আল্লাহর ওয়াস্তে দেশটাকে ধ্বংস করার তালে থাকবেন না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৯ জুন ২০২৩, ২৩:২৩ | প্রকাশিত : ১৯ জুন ২০২৩, ২২:৫৪

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশে কোনো লবিস্ট (তদবিরকারী) নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। দেশের মঙ্গলের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘লবিস্ট বাদ দেওয়া হয়েছে। বরং যারা লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছেন তাদের বলছি, আল্লাহর ওয়াস্তে দেশটারে ধ্বংস করার তালে থাকবেন না।’

সোমবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এসব বলেন।

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা -এই পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট ‘ব্রিকস’-এ আমন্ত্রণ পেলে বাংলাদেশ যোগ দিতে আগ্রহী বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে তারা আমন্ত্রণ জানালে আমরা অবশ্যই যোগ দেব। ব্রিকস নেতারা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়াসহ আটটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হয়েছে। আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে আরও অর্থ চাই। যদি তারা (ব্রিকস) আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানায়... আমি মনে করি আমরা এটিকে স্বাগত জানাব।’ এর আগে জেনেভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হতে পারে।

মোমেন সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. নালেদি পান্ডোরের আমন্ত্রণে ফ্রেন্ডস অফ ব্রিকস পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। সেখানে তিনি বলেছেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিভিন্ন দেশ আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

ব্রিকস নেতারা ২২-২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জোহানেসবার্গে স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে (এসসিসি) শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে।

মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোন দেশ কোথায় কী বিষয়ে আলাপ করবে, সেটা তাদের বিষয়। ওই দেশের কে কী নিয়ে আলাপ করবেন, এটা নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা কেন? ভারতের দেশপ্রেম অত্যন্ত পরিপক্ব ও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। দেশটি পরিপক্ব একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তারা যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই আলাপ করবেন। ওখানে আমার (বাংলাদেশ) ওকালতি করার প্রয়োজন নেই।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২১ জুন নিউইয়র্ক পৌঁছাচ্ছেন। পরদিন হোয়াইট হাউসে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সেখানে দুই নেতার আলোচনায় সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসা নীতির বিষয়ে কথা হবে বলে দিল্লি ও ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে দেশটির কংগ্রেস সদস্যদের দেওয়া চিঠির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চিঠিতে কিছু তথ্যের গরমিল আছে, ভুল আছে। মিথ্যা তথ্য আছে। যাঁদের লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা মিথ্যাচার করছেন। যেমন একটা মিথ্যা হলো তারা বলছেন, গত কয়েক বছরে শেখ হাসিনার সরকারে হিন্দুরা নির্যাতিত হয়েছেন। ৬০ শতাংশ হিন্দু বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছেন। এটা তো সত্য নয়। খ্রিষ্টানদের ওপর অত্যাচার হয়েছে। এটা তো সত্য নয়। এসব বিষয় গণমাধ্যমে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।

তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের লবিস্ট নেই। আমরা বাদ দিয়েছি; বরং যারা লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছেন তাদের বলছি, আল্লাহর ওয়াস্তে দেশটারে ধ্বংস করার তালে থাকবেন না।’

কারও নাম উল্লেখ না করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে লবিস্ট (তদবিরকারী) নিয়োগকারীদের প্রতি দেশে কীভাবে আরও জ্বালানি পাওয়া যায়, কীভাবে কর্মসংস্থান বাড়ানো যায়, কীভাবে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়, এ জন্য লবিস্ট নিয়োগের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘তাতে দেশের মঙ্গল হবে। দেশ তো আমার আপনার সবার। সুতরাং দেশকে ধ্বংস করে লাভ নেই। যারা লবিস্ট নিয়োগ দেবেন, তারা যেন দেশের মঙ্গলের বিষয়টি মাথায় রাখেন।’

তারা চিঠি লিখতে পারেন, উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, মিথ্যা তথ্য দেবেন কেন? তিনি বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষক। সারা জীবন শিক্ষকতা করেছি। আমার দুঃখ লাগে, যখন দেখি মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি। যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি, ‘তোমরা তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখো। কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা। তারপর সিদ্ধান্ত নাও। এটি না করলে ভুল হবে।” আমার শিক্ষার্থীদেরও বলেছি, “সত্য-মিথ্যা যাচাই করো।”’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা কোথায় চিঠি-চালাচালি করছেন, সেটা তাঁদের বিষয়। আমাদের বিষয় নয়। সুধী সমাজ এমন ভুল তথ্য দিয়ে কীভাবে চিঠি দেয়?’ এগুলো অপরিপক্ব হাতের চিঠি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন করব। নির্বাচন হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। আমরা সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশা করব, যত দল আছে, সবাই প্রতিজ্ঞা করবে যে তারাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাইবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :