শীতের ফল কমলালেবুর অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্যগুণ জানলে চমকে উঠবেন

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৭

শীতের বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে বইছে হালকা হিমেল হাওয়া। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে আগমন ঘটে কমলালেবুর। উজ্জ্বল কমলা রঙের এই ফলটি ছাড়া শীত যেন ভাবাই যায় না। বাড়িতে বসে ব্রেকফাস্টে বা পিকনিকে গিয়ে দুপুরের রোদে বসে খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে কমলালেবু খাওয়ার ব্যাপারই আলাদা।

তবে শুধু উপভোগের ব্যাপারই নয়। কমলালেবু রীতিমতো উপকারী এক ফল। টক-মিষ্টি রসালো এই ফল খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলে রীতিমতো চমকে উঠবেন।

পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেন, কমলালেবুর কোয়া ও খোসা দুটিই পুষ্টিতে ভরপুর। কেবল স্বাদই নয়, স্বাস্থ্যের কারণেও এই মৌসুমী ফলকে ডায়েটে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। শীতে স্ট্রোক রুখতে, ওবেসিটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ও শরীরে ফাইবারের চাহিদা মেটাতে খুবই কাজে আসে কমলালেবু।

এই ফল খেলে ক্ষুধা বাড়ে, রুচি বাড়াতেও সাহায্য করে। শরীরে কোলেস্টেরল কমাতেও কমলালেবুর জুড়ি মেলা ভার। লিভার কিংবা হার্টের বিভিন্ন রোগে কমলালেবু খাওয়া উপকারী। হাইপারটেনশনের রোগীদের ক্ষেত্রেও কমলা খেলে উপকার অনেক।

প্রতি ১০০ গ্রাম কমলাতে আছে ভিটামিন বি ০.৮ মিলিগ্রাম, সি ৪৯ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২৩ মিলিগ্রাম। প্রতিদিন কমলা খেতে অনেকে পছন্দ করেন না। সেক্ষেত্রে কমলার জুস বানিয়ে খেতে পারেন। এতে স্বাদটাও বাড়বে, আবার পুষ্টিগুণও কমবে না।

গবেষণায় দেখা গেছে, কমলার রস খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই সঙ্গে হৃৎপিন্ডও ভালো থাকে। শরীরে থাকা সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মাত্রা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ায় আর পটাশিয়াম এটি কমিয়ে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে।

বিশেষজ্ঞরা এ কারণে রক্তচাপ কমাতে খাদ্য তালিকায় নিয়মিত পটাশিয়াম যোগ করতে বলেছেন। কমলার রসে দিনের প্রয়োজনীয় ৮ ভাগ খনিজ পাওয়া যায়।

আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটা জার্নাল থেকে জানা যায়, যারা অল্প বয়সে বেশি পরিমাণে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খান, ২০ বছরের পর তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কম থাকে। কমলার রসে দৈনিক চাহিদার ২০ ভাগ ফলিক এসিড থাকে।

বিটামিন ‘সি’-এর দারুন উৎস হচ্ছে কমলার রস। একটা কমলা দিনের চাহিদার শতভাগ ভিটামিন সি নিশ্চিত করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন সি রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কমলার মতো সাইট্রাস জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

আমেরিকান ও কানাডিয়ান গবেষকদের বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, লেবু জাতীয় ফলের খোসায় পলিমেথোক্সিলেটেড ফ্ল্যাভোনিস নামক উপাদান থাকে, যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। কিন্তু লেবুজাতীয় ফলের খোসায় সেই ভয় নাই।

কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যআঁশ থাকে, যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য কমলা অত্যন্ত উপকারি। তার উপর কমলালেবুতে সাধারণ রাসায়নিক গঠনের চিনি থাকে ও ফ্রুকটোজ থাকে। এতে করে কমলা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে চিনির মাত্রা অত্যধিক বাড়িয়ে দেয় না। গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্সে ৫০ এর নীচে থাকা খাবারে চিনির পরিমাণ কম থাকে।

কমলালেবুতে ডি-লিমোনিন থাকে, যা ফুসফুসের ক্যানসার, ত্বকের ক্যানসার এমনকি স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কমলায় থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

সাধারণত দেখা যায়, ডিএনএ-তে পরিবর্তনের (মিউটেশন) কারণে ক্যানসার ধরা পড়ে, যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি। তাছাড়া কমলায় থাকা খাদ্যআঁশও ক্যানসারের হাত থেকে রক্ষা করে।

কমলালেবুতে এসিডের পরিমাণ বেশি হলেও এটাতে প্রচুর পরিমাণ অ্যালকালাইন খনিজ আছে, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কমলালেবু অনেকটাই লেবুর মতো অ্যালকালাইনযুক্ত খাবার।

কমলায় প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটেনয়েড ও ভিটামিন এ থাকে। এগুলো চোখের মিউকাস মেমব্রেন সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পেশীতে ক্ষয়জনিত সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে, যার ফলে অনেক সময় অন্ধত্ব দেখা দেয়। এই ক্ষয় প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে ভিটামিন এ।

কমলার রসে থাকা বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কমলালেবু স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে মুড বুস্টিং হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কমলালেবু বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। কমলালেবুর রসে থাকা ভিটামিন বি-৬ দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়ক। কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক কমলালেবু।

ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা করে কমলালেবু। ঝকঝকে ত্বকের জন্য ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কমলালেবু অনবদ্য। ব্রন, সানবার্ন, ত্বকের শুষ্কতা ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা থেকে ত্বককে রক্ষা করে কমলালেবু।

কমলা খাওয়ার পর, অনেকেই খোসা ফেলে দেন। কমলার খোসারও গুণের শেষ নেই। এটি রূপচর্চায় অত্যন্ত উপযোগী। স্কিনে ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সহায়ক। একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁতের হলদে ভাব দূর করতে পারে কমলার খোসা। কমলালেবুর তাজা খোসা বেঁটে টুথপেস্টের মতোও ব্যবহার করা যায়।

কমলার খোসার রসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি কফের সমস্যা ও পিত্তের যে কোনো ধরনের সমস্যা দূর করে। এজন্য কমলার খোসা কুচি করে রঙ চা তৈরি করে খেতে পারেন। এতে পেটের সমস্যার সমাধান হবে। এমনকি গ্যাস, অ্যাসিটিডি ও বমি বমি ভাবও দূর হবে।

উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের সমস্যা এবং ওজন কমানোর জন্য কমলার খোসা অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ এতে ট্রাইগ্লিসারাইড দ্রবীভূত থাকে যা, সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে।

কমলার খোসা মিশ্রিত পানি গোসলের সময় ব্যবহার করলে এটি অনিদ্রা দূর করে। এমনকি কুসুম গরম পানিতে এর খোসা ফেলেও গোসল করা যায়। তবে চাইলে পানির সঙ্গে খোসার তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। কমলার খোসা কোলন ক্যানসার এবং অস্টিওপরোসিস বিরুদ্ধেও কাজ করে।

কমলার খোসার গুঁড়া কাশির সমস্যা দূর করে। এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও অ্যাজমা উপশমে এটি কাজে লাগে। এসব কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে কমলার খোসায় তৈরি চা নিয়মিত পান করুন। তাই এই শীতে কমলালেবু তো খাবেনই বেশি বেশি, সেইসঙ্গে এর খোসাও কাজে লাগান যথাযথভাবে। তাতেই ফিরবে স্বাস্থ্যর হাল।

(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :