হরতাল-অবরোধ: পর্যটক শূন্য কুয়াকাটা সৈকত

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
 | প্রকাশিত : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:০৮

পর্যটনের ভরা মৌসুমেও দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী সাগরকণ্যা খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পর্যটক শূন্য। দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই পর্যটক নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে দেশের দক্ষিণ এ জনপদের পর্যটন নির্ভরশীল মানুষজন জীবিকার সংকটে পড়েছেন। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতেও লেগেছে মন্দার ভাব।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারা বছরই পর্যটকদের পদচারণ মুখরিত থাকলেও বিশেষ করে নভেম্বর মাসে থাকে পর্যটক ভরা মৌসুম। তাই আগত পর্যটকদের আধুনিক সেবাদানে এখানে গড়ে উঠেছে থ্রী-স্টার মানের আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় দুই শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির খাবার হোটেল রয়েছে অর্ধশতাধিক।

তথ্যমতে, স্থানীয় অর্থনীতির ৭০ শতাংশ পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দফায় দফায় চলছে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে এবার ভরা মৌসুমেও নেই পর্যটক। হাতেগোনা যেকজন পর্যটক আসছেন তাদের অধিকাংশ পার্শ্ববর্তী জেলা শহর থেকে আগত। ঢাকা কিংবা অন্যান্য বিভাগ থেকে ৫ শতাংশ পর্যটকের উপস্থিতি নেই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। কুয়াকাটা পর্যটন নগরীর পর্যটক নির্ভর বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ এখন চরম অর্থনৈতিক চাপে পড়েছেন। হরতাল ও অবরোধে পর্যটক শূন্যের কোটায় ঠেকেছে। ফলে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এখন অনেকটা জনমানবহীন।

পর্যটকদের সেবায় কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেলের স্টাফ রয়েছে প্রায় ১৫০০ মতো, বীচ বাইকার ১ হাজার, ক্যামেরাম্যান প্রায় আড়াইশ, অটোভ্যান-ইজিবাইক চালক ২০০, ঘোড়া, ওয়াটারবাইক, সীবোট, স্পীডবোট, বীচ বাইক খাবার হোটেল স্টাফ, ছাতা-বেঞ্চ স্টাফসহ সৈকতের ভাসমান-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছে চার শতাধিক। এছাড়াও পর্যটক নির্ভর ঝিনুক-আচার, শুটকি, ফিসফ্রাই ব্যবাসী রয়েছে প্রায় ১ হাজার। অন্যদিকে পরিবহন খাতও প্রায় সিংহভাগ পর্যটক নির্ভরশীল। এই পর্যটন ঘিরে সামগ্রিকভাবে স্থানীয় অর্থনীতি ছাড়াও দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

অটোভ্যান চালক রাকিব হাওলাদার বলেন, প্রতিবছর এ সময় ভাত খাওয়ার সময় পাই না। পর্যটকদের নিয়ে অনেক ট্রিপ দিয়েছি। তখন প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা ইনকাম করেছি। কিন্তু এ বছরের অবস্থা বলে বোঝাতে পারব না। স্থানীয়দের নিয়ে খ্যাপ মেরে দিনশেষে ২০০-৩০০ টাকাও ঠিকমতো পাই না। স্থানীয় হাতেগোনা কিছু লোক ছাড়া বাকিরা পায়ে হেটে যায়, কারণ তাদের চলার মতো পকেটেও টাকা নেই।

সিবোট মাঝি সবুজ জানান, এ সময় আমরা ঠিকমতো বাসা-বাড়িতে যেতে পারি না। সকালের সূর্যোদয়ের ট্রিপ দেয়া লাগলে রাতে বোটে বা কুয়াকাটা রাত্রীযাপন করতে হয়। এখন আর সেই ব্যস্ততা নেই। একদিকে পকেটে নেই কোনো টাকা, অন্যদিকে ধারদেনাও পাইনা; তারমধ্যে জিনিসপত্রের আকাশছোয়া মূল্যবৃদ্ধিতে কতটা কষ্টে যে দিন পার করছি তা বলে শেষ করতে পারছি না।

ফটোগ্রাফার আলমাস খান, ট্যুর গাইড ও মটর বাইক চালক আ. জলিল, স্পীড বোট মালিক ও চালক মো. সাহিন, ফিসফ্রাই ও বারবিকিউ ব্যবসায়ী মো. তৈয়ব, চটপটি বিক্রেতা মো. মনির, চা-পান বিক্রেতা মো. কবির, আচার ব্যবসায়ী জহির রায়হান, শুটকি বিক্রেতা মো. রুবেলসহ একাধিক স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান একই কথা।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ বলেন, ছোট-বড় মিলিয়ে কুয়াকাটায় প্রায় দুই শতাধিকের বেশি আবাসিক হোটেল-রিসোর্ট আছে এবং পর্যটকদের সেবায় প্রায় ১৫'শর অধিক হোটেল স্টাফ আছে। বর্তমানে পর্যটক ভরা মৌসুম থাকলেও যে পরিস্থিতি চলছে আমাদের স্টাফ বেতন দিয়ে চালিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় স্টাফ টিকাতে হলে টাকা ধার করে অথবা স্টাফদের চাকরিচ্যুত করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ দেখছি না।

কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন (কুটুম) এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, পর্যটন এলাকার আয়-ব্যায় মূলত পর্যটকদের উপর নির্ভর করে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কুয়াকাটায় পর্যটক সমাগম বেড়েছে। পর্যটক মৌসুম ছাড়াও পর্যটকদের সেবায় সারাবছর ব্যস্ত সময় পার করেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বর্তমানে পুরো চিত্র উল্টো। এমন পরিস্থিতিতে নতুন অনেক বিনিয়োগকারীরাও দুশ্চিন্তায় পরেছেন। এমন চলতে থাকলে পর্যটক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকেই চাকরি হারাবে। তাই কেউ কেউ বলছেন, কিভাবে চলবে সংসার? কবে ঘটবে এর অবসান? কবে ফিরে আসবে সুদিন।

(ঢাকাটাইমস/২২ নভেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :