মৌসুমি বাজার হারানোর শঙ্কায় নারায়ণগঞ্জের ফুলচাষিরা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৩ | প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০১

দিগন্তজুড়ে সারি সারি ফুলের গাছ। সবুজ পাতায় মোড়ানো ফুলের অজস্র গাছে যেন বিধাতা নিজে গাঁদা, জিপসি, মামস, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, গ্লাডিওলাস ও জর্বেরার মতো বাহারি রঙের ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরের সাবদিতে ফুলবাগানের হাওয়ায় ভেসে আসা গন্ধ মন মাতায়, প্রাণ জুড়ায়। শীতের এই সময়ে এমন দৃশ্য প্রতি বছরের হলেও এবারের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ফোটেনি ফুল। তাই সাবদির ফুলচাষিদের কপালে মৌসুমি বাজার হারানোর চিন্তার ভাঁজ।

কৃষকের মাঠে শীতের এই সময়ে ফুল তোলার প্রস্তুতি থাকার কথা থাকলেও এখনো জমি নিড়িয়ে বীজ বপন করছেন অনেকে। শীতের শুরুতে অসময়ের দুই দফা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদি, দিঘলদী ও মাধবপাশা গ্রামের ফুলচাষিরা। অগ্রহায়ণে ফুলের বীজতলা তৈরি করেন বাগানিরা। সে ফুল পরিপক্ব হয়ে বিক্রয় উপযোগী হয় মাঘ মাসের মাঝামাঝিতে। তবে এ বছর বৃষ্টিপাতের কারণে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও মৈকুলির প্রভাবে পুনরায় বীজতলা করায় পিছিয়ে পড়েছে ফুলচাষিরা।

মাঠজুড়ে ফুল গাছগুলোতে কলি এলেও এখনো ফোটেনি ৭০-৮০ শতাংশ ফুল। এতে করে পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুলের বাজার হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন এই অঞ্চলের ৫৯৮ বিঘায় ফুলের আবাদ করা প্রায় দেড় শতাধিক ফুলচাষি।

স্থানীয় ফুলচাষি ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের জমিটি বেশ উঁচু। তারপরও এবার বৃষ্টির কারণে সুবিধা করতে পারবো না। যখন ফুল বিক্রির মৌসুম সেসময় ফুল ফুটছে না। সামনে কয়েকটি দিবস রয়েছে। সেসব দিবসকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই ফুল স্টক করে রাখতে হয়। কিন্তু গাছে ফুল না ফোটার কারণে স্টক করে রাখা যাচ্ছে না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ও পরামর্শে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের বাজার ধরে লোকসান ঘুচিয়ে লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন এখানকার ফুলচাষিরা। ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ে সাবদিতে। আগত দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি হয় ফুল। বাগান থেকে তোলা ফুল দিয়ে রিং তৈরি করেন চাষিরা। প্রিয় মানুষকে ফুলের তৈরি রিং দিয়ে বরণ করেন অনেকে। বাগান ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের কাছে ফুল বিক্রি করেও লাভবান হন ফুলচাষিরা। বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এবার মৌসুমি ফুলের বাজার হারানোয় ক্ষতির পরিমাণ ৩০-৪০ লাখ টাকা। তবে প্রান্তিক ফুল চাষিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে কোটি টাকারও বেশি।

অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বপনের পর বৃষ্টির কারণে পুনরায় বীজতলা করতে হয়েছে। ফলে ফুল উৎপাদনে এক মাস পিছিয়েছে ফুলচাষিরা। ১৪ এবং ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফুল না ফুটলে পুঁজি হারাবেন অনেকে। ৫ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করে এই সিজনে দুই লাখ টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহায়তা কামনা করছেন স্থানীয় ফুলচাষিরা।

এদিকে ফুলগ্রাম হিসেবে পরিচিত সাবদিতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন দর্শনার্থীরা। বাগানে ফুল কম থাকায় মন খারাপ আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই সব ফুল ফুটে যাওয়ার কথা। তবে বৃষ্টির কারণে মাত্র ১০-২০ শতাংশ ফুল ফুটেছে। ফলে এখানকার ফুলের বাজারের বাণিজ্যিক ক্ষতি হবে। এ বিষয়ে বন্দর উপজেলার মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসিন আরাফাত ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার জন্য ফুলের আবাদ কমেছে। বন্দর উপজেলার কৃষকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেশ কিছু দিবসকে কেন্দ্র করে ৮০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেছেন। এ বছর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিশেষ করে গাঁদা ফুল চাষিরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আনুমানিক ৩০-৪০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হবে না।

বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার ঢাকা টাইমসকে জানান, শস্য জাতীয় ফসলে ভর্তুকি মূল্যে সার ও বীজ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও ফুল চাষে এমন কোনো সুবিধা পান না চাষিরা। তাই সরকারি সহায়তা কিংবা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কলাগাছিয়া ইউনিয়নের ফুলচাষিরা।

(ঢাকা টাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :