বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, তিন জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে ফের লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর, নীলফামারীতে ৫২ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার ওপর ও কুড়িগ্রামের কাউনিয়া পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে এসব জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
শনিবার সকাল ৬টায় জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে সকাল ৬টায় ৫২ দশমিক ২৫ ও ও সকাল ৯টায় তিস্তার প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। আর কুড়িগ্রামের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তার পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারতের অংশের দোমহনি ও মেখলিগঞ্জে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় সেই পানি ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে।
তিস্তা ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষজন জানান, গত কয়েকদিন থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে। পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বাড়তে থাকে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে লালমনিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা বরাবরে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার এবং কুড়িগ্রামের কাউনিয়া পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
নদী পাড়ে বসবাসরত স্থানীয় মানুষজন জানান, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের আবাদকৃত ফসলের ক্ষেতে পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।
নদীর পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘেরচর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর এবং গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, নদী পাড়ের মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবকটি (৪৪) গেট খুলে রাখা হয়েছে।
এদিকে পানি বাড়ায় নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা ও লালমনিরহাট জেলার দুই উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবারে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
ডিমলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশ সেখানে কাজ করছে। এলাকার মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফ-উদ-দৌলা বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্ট বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও নিচু চরাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৬ আগস্ট/ইএইচ/ইএস)

মন্তব্য করুন