মুহূর্তেই জামায়াত-শিবিরে লোকারণ্য আরামবাগ, পুলিশ কর্মকর্তা বললেন ‘কথার বরখেলাপ’

সাইফুল্লাহ আমান, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ২০:২৮ | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৫৭

শনিবার সকাল ৯টা। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল শাপলা চত্বর। সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়ে চারদিকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও এপিবিএনের সদস্যরা। কাউকে শাপলা চত্বরে ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে যারা বের হতে চাচ্ছেন তারা বের হতে পেরেছেন। ছিল না কোনো গণপরিবহন কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা রিকশা। কোথাও কোনো জনসমাগমও লক্ষ্য করা যায়নি।

সকাল ৯টা ৩০ মিনিট। ধীরে ধীরে দেখা যায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন আরামবাগ মোড়ের দিকে। সঙ্গে বাড়তে থাকে পুলিশ সদস্যদের সংখ্যাও। এর মধ্যেই পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তারা আসতে থাকেন শাপলা চত্বরের দিকে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান এসে কথা বলেন নটরডেম কলেজের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহনূরের সঙ্গে। সমাবেশ ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কোনো সমস্যা নেই। জামায়াতকে তো অনুমতিই দেওয়া হয়নি। কীভাবে সমাবেশ করবে? সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মন্তব্য করে চলে যান আসাদুজ্জামান।

সকাল ৯টা ৫০ মিনিটের মধ্যে হঠাৎ করেই দেখা যায় কমলাপুর থেকে আরামবাগ মোড় পর্যন্ত জামায়াতের নেতাকর্মী দিয়ে আটকে গেছে পুরো রাস্তা। পরবর্তী এক ঘণ্টার মধ্যেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো আরামবাগ চত্বর। কয়েক হাজার জামায়াত নেতাকর্মী এসে হাজির হন পূর্ব ঘোষিত মতিঝিল এলাকায় ঢোকার প্রবেশমুখ আরামবাগ এবং ফকিরাপুল মোড়ে।

সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার লিটন কুমার সাহাসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা। আরামবাগে আল হেলাল পুলিশ বক্সে তারা অবস্থান নেন। এমন সময় জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে সমাবেশের। কিন্তু এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়। বেলা ১১টার দিকে জামায়াতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এসএম মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, দেলোয়ার হোসেনসহ চার সদস্যের একটি দল লিটন কুমার সাহার সঙ্গে দেখা করতে পুলিশ বক্সে প্রবেশ করেন।

৩০ মিনিট মিটিং করে বের হয়ে মোবারক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ আমাদের আরামবাগ মোড় থেকে সামনে গিয়ে সমাবেশ করতে বলেছেন। আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো বলেছি।’

এ সময়ের মধ্যেই জামায়াতের সমাবেশের প্রস্তুতি দেখা যায়। চারটি ট্রাক ও ছয়-সাতটি মাইক এনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা শুরু করে। এরই মধ্যে নটরডেম কলেজের পাশের গলি দিয়ে আচমকা জামায়াতের এক বিশাল মিছিল আসে নটরডেম কলেজের সামনে। একই সময়ে আরামবাগ মোড় থেকে জামায়াতের সকল নেতাকর্মীরা নটরডেম কলেজের মূল ফটকের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ অবস্থা দেখে ওখানে থাকা পুলিশের সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। হঠাৎ করে এত লোক মিছিল নিয়ে কীভাবে মতিঝিলে আসলো তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশের মধ্যে একজন এডিসি মানের কর্মকর্তা জামায়াতের এক নেতাকে বলতে থাকেন, ‘আপনাদের বলা হয়েছিল আরামবাগে থাকতে। কিন্তু আপনারা চলে এসেছেন নটরডেম কলেজে। এটা উচিত হয়নি। আপনারা কথার বরখেলাপ করেছেন।’

এর কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় জামায়াতের সমাবেশের মূল কার্যক্রম। কয়েকজন নেতার বক্তব্যের পরই বক্তব্য দেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর। ১৭ বছর আগে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে আমাদের কয়েকজন ভাইকে হত্যা করেন। আমরা তার প্রতিশোধ নেবো আদর্শ দিয়ে। আমাদের শহিদ ভাইদের অপূর্ণ কাজের পূর্ণতার মাধ্যমে আমরা এর বদলা নেবো। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না জামায়াত। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করবো আমরা।’

তার বক্তব্যের পর সমাপনী ভাষণে জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণ সিটির আমির ও সমাবেশের সভাপতি নূরুল ইসলাম বুলবুল তার বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এরপর নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সুশৃঙ্খলভাবে কমলাপুর রোড দিয়ে শাহজাহানপুর হয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন।

ঠিক একই সময়ে নয়াপল্টনে শুরু হয় বিএনপির মহাসমাবেশ। শুরু হতে হতেই সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় সমাবেশটি সংক্ষিপ্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ হামলার কারণে সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাকরাইলে হামলার ঘটনায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এতে অনেকেই আহত হন। প্রধান বিচারপতির বাসভবন ভাঙচুর করা হয়। আইডিইবি ভবনেও হামলা চালায় বিএনপি বলে অভিযোগ করে পুলিশ। সংঘর্ষের পরে কাকরাইল এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

একই সময়ে বিএনপি সমমনা ১২ দল বিজয়নগরে সমাবেশ করে। সেখানেও হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে বিএনপি মহাসচিব আহত হন বলে খবর পাওয়া যায়। এছাড়া ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের চোখে গুলি লেগেছে বলে দাবি করেছে দলটি।

বিকালে সাধারণ মানুষ বলেছেন, যারা অনুমতি পেল তারা সমাবেশ করতে পারলো না। যারা অনুমতিই পাবে না, সমাবেশ করার প্রশ্নই আসে না বলেছে পুলিশ তারা সমাবেশ সুন্দরভাবে শেষ করলো।

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :