ফিরে দেখা ২০২৩

রাজনৈতিক উত্তাপ শক্ত হাতে সামাল দিয়ে নির্বাচনে আ.লীগ

জাফর আহমেদ
 | প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৫৮

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বছরজুড়ে ছিল রাজনৈতিক উত্তাপ। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ছিল পুরো বছর জুড়েই। এক অর্থে মিটিং, মিছিল, আন্দোলন, সংগ্রাম-সমাবেশের বছর বলা চলে ২০২৩ সালকে।

দেশের চলমান রাজনীতি, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপসহ নানামুখী চাপে ছিল আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে বিরোধী শক্তি দমনে নানা সামালোচনার পাশাপাশি গুজব-অপপ্রচার সামাল দিতে হতে হয়েছে ক্ষমতাসীনদের। রাজনৈতিক উত্তাপ দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে।

তবে সবকিছু শক্ত হাতে সামাল দিয়ে নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি ও সরকার বিরোধী আন্দোলন মোকাবিলার মধ্যদিয়েই বছর পার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র চলতি বছরের শুরু থেকে সরকার বিরোধী নানামুখী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব ছিল বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্ররা। ঢাকাসহ সারাদেশেই সভা-সমাবেশ করেছে তারা। একের পর এক সরকার বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে ছিলেন রাজনীতির মাঠে। তবে বিএনপি এসব কর্মসূচিতে সরাসরি বাধা না দিলেও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলে রেখেছে। বিএনপি যেন আন্দোলনের নামে আগুন-সন্ত্রাস, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও ক্ষমতা দখল করতে না পারে সেজন্য সতর্ক এবং সজাগ ছিল তারা।

শান্তি সমাবেশ, উন্নয়ন সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে সারা বছরই মাঠ দখলে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। রাজধানীসহ সারাদেশে দলের কর্মসূচি সফল করতে পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিএনপিকে ছাড় না দিতে কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল ক্ষমতাসীন দলটি।

এছাড়া বছরের মাঝামাঝি সময় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হতে থাকে। আওয়ামী লীগ সভাপতির দূরদর্শী নেতৃত্বে শক্তভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে নির্বাচন কেন্দ্রীক আন্তর্জাতিক চাপ। নানামুখী সংকট ও চাপের মধ্যেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ বেশকিছু মেগাপ্রকল্প চলতি বছরেই বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার।

আওয়ামী লীগের নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে ছিল ভোটের মাঠে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে দলের তৃণমূলের দ্বন্দ্ব-কোন্দলন নিরসন। তাই দলের মধ্যে ঐক্যের সৃষ্টি, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্ধারণসহ নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে তৃণমুলে ছুটেছেন দলীয় প্রধানসহ দলের শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনি জনসভা, কর্মীসভা, সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে দেশব্যাপী তুলে ধরা হয়েছে সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি।

আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা

নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে আমেরিকা ভিসানীতির কথা বলে। এরমধ্যে খাদ্যসামগ্রীর দাম ঊর্ধ্বমুখী, ডলার সংকট দেখা দেয় বাংলাদেশে। মার্কিন ভিসানীতি, স্যাংশন ও নির্বাচন কেন্দ্রীক আন্তর্জাতিক চাপও বাড়তে থাকে। তবে এসব সমস্যা শক্ত হাতেই মোকাবিলা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার কঠোর পরিশ্রম ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সব বাধা পেরিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাচনমুখী আওয়ামী লীগ

চলতি বছরের শুরু থেকে নির্বাচনমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। বছরের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে করা হয়েছে নির্বাচনি জনসভা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এসব নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ গতকাল বরিশালে নির্বাচনি জনসভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। এর আগে ২৬ ডিসেম্বর রংপুরের তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জে নির্বাচনি জনসভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। এর আগে ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী, ১১ মার্চ ময়মনসিংহ, ১৩ নভেম্বর খুলনা, ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ২ আগস্ট রংপুর, ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার, ২০ ডিসেম্বর সিলেটে জনসভায় ভাষণ দেন। আজ ৩০ ডিসেম্বর মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে নির্বাচনি জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর বাইরেও গত ২১ ডিসেম্বর পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নাটোর, পাবনা ও খাগড়াছড়ি নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রতিটি সমাবেশে বর্তমান সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন তিনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন দেশের মানুষ ফের নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে আসে- এজন্য মহাসমাবেশে উপস্থিত জনতার কাছে নৌকায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আরও উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতিও দেন। প্রতিটি জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। দলীয় প্রধানের জনসভার মধ্যদিয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

তৃণমূলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর

নির্বাচনের বছরে ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল গঠনে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তৃণমূলে সৃষ্ট সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং তা সমাধানে জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের সফরে করেছেন দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা, সমাবেশসহ নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে দলটি। তৃণমূল সফরের মধ্যদিয়ে তৈরি করে সাংগঠনিক রিপোর্ট। এছাড়া, স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা।

তৃণমূল নেতাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল গণভবন

দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বিভেদ, বিভাজন ও বলয় ভিত্তিক রাজনীতি ছেড়ে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন- সেজন্য দলের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সাংসদ, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের ডাকা হয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে। তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের পদচারণা মুখরিত হয়ে ওঠে গণভবন। আগত নেতাদের ভেদাভেদ ভুলে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে নির্বাচনের মাঠে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেন তিনি।

নির্বাচন ঘিরে সরকারের উন্নয়ন প্রচার

টানা ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের সর্বত্রই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। পদ্মাসেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, তৃতীয় টার্মিনালসহ বড় বড় মেগাপ্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ এমন কোনো খাত নেই যে খাতে সরকারের উন্নয়ন সাধিত হয়নি। বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালিন ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ সব শ্রেণি পেশার অসহায় মানুষদের বিভিন্ন ভাতার আওতায় নিয়ে আশা হয়। তবে, সরকারের এসব উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সরকারের এসব উন্নয়ন তুলে ধরেন জনপ্রতিনিধিরা।

নির্বাচনি ইশতেহার

বছরের শেষে এসে ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনসহ ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে অনেকটাই চমক দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নিজ নিজ দলের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকাল-সন্ধ্যা ভোট প্রার্থনা করছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে। কেউ ধাক্কা দিবে আর পড়ে যাবে এটা আওয়ামী লীগ নয়। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে। অতীতে যেমন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সরব থেকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছে ভবিষ্যতে করবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথ থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক দল। দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। প্রতিপক্ষ দল বা ষড়যন্ত্রকারীরা যতই ষড়যন্ত্র করুক আওয়ামী লীগের কাছে তা সফল হবে না। সকল কিছু মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে।

(ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/জেএ/বিবি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: ঢাকা দক্ষিণের আ.লীগ নেতা রিয়াজকে ফের শোকজ

যুবদল সভাপতি টুকুকে কারাগারে প্রেরণের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ

সরকার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দমনপীড়নের খড়গ নামিয়ে এনেছে: মির্জা ফখরুল

শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আ.লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ: ওবায়দুল কাদের

পথচারীদের মাঝে তৃতীয় দিনের মতো পানি ও স্যালাইন বিতরণ জাপার

মুক্তি দেওয়া হচ্ছে হেফাজতের মামুনুল হককে, আভাস দিলেন নেতারা

গোটা দেশের মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: রিজভী 

উপজেলা নির্বাচন এখন উপজ্বালায় পরিণত হয়েছে: সালাম

তীব্র তাপপ্রবাহে জাপার পানি ও স্যালাইন বিতরণ

উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করবে জনগণ: প্রিন্স

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :