হাবিব চিরপ্রস্থান করলে বড় অবেলায়!

সোহেল সানি
| আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ২০:১৯ | প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৯:১৯

ছবির ছড়াছড়ি।

ভাবছিলাম- জন্মদিন বুঝি।

বলছি-আমার স্নেহান্ধ প্রিয় হাবিবের কথা। জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার হাবিবুর রহমান খানের কথা। ওর সঙ্গে আমার রাজনৈতিক আদর্শগত বৈপরীত্য একটা ছিল।কিন্তু সে বেড়াজাল ছিন্ন করে চলার দারুণ সক্ষমতাটা ছিল ওর। দীর্ঘদেহের অধিকারী।

কালো বর্ণের উজ্জ্বলতা আর সুবিশাল মুখাবয়বে লেপ্টে থাকা অকৃত্রিম হাসি। কী অপূর্ব দুইয়ের মিশেল। যেন 'পুরুষোত্তম' এক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ।যাতে ভর করে জ্বলে উঠত প্রাণপ্রদীপ। দানাবাঁধা এক রাশ হাসি ছড়িয়ে দিত ভালবাসার মূর্ছনা। ফলশ্রুতি- তোমাকে প্রিয়তম করে তুলছিল সতীর্থ-সহকর্মী ও আমার কাছেও।

উদারমনা হাবিব কেন পারলে না -আমার মতো করে প্রায় বিকল হয়ে পড়া হৃদযন্ত্রটাকে সচল করে রাখতে?

আমার হার্টঅ্যাটাকের পর সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলে- সুস্থ হয়ে উঠবেন ইনশাআল্লাহ।আল্লাহর কৃপায় আমি বেঁচে গেছি চার চারটা ব্লক নিয়েও। গত বছর ১৫ মার্চ আমার হার্টঅ্যাটাকের পরদিন বন্ধুবর সাংবাদিক সকলের প্রিয় আবুল বাশার নুরু হার্টঅ্যাটাকের শিকার হয়। সেও বাঁচতে পারেনি। কদিনের মাথায় আরেক সিনিয়র সাংবাদিকবন্ধু জিল্লুর রহিমেরও হার্টঅ্যাটাকে মৃত্যু। সপ্তাহ না ঘুরতেই বাসস এর সাংবাদিক বেলাল ভাইয়েরও হার্টঅ্যাটাকে মৃত্যুর খবর। এমন দুঃসহ বিষাদ বেদনার খবর সহ্য করাটা আমার যে কতটা ঝুঁকির ছিল- তা কেবল তখন চিকিৎসকরাই আন্দাজ করছিলেন। হাবিব তোমার হার্টঅ্যাটাকে মৃত্যুর খবরকে আমি ভাবছিলাম তোমার জন্মদিনের খবর। কিন্তু যখনি একটি পোস্টের শিরোনাম চোখে পড়ে গেল - তখনি যে থমকে গেলাম। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়লাম। তুমি চলে গেলে?

আরে তুমি তো আমার ভীষণ প্রিয় ছিলে। এ সময়টা তোমার জন্য তো বড্ড অবেলা। ডিআরইউ কিংবা প্রেসক্লাব চত্বরে দেখা দিবে না আর?

হাতটা কপালে উঁচিয়ে ধরে বলবে না- 'লিডার আসসালামু আলাইকুম।'

প্রাকৃতমনস্ক আচরণ সত্যিই বুঝি-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আড্ডাবাজ শিক্ষার্থীদের একটি সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য। একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিও বটে। তাই তুমি আচারআচরণে এতটা শোভনীয় ছিলে। আমি কী তোমার সালামের প্রতিত্তোরে বলব না কোনদিনই -ওয়ালাইকুম আসসালাম? আমার বিমোহিত প্রাণে কী সুরের মূর্ছনা ছড়াবে না তোমার সুউচ্চ কণ্ঠধ্বনি দিয়ে? জন্মদিন ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম তোমার ছবির ছড়াছড়ি দেখেও।কারণ আগস্ট শোকাবহ মাস।আমার বাবা বড্ড অকালে চলে গেছেন এমাসেই- ২৪ আগস্ট।ক্যান্সারের সঙ্গে পেরে ওঠা সাধ্য কার? বাবাও পারেননি। নিজের জন্মদিন ছিল ১৯ আগস্ট।বরাবরের ন্যায় এবারও আনন্দে গা ভাসাতে দেয়নি মন- এ জীবদ্দশায় দিবেও না যে কিন্তু জন্মদিন নয় আমাকে লিখতে হল তোমার মৃত্যু খবরে শোকে মুহ্যমান হয়ে। চোখে এক নদী জল নিয়ে। বিশেষ করে দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শ্রদ্ধাভাজন সাইফুল আলম যে লেখাটি লিখেছেন, হাবিবের চিরপ্রস্থান নিয়ে, সেটি পড়লে বোঝা যায়, হাবিব যুগান্তর পরিবারেও কতটা কদরের ছিলো।

প্রিয়তম হাবিবুর রহমান খানকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। পরম সমবেদনা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :