ইউনাইটেড হাসপাতালে খৎনা করিয়ে মৃত্যুশয্যায় শিশু আয়ান
রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নাতে খৎনা করানো এক শিশু এখন মৃত্যুশয্যায়। আয়ান নামে পাঁচ বছরের এই শিশুটি চার দিন ধরে জ্ঞানহীন। সে পিআইসিইউতে ভর্তি আছে।
ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার বলছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে শিশুটির শরীরের বেশিভাগ অঙ্গ ডেথ হয়েছে। সে বেঁচে আছে কিনা স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আয়ানের অবস্থা বেগতিক হওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের নির্দেশনায় তাকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ৩১ ডিসেম্বর খাৎনার জন্য আয়ানকে মাদানি এভিনিউতে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তার শরীরে অ্যানেসথিসিয়া দেন। জ্ঞান ফেরারও কথা ছিল। কিন্তু গত চার দিনেও আয়ানের জ্ঞান ফেরেনি। ফলে আয়ান বেঁচে আছে না কি মারা গেছে তার কোনোটাই শিশুটির অভিভাবককে স্পষ্ট করে বলছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আয়ানের বাবার নাম শামীম আহমেদ। তিনি কনকর্ড গ্রুপের সেলস বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে আছেন। আর আয়ান জলসিঁড়ি ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে নার্সারিতে পড়ে।
ভু্ক্তভোগী পরিবার আরও জানিয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত চার দিন থেকে তাদেরকে নানাভাবে আশা দিয়ে যাচ্ছেন যে আয়ানকে বাঁচানো যাবে।তাদের কথা মতো শিশুটির বাবা ও স্বজনরা এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন।
আয়ানের চাচা জামিল খান ঢাকা টাইমসেকে বলেন, ‘গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে মাদানি এভিনিউতে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আয়ানকে সুন্নতে খাৎনা করাতে নিয়ে যায় তার পরিবার। ওইদিনই সকালে ডাক্তারদের পরামর্শে আয়ানকে অ্যানেসথিসিয়া দিয়ে খাৎনা করা হয়। ওইদিন সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তার বাবা জোর করে অপারেশন রুমে ঢুকে দেখেন আয়ানকে সিপিআর (কৃত্তিম শ্বাস দেওয়ার প্রক্রিয়া) দেওয়া হচ্ছে। আর বুকের দুই পাশে দুইটা ছিদ্র করা এবং বুকের ভেতরে পাইপ ঢুকানো। এরপর আয়ানের অবস্থা আরও গুরুতর হয়। তাৎক্ষণিক ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাড়িতে করেই গুলশান-২ এ ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতিতে তারা খৎনা করবেন। সেভাবেই আমরা অনুমতি দিয়েছি। কিন্তু তারা অনুমতি পেয়ে ফুল অ্যানেসথিসিয়া দিয়েছে না কী করছে তাতো আমরা স্পষ্ট না। আমরা ডাক্তারদের বলেছি খরচ যা লাগে দেব। কিন্তু চিকিৎসা যাতে ভালো হয়। ডাক্তার বলেছে অবশ করে নেবে। কিন্তু আমরা তো মনে করেছি খাৎনার স্থানটা শুধু অবশ করবে।
জামিল খান বলেন, হাসপাতাল থেকে গত তিন দিন ধরে বলতেছে বাচ্চার অবস্থা আগের থেকে একটু ভালো। কিন্তু আজ বুধবার সকাল ৬টায় আয়ানের বাবা-মাকে ডেকে ডাক্তাররা বলেছে যে বাচ্চার শরীরে বেশিরভাগ অর্গানই (অঙ্গ প্রতঙ্গ) ডেথ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাঁচার সম্ভববনা খুবই ক্ষীণ। এ ছাড়া আয়ানকে দেখতে কাউকে এতোদিন ঢুকতে দেয়নি। তারা ঠিক মতো চিকিৎসা দিলে এই চার দিনেও কেন জ্ঞান ফিরবে না আয়ানের?
এ বিষয় হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা নিজেদের তত্ত্বাবধায়নে আয়ানকে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতলে নিয়ে এসেছি। আনার পর বাচ্চার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। এরপর আয়ানকে পিআইসিউতে ভর্তি করানো হয়। এখন বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা চলছে।
এদিকে ভুক্তভোগী আয়ানের বাবার এক সহকর্মী অভিযোগ করে বলেন, আয়ানের সুন্নতে খাৎনার দিন অপারেশন থিয়েটারে মূলত ওই মেডিকেল কলেজটির ইন্টার্নি ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থীদের ঢোকানো হয়েছিল। তারা শিশুটিকে পরীক্ষার উপাদান ও অপারেশন শেখার অংশ হিসেবে কাজটি করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও তারা এখন তারা স্বীকার করছে না। ওই সময় শিশুটির বাবা অপারেশন থিয়েটার থেকে তাকে বের করতে দেরি হওয়ায় একপর্যায় ঢুকে পড়েন এবং দেখতে পান, তার ছেলের নাকি মুখে তারা নল লাগিয়ে শ্বাস দেয়ার চেষ্টা করছে তারা। তখনই আমরা মনে করেছি আয়ানকে তারা ভুল কিছু করেছে। পরে তাকে গুলশানের শাখায় পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। তবে যেহেতু হাসাপাতালটির সুন্নতে খাৎনা সাতারকুল শাখায় করা হয় সেই কারণে সেটির অভিযোগ দিতে হবে ভাটারা থানায়। তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাই অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/০৩জানুয়ারি/টিআই/এইচএম/এসএস/ইএস)