‘হামুন’ মোকাবিলায় যে প্রস্তুতি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলায়

আবু তাহের, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)
| আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:২০ | প্রকাশিত : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ২১:২৯

‘কয়েকমাস পরপরই একটা ঝড়-বইন্যা আয়, পোলাপান লইয়া একটা ঝুপড়ি ঘরে থাকি। ঝড় আইলে আমাগো আর আল্লাহ ছাড়া কোনো ভরসা থাকে না। যদি পানি বাড়ে, তাহলে গাছ ধরা ছাড়া আমাগো উপায় থাকে না।’

মঙ্গলবার পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর উপকূলীয় দুর্গম দ্বীপ চরনজিরের বাসিন্দা ৪৫ বছরের মমতাজ বিবি একরাশ চিন্তা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন। ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের মানুষ সবসময়ই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ে থাকেন।

এর অবশ্য কারণ আছে। যেমন, মমতাজ বিবি ২৫ বছর ধরে চরনজিরে বসবাস করছেন। এর আগেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াল থাবা তিনি দেখেছেন। চরনজিরের তিন দিকে নদী ও দক্ষিণে সাগরমোহনা। মোহনায় জেগে ওঠা এ দ্বীপের বাসিন্দা মমতজের স্বামী মো. আজগর (৬০) নদীতে মাছ ধরেন।

মমতাজ বিবি জানান, সিডরের বন্যার সময় যখন সব তলিয়ে যায়। তখন গাছ ধরে তিনি ও তার স্বামী বেঁচে ছিলেন। সেই সিডরের কথা মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন তারা। এখনো আকাশে কালো মেঘ দেখলেই অজানা আশঙ্কা পেয়ে বসে।

এই গ্রামে থাকেন হারুন (৫১) ও তার স্ত্রী রুজিনা বানু (৪৪)। তাদের দুই ছেলে মাসুদ রানা (২৪) ও মাসুম বিল্লাহ (১৮)। নদীতে মাছ ধরে চলে তাদের সংসার। হারুন জানান, সিডরের সময় পানি বেশি উঠেছিল। পরিবারের সবাইকে নিয়ে নৌকায় গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে বেঁচে ছিলেন তারা।

ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও চরনজির এলাকার বাসিন্দা কামাল পাশা জানান, তাদের এই চরে ছয় শতাধিক মানুষ বাস করছেন। বেড়িবাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্র নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে এই চরের মানুষ আতঙ্কে থাকেন। তবে ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাব থেকে রক্ষায় চরবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরকাসেম। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বুড়াগৌরাঙ্গ নদে জেগে ওঠা চরকাসেমের বাসিন্দা ছালেহা বেগম (৪৫) জানান, ২০ বছর ধরে তিনি এই চরে বাস করছেন। তার স্বামী ফিরোজ আকন (৪৯) নদীতে মাছ ধরেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার।

ছালেহা বেগম জানান, অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে এই চরে আসেন তিনি। সিডরের সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ওই সময়ে যখন পানিতে চর তলিয়ে গেছে, তখন স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছিলেন। একসময় গাছ আগলে ধরে বেঁচে গিয়েছিলেন। এক দিন পর তিনি তার স্বামীকে খুঁজে পেয়েছিলেন।

রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, সরকারি বা বেসরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় চরগুলোয় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন পাওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদিত হলে সেখানে প্রস্তাব পাঠিয়ে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া যেত।

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, মুজিব কিল্লাসহ ৮৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। আমাদের যে দুর্গম এলাকা আছে সেখান থেকে মানুষ সরিয়ে আনার জন্য পর্যাপ্ত নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলার অনেক এলাকায় এখনো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। ঘর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় জরুরি সভা করে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪ অক্টোবর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :