রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের চাঙ্গা হচ্ছে সন্ত্রাসী গ্রুপ

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ জুন ২০২৩, ১৬:৪৯

কক্সবাজারের টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রিত অনেক রোহিঙ্গা মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী কান্ডে জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে নিজেদের আধিপত্য ও মাদক কারবার টিকিয়ে রাখতেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আরসা,আরএসও,নবী হোসেন গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপ, তৈয়ব গ্রুপসহ বিভিন্ন নামে গ্রুপ করে গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসী বাহিনী। এদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে দেশি-বিদেশি ভারী অস্ত্রশস্ত্র।

উখিয়া-টেকনাফের অন্যান্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রায়সময় খুনোখুনির ঘটনা ঘটলেও গেল দু'য়েক বছরধরে টেকনাফের ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব সন্ত্রাসীদের ঠাঁই না হওয়ায় খুনোখুনির তেমন ঘটনা ঘটেনি। ফলে ২২ নম্বর ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অনেকদিন শান্তিতে ছিলেন।

ফের ২২ নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গা তৈয়বের নেতৃত্বে শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসের অর্থায়নে নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। নতুন করে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করছে বলেও জানা গেছে। এতে করে ওই ক্যাম্পে নতুন করে আতংক বিরাজ করছে বলে অভিযোগ সাধারণ রোহিঙ্গাদের।

সাধারণ রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, তৈয়বের নেতৃত্বে গঠিত নতুন সন্ত্রাসীদল সক্রিয় হতে পারলেই ফের শুরু হবে মারামারি, চাঁদাবাজি, এমনকি খুনোখুনির মতো জগন্য ঘটনাও।

রোহিঙ্গারা বলেন, তারা জানেন না, এসব সন্ত্রাসীরা কোন সময় কী করে! এসবের প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, তৈয়ব গ্রুপ এখনো ক্যাম্পে সক্রিয় হতে পারেনি। এখন থেকেই শুরু করেছে হুমকি-ধমকি। কয়েকজনকে মারধর করেছে। তারা আগে থেকে মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতো। মুক্তিপণ না পেলে প্রচুর মারধর করতো, এমনকি মেরেও ফেলতো। সেই সন্ত্রাসীরা এখন ২২ নম্বর ক্যাম্পে শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী নবী হোসেনের অর্থায়নে আবু শামার ছেলে তৈয়বের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন করে আধিপত্য বিস্তারে কাজ করছে।

আমরা এখন ভয়ে আছি। নিউজে আমাদের নাম দিলে তারা আমাদেরকে মেরে ফেলবে।

তৈয়বগ্রুপের হাতে অপহৃত এক রোহিঙ্গা বলেন, তারা আমাকে নিয়ে গেছিল। রশি দিয়ে বেঁধে টাকার জন্য মারধর করেছে। তবে রশি খুলে কৌশলে পালিয়ে আসতে পেরেছি বলেই তারা আমার বড়ধরনের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিচার চাই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইতোমধ্যে তৈয়ব নিজের প্রকৃত নাম গোপন করে বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরি করেছে। রোহিঙ্গাদের দেয়া ইউএনএইচসিআর-এর আইডিতে তার নাম রয়েছে মো. তৈয়ব। তবে বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্টে নাম পরিবর্তন করে মো. খালিদ হোসেন দিয়েছেন এবং চট্টগ্রাম হালিশহর উপজেলার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ঠিকানা ব্যবহার করে এনআইডি করেছে এই রোহিঙ্গা তৈয়ব।

টেকনাফের সচেতন নাগরিক ও কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক এহ্সান উদ্দিন বলেন, কিছু এনজিও ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মিলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে নিরুৎসাহিত করছে। যেসব রোহিঙ্গা এনআইডি করছে, তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই,তাই তারা সন্ত্রাসী গ্রুপ করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে।

এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন,আবু শামার ছেলে তৈয়বের নেতৃত্বে যে গ্রুপটি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পে তৈরি হচ্ছে,তাদের দ্রুত দমন করা না গেলে ২২ নম্বর ক্যাম্পে ফের অশান্তি শুরু হবে। দ্রুত তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ওই রোহিঙ্গা নেতা।

জানতেই চাইলে অভিযুক্ত তৈয়ব প্রথমে প্রতিবেদকের সাথে বসে কথা বলার প্রস্তাব দেন। পরে আবার নিজে ফোন দিয়ে সব অভিযোগ বানোয়াট, মিথ্যা বলে জানান। এনআইডি কার্ড ও নবীন হোসেন থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আর কোনো কথা নেই, এটাই আমার শেষ কথা বলে তাড়াহুড়া করে ফোনের লাইন কেটে দেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত ১৬ এপিবিএনের উপ অধিনায়ক (এসপি) জামাল পাশা বলেন,এনআইডির বিষয়টি দেখবে ক্যাম্প ইনচার্জ। এছাড়া সন্ত্রাসী তৎপরতার যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে, এধরনের তথ্য যদি পাই, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবো।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :