দর্শক টানছে ‘মুজিব, হল মালিকরা বলছেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী গুড গোয়িং’

লিটন মাহমুদ, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৩| আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৩৫
অ- অ+

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ সিনেমাটি রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ব্লকবাস্টারসহ দেশের ১৫৩ টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে।

ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ সিনেমাহলে 'মুজিব' মুক্তির ৫তম দিনেও বেশ দর্শক সমাগম হয়েছে বলে জানিয়েছেন হল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ঈদের পরে কোন সিনেমাতে এমন দর্শক আসেনি। আবার কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছে, বঙ্গবন্ধুর মতো মহান মানুষকে নিয়ে এত বড় আয়োজনের সিনেমা এটি। কিন্তু সিনেমাটি সেভাবে প্রচারণা করা হয়নি।

যশোর শহরে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ সিনেমা মনিহারে আশানূরুপ দর্শক উপস্থিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হলটির বর্তমান মালিক জিয়াউল ইসলাম মিঠু। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘প্রথম দুদিন দর্শকের বেশি চাপ ছিল। এরপর দর্শক কিছুটা কমেছে। তবে আশানূরুপ দর্শক সিনেমা হলে আসছে।’

তিনি জানান, সাধারণ লোকজনের পাশাপাশি, জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা প্রতিদিন সিনেমা দেখতে হলে আসছে। দর্শক বলছে সিনেমাতে বঙ্গবন্ধুর জীবনাচারণ ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে যারা অভিনয় করেছে সবার কাজই ভালো হয়েছে।

স্টার সিনেপ্লেক্সের সবগুলো শাখা মিলিয়ে প্রতিদিন ‘মুজিব’ সিনেমার ২১ টি শো চলছে। প্রতিষ্ঠানের মিডিয়া ও বিপণন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ওভারঅল ভালো চলছে বলা চলে। এরই মধ্যে বেশকয়েকটি শো হাউজফুল গেছে। আজ মুক্তির ৫ দিনেও দর্শকদের ভিড় ছিল। পলিটিক্যাল অডিয়ান্স আসছে। আগামী দিনগুলো দর্শক আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

রাজধানীর যমুনা ব্লকবাস্টারে প্রতিদিন চারটি শো চলছে সিনেমাটির। সেখানে এভারেজ চলছে বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিপণন বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মাহবুব রহমান। বলেন, ‘শুক্র শনিবার প্রায় সবগুলো শো হাউজফুল গেছে। এরপর ওয়ার্কিং ডে’তে দর্শক উপস্থিতি কিছুটা স্লো হয়েছে। তবে বলা চলে মোটামুটি ভালোই যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলবেধে এসে সিনেমাটি দেখছে। অনেকে শেখ মুজিবের ইতিহাস জানতে চায় তারা পরিবারসহ এসে সিনেমা দেখছে। দর্শক বলছে, সিনেমাটি ভালো হয়েছে।’

‘যেহেতু সিনেমাটি দর্শক টানছে আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা শো আরও বাড়িয়ে দেব।’-যোগ করেন তিনি।

বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সে কেমন চলছে মুজিব? এমন প্রশ্নে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রোকনুজ্জামান ইউনূস বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী বলা যায় গুড গোয়িং’। তিনি জানান, মুজিব আদর্শের মানুষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষরাও সিনেমাটি দেখতে প্রতিদিন হলে আসছেন।

মুক্তির দিন থেকে ‘মুজিব’ সিনেমার প্রতিদিন তিনটি করে শো চলছে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ সিনেমা হল সুগন্ধায়। হলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাদৎ হোসেন বলেন, প্রথম দুই দিনের সবগুলো শো হাউজফুল গেছে। এছাড়া ওয়ার্কিং ডে-গুলোতে হাউজফুল না হলেও কাছাকাছি দর্শক আসছে।’

বড় পরিসরে সিনেমার প্রচারণা করে সিনেমাটি মুক্তি দিলে আরও দর্শক বাড়ত জানিয়ে সাহাদৎ বলেন, ‘সিনেমাটি যারা দেখছে সবাই প্রশংসা করছে। এত বড় আয়োজনের সিনেমা, কিন্তু সেভাবে সিনেমাটির প্রচারণা করা হয়নি। তবে, একটি সিনেমা সাধারণত ভালো হলে মানুষের মুখে মুখে সবার কাছে ছড়িয়ে পরে। সে হিসাবে ভাবছি আগামী দিনগুলোতে দর্শক বাড়বে।

এদিকে সরেজমিনে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টার শোতে ৫০ শতাংশের মতো দর্শক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় রাজধানীর অন্যতম প্রাচীনতম সিনেমাহল মধুমিতায়। এদিন উপস্থিতিদের প্রবীণ দর্শক বেশি ছিল। শো শেষে তাদের চোখে মুখে তৃপ্তির ছোঁয়া দেখা যায়। তাদের ভাষ্য, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সিনেমাতে তুলে ধরা হয়েছে।

এদিন শো শেষে কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মীর আসিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন ‘এ সিনেমার ঘটনাগুলো ছোটবেলায় নিজ চোখে দেখেছি। সিনেমাটির প্রতিটি দৃশ্যে সেই সময়ের ভয়াবহ চিত্রগুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আবেগপ্রবণ করে তুলেছে, দেখার সময় বার বার চোখে পানি এসেছে।’

সিনেমার আরও অনেক কিছু দেখানো যেত উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষ যে কষ্ট করেছে তাও বায়োপিকে দেখানো উচিৎ ছিল। যেভাবে এই দেশের মানুষ ভারতে গিয়েছিল সেসবও ইতিহাসও ভালোভাবে তুলে ধরা উচিৎ ছিল।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে তরুণ প্রজন্মকে সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানান।

রাজধানীতে 'মুজিব'র পোস্টার দেখে সিনেমাটি দেখার আগ্রহ জাগে ভ্রাম্যমান পান-সিগারেট বিক্রেতা বাবুল মাতবরের। সেই আগ্রহ থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মধুমিতা হলে সিনেমাটি দেখতে এসেছেন তিনি। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, 'সিনেমার নাম আমি জানি না। কিন্তু কয়েকদিন ধরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে এক ব্যক্তির পোস্টার দেখছি সব জায়গায়। পোস্টার দেখেই সিনেমাটি দেখার ইচ্ছে জাগে।’

মুজিব নির্মাণ করেছেন ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি অভিনেতা আরিফিন শুভ। ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা, শেখ হাসিনার চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া, তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ আহমেদ অভিনয় করেছেন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, চঞ্চল চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, জায়েদ খান, খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌস আহমেদ, দীঘি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, গাজী রাকায়েত, তৌকীর আহমেদ দেশের শতাধিক জনপ্রিয় শিল্পী। সিনেমার মেকিং ও অভিনয়ের প্রশংসা করে নাইমুর রহমান মিজান নামে এক দর্শক বলেন, 'অসাধারণ নির্মাণ মুজিব। নির্মাণে কোথাও ছাড় দেওয়া হয় নি। সিনেমাতে যারা অভিনয় করেছেন সবাই কাজ ও চরিত্রগুলো বাছাইও ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি বইয়ের পাতায় যতটুকু পড়েছিলাম ,ততটুকুই জানতাম বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে। সিনেমাটি দেখে তার বাল্যকাল থেকে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অনেক অজানা অনেক তথ্য ভালোভাবে জানার সুযোগ পেয়েছি।'

এই দর্শক আরও বলেন, ‘একজন সাধারণ দর্শক হয়ে সিনেমাটি দেখে আমার ভেতরে যে বেদনাদায়ক অনূভূতি তৈরি হয়েছে , যানিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা হয়ে বিষয়টি কিভাবে নিচ্ছেন। আল্লাহ তাকে ধেয্য দিয়েছেন বলেই তিনি পরিবার হারানোর বেদনা বুকে চেপে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

মধুমিতার ভেতরে অবস্থিত ফাস্টফুড দোকানদার জানান, এই সিনেমাটি চালানোর পর থেকে হলে অনেক লোক আসছে, ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে তার বিক্রিও। তিনি বলেন, ‘অন্যসব সিনেমা থেকে এ সিনেমায় দর্শক বেশি আসছে। সবশেষ ঈদে শাকিবের প্রিয়তমা সিনেমাটি এমন দর্শক হয়েছিল।’

হলটির কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ বলেন, ‘ঈদের পর মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর মধ্যে সবথেকে এই সিনেমায় দর্শক বেশি আসছে। তবে ফ্যামিলি অডিয়ান্স সেভাবে দেখছি না। রাজনৈতিক কর্মীদের উপস্থিতি বেশি।’

(ঢাকা টাইমস/১৯অক্টোবর/এলএম/জিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতিতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা? যা বললেন উপদেষ্টা ফারুকী
ভেষজ ঔষধি ঢেঁড়স ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গরমে স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন পাত্রে কতটুকু পানি পান করা নিরাপদ
ইলন মাস্কের স্টারলিংকের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর করল বিটিআরসি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা