কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
| আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:২৩ | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২১

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এখানকার সৌন্দর্য আকৃষ্ট করে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের। পটুয়াখালীর সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন প্রতিনিয়ত। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সমাগম বেড়েছে দেশ-বিদেশের পর্যটকের। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধন সহ পরিবেশ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের ট্যুরিজম পার্ক থেকে পূর্বে এক কিলোমিটার পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন ও কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যোগে সম্প্রতি নানা প্রজাতির প্রায় ৭ হাজার উদ্ভিদ ও ফলজ গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। মোট ১৫ হাজার গাছের চারা রোপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানা যায়। এতে কুয়াকাটা সৈকতের নান্দনিকতা ফিরেছে বহুগুণে। এদিকে সমুদ্রের তীরে মেরিন ড্রাইভের আদলে ৩ কিলো মিটার একটি সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এমন সময়োপযোগী উন্নয়ন কাজ পর্যটকদের বিনোদনে অন্যান্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

এছাড়াও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য সৈকতের মূল কেন্দ্রে জেলা প্রশাসনের ট্যুরিজম পার্ক থেকে পূর্বে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান ফটক পর্যন্ত একটি পার্ক ও ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন দৃষ্টি নন্দন একটি লেক তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের মূল কেন্দ্রে যত তত্র ময়লা আবর্জনা অপসারণ, জেলেদের নোঙ্গর করে রাখা নৌকা, স্থানীয় বাসিন্দাদের অপরিকল্পিতভাবে ঝুপড়ির ঘরসহ সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করছে এমন অব্যস্থাপনাগুলোকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় নিরলস কাজ করছেন স্থানীয় প্রশাসন। পর্যটন বান্ধব নানামুখী কর্মকাণ্ডে পর্যটকসহ স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও সৃজনশীল এমন কাজে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির পক্ষ হতে প্রশংসিত হয়েছেন কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার।

আরও জানা যায়, রাতের আঁধারে পর্যটকের অবাধ বিচরণে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর দুর্ঘটনা এড়াতে দুই কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত এলাকায় আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও সমুদ্র সৈকতের মূল পয়েন্টে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

কুয়াকাটা উপকূলের স্থানীয় বাসিন্দা মো. বেলাল, শাহিনুর, মো. মিরাজ, মোসা. রেখা, মো. শাহাদাতসহ একাধিক বাসিন্দারা জানান, কুয়াকাটা সৈকতে সৌন্দর্য নিয়ে অতীতে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পর্যটকদের নেতিবাচক মন্তব্য নিরসনে কুয়াকাটা পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সৈকতের সৌন্ধর্য বর্ধনে প্রায় ৭ হাজার নানা প্রজাতির গাছের চারা রোপন করেন।

তারা আরও বলেন, দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রের সমুদ্র সৈকতের একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় বলে বাংলাদেশ ছাড়াও বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমণে দিনদিন আগ্রহ বেড়েছে। এসকল পর্যটকদের ধরে রাখতে কুয়াকাটা সৈকতের নান্দনিক পরিবেশ রক্ষা করা অতীব জরুরি। উপকূলের প্রকৃতি রক্ষায় বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে রূপ লাভ করবে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করেছে সরকার। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মো. আনোয়ার-সাবিনা দম্পতি বলেন, ইতোপূর্বে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকলেও বর্তমানে তেমন কোনো প্রভাব নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ নিয়েছে নিঃসন্দেহে তা কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনের ব্যাপক গুরুত্ব রাখবে। এবং পরিবেশ প্রতিবেশ সহ উপকূলে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় এসকল গাছগুলো ভবিষ্যতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বরিশাল থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক পারভিন আক্তার বলেন, এর আগেও অনেকবার কুয়াকাটা সৈকতে ভ্রমণে এসেছি। তখন কুয়াকাটা এসে সৈকতে যে অগোছালো পরিবেশের মধ্যে আমাদের আনন্দ উপভোগ করতে হয়েছে তা ছিলো কিছুটা বিরক্তিকর। তবে বর্তমান সৈকতের নান্দনিকতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি। সৈকতের মূল কেন্দ্র থেকে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান পর্যন্ত যেসকল সারি সারি গাছের চারা রোপন করা হয়েছে তা পূর্বে আমরা দেখিনি। কয়েক বছরের ব্যবধানে এসকল গাছপালা বেড়ে উঠলে কুয়াকাটা সৈকতে সৌন্দর্যের আকর্ষণ আরো বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ দেখে বেশ ভালোই লাগলো। তবে সমদ্র তীরে বনায়নের উদ্যোগ আরো আগে নিলে পরিবেশের জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করতো।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উন্নয়নে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। পর্যটন ভিত্তিক পৌরসভা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষাসহ নান্দনিক পরিবেশে পর্যটকদের বিনোদনের চাহিদা মেটাতে জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সৈকতের মূল কেন্দ্রের পূর্বে ১ কিলোমিটার সমুদ্র তীরে নানা প্রজাতির প্রায় ৭ হাজার উদ্ভিদ ও ফলজ গাছের চারা রোপন করেছি। মোট ১৫ হাজার চারা রোপন করবো। পর্যটকের বাড়তি বিনোদনে সমুদ্র সৈকতের মূল কেন্দ্র থেকে পূর্ব দিকে দ্রুত দৃষ্টি নন্দন লেক ও পার্ক তৈরি করা হবে। এছাড়াও সৈকতে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি সড়ক মেরিন ড্রাইভের আদলে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। পর্যটক সহ স্থানীয়দের বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে সৈকতের কোলঘেষে এই সড়ক ধরে সমুদ্র দর্শনে বিশেষ গুরুত্ব রাখবে। এই তিন কিলোমিটার সড়কে সরকার ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতে লাইটিং ব্যবস্থা সহ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। আমরা আধুনিক পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। উন্নয়নের গতিশীলতা ধরে রাখতে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র রূপদানে সরকারের একান্ত সুদৃষ্টি কামনা করেন এই জনপ্রতিনিধি।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটা সৈকত উন্নয়নে পৌরসভার সাথে সমন্বয় করে আমরা যথারীতি কাজ করছি। আশা করছি অচিরেই কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য আরো বাড়বে। কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্য ফিরে পেলে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা, বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয় এমন মন্তব্য করেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

(ঢাকা টাইমস/১০নভেম্বর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :