অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর করতোয়া নদী
শীতের হিমেল হাওয়ায় অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখ হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের করতোয়া নদী। হাজার হাজার পাখি সারাক্ষণ মুখরিত করে রেখেছে নদীটিতে। পাখি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে পাখি প্রেমীরা। এখন পানি অনেকটাই কমে গেছে, তবুও এর সৌন্দর্য কমেনি একফোঁটাও।
করতোয়ায় অতিথি পাখির আনাগোনা বেড়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। প্রতিবছর শীত মৌসুমে নদীটি যেন হয়ে যায় পাখির আবাসস্থল। এবারও এ নদীতে বাসা বেঁধেছে বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখিসহ হাজারো অতিথি পাখি। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখি প্রেমীরা দল বেঁধে আসছেন পাখি দেখতে। শীতকাল এলেই এই করতোয়া নদীতে অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে। খুব বড় না হলেও নদীটি পাখির কারণে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। পাখির বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি, উড়ে চলা, নীরবে বসে থাকা মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই দূর দূরান্ত থেকে লোকজন এক নজর পাখি দেখার জন্য এখানে আসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শান্ত জলের বুকে কচুরিপানার সবুজ গালিচার মাঝে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে অতিথি পাখির দল। উড়ে চলা পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত চারপাশ। পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজা হাঁস, বালি হাঁস, পাতিকূটসহ দেশী জাতের শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নি হাঁস বিল এলাকা মুখরিত করে তুলছে। কিন্তু পরিমাণে গত বছরের প্রায় অর্ধেক। এবছরও তিব্বতীয় মানিকচক, সাইবেরিয়ান ফিদ্দাসহ অনেক অতিথি পাখিই চোখে পড়ার মত।
স্থানীয় নওগাঁ বাজারের ব্যবসায়ী প্রদীপ কর্মকার জানান, এখানে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা প্রায় ১০-১২ হাজার। এসব অতিথিদের রক্ষায় এবার বেশ তৎপর গ্রামবাসী। কোনো শিকারি যেন পাখিদের আঘাত করতে না পারে তাই নিজ দায়িত্বে পাহারা দিচ্ছেন তারা। পাখিদের আশ্রয়স্থল নিরাপদ করতে সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের।
আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন রনি বলেন, এ বছর করতোয়া নদীতে অনেক পাখি এসেছে। পাখিগুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। প্রতি বছরই এই অতিথি পাখিগুলো আসে এ নদীতে।
নওগাঁ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে গাছপালা বেশি। এছাড়া বিস্তীর্ণ জলাশয় থাকায় পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় মনে করছে। পাখিদের এই আগমন পুরা গ্রামের চেহারাই বদলে দিয়েছে।
তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক আবু হাসিম খোকন বলেন, অতিথি পাখি শীতকালের সৌন্দর্য। যার উপস্থিতিতে প্রকৃতিতে আসে নতুন রূপ। নির্দিষ্ট সময়ের পর এই পাখিগুলো চলে যায়। অতিথি পাখি আমাদের ক্ষতি করে না। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পাখি শিকার করা হয়। জীবন বাঁচাতে এসে জীবন দিতে হয় ভিনদেশি পাখিদের। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য পাখির বিচরণক্ষেত্র মুক্তভাবে রক্ষা করতে হবে। সেখানে জনগণকে সচেতন করা হবে। যেন কেউ পাখিদেরকে বিরক্ত ও শিকার না করে।
(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/ ইএইচ)