোমায় দেখা যায়’, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘জিয়া তোমার স্মরণে ভয় করি না মরণে’, ‘জিয়া আমার চেতনা, জিয়া আমার বিশ্বাস’ বলে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান উমর বীর উত্তম, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খানসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০মে/জেবি/এফএ)