অবশেষে নীরবতা ভেঙে সামনে এলেন জিএম কাদের
সম্প্রতি দলীয় বর্ধিত সভায় জাপা চেয়ারম্যান বলেন, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচনে গেলে জাতীয় পার্টি ‘জাতীয় দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
নির্বাচনি ডামাডোলে দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে অবশেষে সামনে এলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের। শনিবার নিজ নির্বাচনি এলাকা রংপুরে গণসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে অনেক দিন পর প্রকাশ্যে এলেন তিনি।
শনিবার দুপুরে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয়ে কর্মীসভা ও রংপুর-৩ আসনে নিজের নির্বাচনি গণসংযোগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন জিএম কাদের।
সারা বছর সরকারবিরোধী সমালোচনায় থাকা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে যান। নির্বাচনের আগে দলের কর্মীসভায় তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্মিলিত মতামত নিয়ে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন। গেল ১৪ নভেম্বর রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় তিনি বলেন, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচনে গেলে জাতীয় পার্টি ‘জাতীয় দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
তার এই বক্তব্যে জাতীয় পার্টি বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাবে না বলেই অনেকে ধারণা করেন। দলীয় নেতাকর্মীরাও সরকার দলের অধীনে কিংবা কোনো ধরনের সমঝোতার নির্বাচনে না যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করে।
গুঞ্জণ ওঠে ২০ আগস্ট ভারত সফরে গিয়ে ভারত সরকারের মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে এসেছেন জিএম কাদের। দলের শীর্ষ নেতারও বিষয়টি স্বীকার করেন। যা তফসিল ঘোষণার পর দৃশ্যমান হয়।
এ বিষয়ে জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, জিএম কাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের কাছে তার অভিমানের কথা তুলে ধরেন। পরে সে রাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয় জিএম কাদেরের। এ সমঝোতার কারণে বিরোধী দলের নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ সরকারের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন। যার কারণে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ব্যর্থ হন রওশন এরশাদ। সাক্ষাৎ পান মনোনয়নপত্র প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর।
দলীয় নেতারা বলছেন, সরকারবিরোধী বক্তব্য দিলেও জিএম কাদেরের সঙ্গে বিরোধ সরকারের ছিল না। তাকে প্রাধান্য না দিয়ে কেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে সরকার প্রাধান্য দেয়, এটিই তার মূল ক্ষোভ।
মূলত এ কারণেই সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়াতে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেন জি এম কাদের। জাপা নেতারা বলছেন, গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাননি তিনি।
রংপুরে নিজের নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নে এই প্রথম মুখ খোলেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। রয়েছে আর্থিক সংকট। সেই সঙ্গে নির্বাচনে না আসলে দল বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। আর যখন দেখছি, সরকার যেকোনো মূল্যে নির্বাচন করবে; সেই অবস্থা বিবেচনা করেই আমাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া। তবে আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচনে এসেছি। সুষ্ঠু নির্বাচন, অর্থ এবং পেশিশক্তির ব্যবহার যেন না হয় সে সব প্রতিশ্রুতি সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, দলের ভেতর সবসময় একটা অস্থিতিশীলতা ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। যদি তেমন কিছু করতে যাই দল ভেঙে যাবে। দলের অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। এরকম একটা ঝুঁকি সবসময় ছিল। এজন্য আমরা স্বতন্ত্র অবস্থায় থেকে রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়েছি। মূলত সংসদে থেকে দেশ ও জাতির জন্য কথা বলা এবং দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। এটা না করলে দলের ঐক্য ধরে রাখা যাবে না।
এছাড়াও তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ বিরাজ করছে। সামনের দিনে কী হতে পারে, সেই কারণে মানুষ উৎকণ্ঠিত। যতই স্বাভাবিক বলা হোক, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
পড়ুন: বিভক্তির হাত থেকে দল বাঁচাতে নির্বাচন করছি: রংপুরে জি এম কাদের
এদিন বেলা ১১টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের কবর জিয়ারত করেন জি এম কাদের। এরপর নগরীরর মুনশিপাড়া কবরস্থানে নিজের মা-বাবার কবর এবং মাওলানা কারামত আলীর জৈনপুরী রহ. এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে তিনি প্রচারণা শুরু করেন। এরপর সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে নির্বাচনি কর্মীসভায় যোগ দেন। দুইটা পর্যন্ত তিনি দলীয় কর্মীসভা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
(ঢাকাটাইমস/২৩ডিসেম্বর/এসআইএস)