শুল্ক কমার প্রভাব নেই বাজারে, উল্টো বেড়েছে দাম

এক ডজন আমদানিকারকের কবজায় রোজার ভোগ্যপণ্য

মেহেদী হাসান ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১০ | প্রকাশিত : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫০

রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেলসহ কিছু পণ্যের শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব তো পড়েইনি, উল্টো গত এক সপ্তাহে রমজানসংশ্লিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ যথাযথ নয়। ডলার সংকটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এতদিন ভোগ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারেনি। তখন সরকার নজর দেয়নি। ফলে রমজানের এসব ভোগ্যপণ্য আমদানির সুযোগ নিয়েছেন সীমিত কয়েকজন আমদানিকারক।

রমজানের আগমুহূর্তে আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর অর্থ অনেকটা বড় আমদানিকারকদের বাড়তি সুবিধা দেয়ার মতো বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীরা।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চালের আমদানি শুল্ক-কর ৬৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। আর সম্পূরক শুল্ক কমানো হয় ২০ শতাংশ। এছাড়া পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে, আগে যা ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। আর খেজুর আমদানিতে শুল্ক ৫৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

কিন্তু দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে। পাইকারি পর্য়ায়ে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩২ টাকায় বিক্রি হতো। এছাড়া গত সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬১ টাকা, পাম তেল ১৩১ টাকা ও সুপার পাম তেল ১৩৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন সয়াবিন তেল ১৫৫ টাকা, পাম তেল ১৩৪ টাকা ও সুপার পাম তেল ১৩৭ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রমজানসংশ্লিষ্ট পণ্যসহ দেশের পুরো ভোগ্যপণ্যের বাজার এখন সর্বোচ্চ ১০-১৫ জন বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের হাতে সীমাবদ্ধ। ফলে রমজানের আগমুহূর্তে শুল্ক-কর কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। বরং এটা আমদানিকারকদের বাকি পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড়ের সুযোগ করা দেয়া। যার কোনো সুফল ভোক্তারা পাবে না।’

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কোটি কোটি মানুষের জীবনমান কমছে আবার কোটি মানুষ খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে। বাজারের দ্রব্যমূল্য কমছে না। মন্ত্রীদের এতো দোড়ঝাঁপ দেখা গেলেও এর কোনো কার্যকারিতা নেই। শুল্ক কমিয়েও দ্রব্যমূল্যের দাম কমছে না। সরকার শুল্ক কমিয়েও দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো সুফল পাচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন দাম যেন বেড়েই চলেছে।’

রবিবার রাজধানীর কল্যাণপুর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুল্ক কমানোর পরও খুচরা পর্যায়ে ওই ভোগ্যপণ্যগুলোর দাম কমেনি।

কারওয়ান বাজারের ইয়াসিন জেনারেল স্টোরের বিক্রয়কর্মী আলী হোসেন বলেন, খোলা চিনি ১৪০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা কেজি, ছোলা ১১০ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা লিটার বিক্রি করছেন তারা।

ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক সপ্তাহে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে রমজানের অন্যতম ভোগ্যপণ্য ছোলার দাম।

তারা বলেন, এক সপ্তাহ আগে পাইকারিতে ভালো মানের প্রতিকেজি ছোলা (অস্ট্রেলিয়া) বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা। দাম ১০ টাকা বেড়ে সপ্তাহ শেষে বৃহস্পতিবার একই ছোলা ৯৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের যেসব ছোলা ৮০ টাকায় বিক্রি হতো, তার দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯১ টাকায়।

একইভাবে স্বাভাবিক সময়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া সাদা মটরের দাম ঠেকেছে এখন ৬৬ টাকায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, এবারে রমজানকে ঘিরে ছোলা আমদানি হয়েছে চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। এই সুযোগে আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশিরভাগ ছোলা খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী (পায়েল ট্রেডার্স) কিনে নিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী এখন ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, টিটু আমাদের জাতীয় যে কমিটি আছে, জাতীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক আগামী মঙ্গলবার হবে। সেখানে তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করতে পারবো বলে আমরা আশা করছি। বাকি পণ্যগুলোর ইন্ডিকেটিভ (নির্দেশক) মূল্য, সেটা ২০ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় টাস্কফোর্সের যে বৈঠক আছে, সেই কমিটিতে বসে করা হবে। তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, আমাদের সবকিছু রমজানকে কেন্দ্র করে। রমজান শুরু হবে ১১ মার্চ। বাকি সময়টা আমাদের প্রস্তুতির জন্য। বৈঠকে একটা দামও নির্ধারণ করতে আমরা চেষ্টা করবো। যে তারিখে কারখানা থেকে তেল বের হবে, সেই তেলের বোতলে নতুন মূল্য মার্ক করা থাকবে। তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ের মনিটরিং থাকবে। যেদিন থেকে ঘোষণা করা হবে, সেদিন থেকে আমাদের কারখানা মূল্য, টিপি ও ভোক্তা পর্যায়ের মূল্য একদিনে পরিবর্তন হবে। আমরা যেদিন নির্ধারণ করবো, সেদিন এমআরপি নির্ধারণ করে দেব। সেটা হচ্ছে, এমআরপি সর্বোচ্চ এত টাকায় বিক্রি হবে, এর বেশিতে কেউ বাজারে বিক্রি করতে পারবে না। ‘বাজারে একচেটিয়া প্রভাব রোধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

(ঢাকাটাইমস/১৯ফেব্রুয়ারি/এমএইচ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :