অফিসকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষিকার আপত্তিকর ভিডিওর সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, উপজেলা অ্যাকাডেমিক সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুপারভাইজার অঞ্জন কুমার কুন্ডু ও বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিঠন কুমার।
তাছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিদ্যালয়ের মূল ফটকে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রাইভেটকার থেকে রিসিভ করে আনতে হয়। প্রধান শিক্ষক ফেসবুকে কোনো কিছু পোস্ট দিলে শিক্ষক কর্মচারীদের সেই পোস্টে কমেন্ট করা ছিল বাধ্যতামূলক।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গত ১২ জুলাই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের বক্তব্য নেয়। তাদের বক্তব্য তারা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা জানিয়ে ওই দুই শিক্ষকের বিচার দাবি করা হয়। গত ২৮ জুলাই সহকারী শিক্ষিকা ও ৫ আগস্ট প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে তাদের বক্তব্য দিয়ে আসেন।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট সকলের দেওয়া তথ্য প্রমাণাদি দেড়মাস সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে আপত্তিকর এ্ ভিডিওর সত্যতা আছে বলে নিশ্চিত করেছেন। আবার প্রধান শিক্ষক প্রাইভেটকারে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে ফটকে ঢোকার আগে মুঠোফোনে তার প্রাইভেটকার রিসিভ করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিদ্যালয়ের ফটকে আসতে নির্দেশ দিতেন। তারা মূল ফটকে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের প্রাইভেট কার রিসিভ করে আনতেন। এসবের প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষক তাদের গালিগালাজ করতেন বলেও উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তে ভিডিওর সত্যতা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন গত ২৩ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেগ গ্রহণ করবেন।
সদ্য বদলিকৃত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও দেখে প্রধান শিক্ষক ও তার নারী সহকর্মীর মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটানা ঘটেছে বলে তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। এটা পেশাগত অসাদাচরণ ও স্কুলে স্বার্থে পরিপন্থী।
বদলাগছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একটি সরকারি কলেজের প্রভাষক মাহমুদুল হাসান হিরো বলেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া প্রধান শিক্ষক ও সহকারী নারী শিক্ষকের অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও দেখেছি। এ ঘটনার পর একজন শিক্ষক হিসেবে আমার মনে হয়েছে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী নারী শিক্ষক দুজনই শিক্ষকতার মহান পেশাকে কলঙ্কিত করেছেন। আবার প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতিদিন বিদ্যালয়ের মূল ফটকে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের প্রাইভেট কার রিসিভ করে আনতে হয়। এটা শিক্ষকদের জন্য চরম অসম্মানের। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকের কাছে ঐ প্রধান শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য, উপজেলার বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ ও একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা রিফাত আরা ইতির বিরুদ্ধে অফিস কক্ষে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে।
এমন কিছু ভিডিও মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বিকাল থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদের একের পর এক অনৈতিক কাণ্ডে স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তার নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফুঁসে উঠে এলাকাবাসী। শিক্ষকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়।
গত ২০১০ সালে জুন মাস থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছে আবু সাদাত শামীম আহমেদ। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী কিছু বলার সাহস পান না। তার ক্ষমতার উৎস তার আত্মীয়স্বজনরা বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি চাকরিজীবী। এ কারণে একের পর এক অপরাধ করেও পার পেয়ে যান তিনি। অনৈতিক কারণে ইতোপূর্বে বেশ কয়েকবার তাকে উত্তোমাধ্যম দেওয়া হয়েছিল। নারী কেলেঙ্কারী ও বেশ কিছু অনিয়মের কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তাকে স্কুল থেকে ২০১৪ সালে বের করে দেওয়া হয়। এক বছর স্কুলের বাহিরে থাকার পর তার কিছু মদদপৃষ্টদের সহযোগিতায় আবারও স্কুলে প্রবেশ করে।
(ঢাকাটাইমস/১১সেপ্টেম্বর/এআর)