বঙ্গবন্ধু প্রণীত চার মৌলিক আদর্শে স্কাউটদের অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান উপাচার্যের

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ২০:০৩ | প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৫৬

বঙ্গবন্ধুর প্রণীত চার মৌলিক আদর্শে স্কাউটসদের অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, ব্যাডেন পাওয়ালের আদর্শে স্কাউটস উজ্জীবিত। কিন্তু বাংলাদেশ স্কাউটস ব্যাডেল পাওয়ালের আদর্শের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত চারমূলনীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে হবে। সেটিই বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চলের আদর্শ হওয়া আবশ্যক।’ বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজের মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্কাউটস রোভার অঞ্চল আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

দেশের প্রখ্যাত এই সমাজচিন্তক বলেন, ‘হাজার বছরের পথ চলায় বাঙালির নিষ্পেষণ, বঞ্চনা, নিগ্রহ, নিপীড়ন ও না পাওয়ার অতৃপ্তির যে জায়গা তৈরি হয়েছিল। বাঙালি সত্তায় স্বাধীনতার অতৃপ্তি এবং না পাওয়ার হাজার বছরের বেদনা ছিল। একটি আদর্শ জাতীয়তাবাদী ভাবনায় জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির আকাঙ্খায় তাড়িত ছিল বাঙালি। সেই তাড়না থেকে মহামুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন নিজস্ব বিপ্লবী ভাবনায়। যা ছিল পরিপূর্ণভাবে বাঙালির আত্মবিকাশের পাথেয়। সাড়ে সাতকোটি বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঠিক করেছিল সমাজাদর্শ। সংবিধানে তা গ্রথিত হয়। প্রণীত হয় জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।’

দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র-এই চারটি মূলনীতিকেও ধ্বংস করা হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্রের বদলে সামরিক শাসন, ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে ধর্মভিত্তিক সমাজ ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে বিলীন করে একটি পুঁজিবাদী সমাজের বিকাশের মাধ্যমে লুটেরাদের অর্থনীতি প্রতিস্থাপন করা হয়। এর মধ্যদিয়ে মূলত ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের মৌলিক আদর্শকে হত্যা করা হয়। আর যখন ওই চার মূলনীতির উপর হাত পড়েছে আমার সন্তান জঙ্গি হয়েছে, পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে সামরিক শাসকের বুলেটে বাংলাদেশ বিদীর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ হেঁটেছে পাকিস্তানের পথে।’

স্কাউটসদের মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মোৎসর্গকে বুকে ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘ভাবুন, একজন মানুষ তাঁর জীবন উৎসর্গ করছেন, গুলির সামনে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে তিনি শহিদের জীবনকে বরণ করে নিচ্ছেন। কোনো প্রাপ্তি তার মধ্যে ছিল না। শুধু চাওয়া বাংলাদেশের আগামীর পথ চলা সুন্দর হোক। আগামীর প্রজন্ম আরও চমৎকার করে বেড়ে উঠুক। এমনিভাবে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন নির্যাতন সয়ে একটি মানচিত্র এঁকেছেন। অত:পর আমরা পবিত্র ভূখণ্ড পেয়েছি। সেই ভূখণ্ডে যখন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু হয়। পূজামণ্ডপে হামলা হয়। আমাদের উচ্চারণে, সংগীতে, সংস্কৃতি চর্চায় ভুল পথে ধাবিত হই- তখন শহিদের আত্মা কষ্ট পায়।’

স্কাউটসদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘যে কেউ তোমাদের ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে, ভুল শেখাতে পারে তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পক্ষে, আমাদের মৌলিক আদর্শের পক্ষে, আমাদের চার মূলনীতির পক্ষে মেরুদণ্ড সোজা করে প্রতিবাদ করে নিজের আত্মশক্তিকে বৃদ্ধি করবে। তোমার নিজের স্বার্থে ভুল পথ থেকে বের হয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের স্বার্থে, পতাকার স্বার্থে। তাহলেই আমাদের দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জল থাকবে চিরকাল। তার জন্য সকলে সম্মিলিতভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করি। আমাদের পথ চলা অবিরাম সুন্দরতম হোক। শ্রেষ্ঠত্বে ও সৃজনশীলতায় ভরে উঠুক।’

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার পাশাপাশি মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালি আত্মমর্যাদায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। অত্যাচার নির্যাতন কোনো কিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু মাত্র ৩ বছর ৭ মাস সময় পেয়েছিলেন। এতো ত্যাগ- তিতিক্ষা সহ্য করে দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। আর তাঁকেই কিনা হত্যা করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে নির্বংশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু দুই কন্যা বিদেশে থাকায় সেটি তারা করতে পারেনি। একই ঘাতকেরা ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ওই হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছেন। কী অভাগা জাতি আমরা।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে যে বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিচ্ছি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছি, সমুদ্রসীমা জয় করেছি- এসবের ভিত্তি রচনা করে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। কুদরত ই- খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষার রূপরেখা তৈরি করে গেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু অসম্ভব একজন সাহসী এবং আপোষহীন মানবতাবাদী মানুষ ছিলেন। সংস্কৃতি, ভাষা এবং আমাদের কৃষ্টির প্রতি বঙ্গবন্ধু আকৃষ্ট ছিলেন। ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিও বঙ্গবন্ধুর ঝোঁক ছিল।’

আর্ত মানবতার সেবায় স্কাউটস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আর্ত মানবতার সেবায় স্কাউটসরা যেকোনো সময় দাঁড়িয়ে যায়। এটি অসম্ভব ভালো কাজ। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। আপনারা একেকজন রোভার। আপনাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ সকল কাজে দক্ষ হতে হবে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক চর্চা আরও বেশি বাড়াতে হবে। এটি খুবই অপরিহার্য। স্কাউটস আন্দোলন আরও বেশি শক্তিশালী ও বিস্তৃত হোক।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদ, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ, ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক মুহম্মদ এনামুল হক, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অধ্যাপক এম এ বারী। এছাড়া আলোচনা সভায় বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও স্কাউটসের সদস্যসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভার আগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।

(ঢাকাটাইমস/২৪আগস্ট/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

তাপপ্রবাহের ঝুঁকির মধ্যেই খুলল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বেরোবিতে উৎসবমুখর পরিবেশে ‘এ’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

কুবিতে গুচ্ছ পদ্ধতির ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা সম্পন্ন, উপস্থিতি ৮৭ শতাংশ

এসএসসি ও সমমানের ফলাফল মে’র দ্বিতীয় সপ্তাহে

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মাঝে হাবিপ্রবি সমকাল সুহৃদের শরবত বিতরণ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ক্লাস শুরু রবিবার

কুবিতে ১৪৪ ধারা জারি

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এ ভর্তি ফিতে শতভাগ ছাড়

দুপুরে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভিড় পরীক্ষার্থীদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :