সাপ নিয়ে এই ভুল ধারণাগুলো আপনারও নেই তো?

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪৬

আজকাল বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা রকম বিষাক্ত সাপের সন্ধ্যান পাওয়া যাচ্ছে। ফসলের মাঠে, ঝোপে-ঝাড়ে যারা কাজ করতে যাচ্ছেন, তাদের অনেকের মৃত্যুর খবরও আসছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক ভারত থেকে আসা চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপ।

এই সাপ সম্পর্কে আমাদের কিছু ভুল ধারণা আছে। আপনারও যদি সেগুলো থেকে থাকে, তাহলে সেগুলো ঝেড়ে ফেলুন আজই। বরং কিছু জ্ঞান থাকা জরুরি। তাতেই বাঁচতে পারবেন বড় বিপদ থেকে। চলুন আগে জেনে নিই সাপ নিয়ে ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে।

অনেকের ধারণা, ফুলে ঘ্রাণে সাপ ছুটে আসে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, সাপের ঘ্রাণশক্তি এত দুর্বল যে, ফুলের গন্ধে সাপ আসে না। কার্বলিক এসিডেও সাপ পালায় না। এসব সেইফটি এককালে প্রচলিত ছিল, এখন ব্যর্থ টোটকা।

মনে রাখবেন, বিন বাজালে সিনেমায় সাপ নাচে, বাস্তবে নাচে না। সাপের কান নেই। শোনার জন্য ঘনঘন তাকে জিহ্বা বের করতে হয়। সাপ আপনাকে আক্রমণ করবে না। আপনি যদি শব্দ করে হাঁটেন, সাপ সেটা বুঝতে পারে।

সাপের বুকের তলায় খোলসের রঙ আলাদা। সেখানে বিশেষ স্নায়ুতন্ত্র থাকে। তাই সাপ সহজেই মাটির কম্পন বুঝতে পারে। আপনি কতদূরে আছেন, আপনি সাইজে কত বড়, সাপরা সহজে তা বুঝতে পারে, এরপর সে পালিয়ে যায়।

বেলি ফুল, হাসনাহেনার গন্ধে কখনো সাপ আসে না। কেউ কেউ জীবদ্দশায় বেলি, হাসনাহেনা বা গন্ধরাজের তলায় সাপ দেখেছেন হয়তো। কিন্তু মনে রাখবেন, সাপের ঘ্রাণশক্তি দুর্বল। সে গন্ধ পায় না।

একটা সাপকে মারলে তার জোড়া সঙ্গী কখনো আপনাকে খুঁজে দংশন করতে আসবে না। কারণ, সাপের স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল। সাপ সিনেমার সর্পরাজ বা নাগিন নয় যে সঙ্গী হারানোর প্রতিশোধ নিতে ছুটে আসবে। সাপ নিম্নজাতের প্রাণী। তাদের মধ্যে প্রতিশোধপ্রবণতা নেই।

অনেকে মনে করেন, ছোট সাপে বিষ নেই। কথাটা কিন্তু একেবারেই ভুল। মনে রাখবেন, সাপের বাচ্চাও সাপ। কেঁচোর সমান একটা বাচ্চা কেউটের কামড়েও অনেক রোগীকে টানা ২৪ ঘণ্টা জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ করতে হয়েছে।

সিনেমা বলে, সাপে দুধ খায়। গরুর দুধ খেতে নাকি তারা গোয়ালঘরে হানা দেয়। ভুল কথা। সাপ ক্ষেতের ব্যাঙ, পোকামাকড় খায়।

সাপে দংশন করলে ব্লেড দিয়ে কেটে দিলে বিষ বের হয়ে যায়। এ কথাও ভুল। ভুলেও এ কাজ করবেন না। ব্লেড দিয়ে কাটলেন তো বিষকে নিজ হাতে রক্তের সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন।

চন্দ্রবোড়া বা রাসেল ভাইপার সাপে কামড় দিলে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যায়। ফলে রক্তবমি এবং রক্তপায়খানা হতে পারে। কামড়ের জায়গায় রক্ত ঝরতে পারে। ফুলে যেতে পারে, লাল হতে পারে, ফোসকা পড়তে পারে কালো হয়ে যেতে পারে।

কিছু সাপের কামড়ে মানুষ হার্ট অ্যাটাক করে মারাও যেতে পারে। মাঝেমধ্যে বিষহীন সাপের কামড়েও মানুষ মারা যেতে পারে। তবে বিষে নয়, ভয় পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করে।

চিকিৎসা এবং সতর্কতা

সাপে কামড় দিলে একদম ঘাবড়াবেন না। তাহলে বিষ বেশি ছড়াবে। সাপে কাটা জায়গা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্লেড দিয়ে কাটবেন না। চুষে বিষ বের করবেন, এমন চিন্তা ভুলে যান। যেখানে সাপে কাটবে সেখানকার নড়াচড়া বন্ধ করুন।

সাপ হাতে কামড় দিলে নড়াচড়া করলেই বিষ ছড়িয়ে যায়। তাই হাত একদমই নাড়াবেন না। তেমনি পায়ে কামড়ালে হাঁটাচলা একদম বন্ধ রাখুন। সাপেকাটা স্থানে ভুলেও এসিড ঢালবেন না। মরিচের গুড়া দেবেন না। কার্বলিক এসিডে ঝলসাবেন না।

এছাড়া কোনো ফলের বীজ, সর্পরাজ তেল, গুটি, আটি, বড়ি, তাবিজ কিছুই লাগাবেন না। সাপটাকে পারলে চিনে রাখুন। ডাক্তারকে বললে চিকিৎসা পেতে সুবিধা হবে। তবে ধরতে যাবেন না, মেরেও ফেলার দরকার নেই। মৃত সাপকে ধরতে যাওয়াও নিরাপদ নয়।

এর কারণ, সাপেরা মৃত্যুর ভান করে শুয়ে থাকতে পারে। জীবিত ধরে ওঝার কাছে যাবেন, এমন চিন্তা থাকলেও ঝেড়ে ফেলুন। ওঝা সাপের বিষ নামাতে পারে না।

বিষাক্ত সাপে কাটলে আপনি বাঁচতে পারেন একটামাত্র পথ অনুসরণ করলে। সেটা হলো- দুনিয়ার কারও মতামত নেবেন না। সাপে কাটলে এক সেকেন্ড দেরি না করে হাসপাতালে যান। সেখানে এন্টিভেনম নিন। তাহলেই আপনি বিপদমুক্ত হবেন।

(ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :