ইইউর আশা ছাড়েনি ইসি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানানো হলেও এখনো আশা ছাড়েনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চিঠিতে বাজেট স্বল্পতার অজুহাত উল্লেখ করে ইইউ।
ইইউর ওই চিঠির প্রেক্ষিতে দেওয়া এক চিঠিতে ছোটপরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইইস) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি এখনও আশা করছেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ছোট দল হলেও পাঠাবে ইইউ।
শনিবার ইইউ অ্যাম্বাসেডর চার্লস হোয়াইটলিকে ওই চিঠি পাঠান সিইসি। চিঠিতে সরকারের সহায়তায় সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে ইইউকে আশ্বস্ত করেন সিইসি।
যদিও বাজেট স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়ার পর ফ্রান্সের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় কমিশনের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক মুখপাত্র নাবিলা মাসরালি বলেছেন, ‘বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়নে বাংলাদেশের নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী না হওয়ার আশঙ্কার কথা উঠে আসায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এদিকে ইইউর চিঠির জবাবে সিইসির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার ও অন্যদের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে সহায়তা পাচ্ছে, এটি অব্যাহত থাকলে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কমিশন সক্ষম হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবীব খান। ইইউকে চিঠি পাঠানো হয়েছে নিশ্চিত করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে একটি ছোট দল হলেও পাঠাবে।’
সূত্র জানায়, চিঠিতে চার্লস হোয়াইটলিকে সিইসি বলেছেন, ‘সরকার থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে বলে আপনাকে আশ্বস্ত করছি। সরকারও এ বিষয়ে বারবার অঙ্গীকার করেছে। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা নির্বাচনকে দেশে এবং বিদেশে গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে সহায়তা করে। আমি বিশ্বাস করি ইইউ তাদের সহায়তা চালু রাখবে।’
২৩ সেপ্টেম্বর সই করা চিঠিতে চার্লস হোয়াইটলির উদ্দেশে সিইসি আরও বলেন, ‘আমি আপনার চিঠি পেয়েছি, যেখানে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।’
চিঠিতে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যাই হোক না কেন, আমি বিশ্বাস করি যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আসন্ন সাধারণ সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।’
গত ২০ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা নির্বাচন কমিশনকে জানায় ইইউ।
বলা হয়, ঢাকা সফর করে যাওয়া ইইউর প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান (হাই রিপ্রেজেনটেটিভ) জোসেপ বোরেলের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ইসিতে পাঠানো চিঠিতে ইইউ বলেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ২০২৩-২৪ সালের জন্য ইইউর বরাদ্দ বাজেটের স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোসেপ বোরেল।
একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করা হবে কি না, তা এই মুহূর্তে যথেষ্ট স্পষ্ট নয়।
এমন সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ইইউ বর্তমানে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকার ব্যাপারে অন্যান্য বিকল্প খতিয়ে দেখছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করতে তারা সব ধরনের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করছে।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশসহ নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ইইউর প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফর করেছিল। বাংলাদেশ সফরকালে তারা নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে।
প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের ঢাকা সফরের সময়ই বলা হয়েছিল, তারা যে প্রতিবেদন দেবে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউর পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এখন বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
আগামী বছরের শুরুতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে কমিশন। ঠিক এমন সময় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরে যাওয়া নানান বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
এই বিতর্ক চলার মধ্যেই গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আসে এক বিবৃতি। বলা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্তকারী বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্ত করবেন, তাদের বিরুদ্ধেও পরবর্তীতে ভিসানীতি প্রয়োগ হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এফএ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

ফিডের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় খামারিরা

গ্রেপ্তার এড়িয়ে কেমন আছেন আদম তমিজী হক?

এইচএসসির ফল বিশ্লেষণ: প্রতিবার ফলাফলে মেয়েরাই যে কারণে এগিয়ে

জ্বালানি ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন, তাক লাগিয়ে দিলেন ভৈরবের মোস্তাক

দ্রব্যমূল্যের থাবা শাবিপ্রবির ডাইনিং-ক্যান্টিনে, বিপাকে শিক্ষার্থীরা

বিদেশি শক্তির চাপ বাড়ছে

দাম কমায় গরুর মাংস কেনার হিড়িক

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ দুই পরাশক্তির

৫৮১ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ: পোটনকে গ্রেপ্তারে কেন সময় নিচ্ছে দুদক
