ডান্সিং প্লেগে: যে রোগে নাচতে নাচতেই মৃত্যু হয়েছিল ৪০০ মানুষের

এমন অনেক ঘটনাও রয়েছে, যার সঠিক ব্যাখ্যা নেই। এমনই একটি ঘটনা হল ডান্সিং প্লেগ। যেখানে নাচতে নাচতেই মারা গিয়েছিলেন চার শতাধিক মানুষ। প্লেগ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি এক মারণ রোগ, যেখানে শত শত বা হাজার মানুষ মারা যায়। তবে ডান্সিং প্লেগ ছিল একটু আলাদা। ডান্সিং প্লেগে মানুষ নাচতে নাচতে মারা গিয়েছিলেন।
কোথায় ঘটেছিল এমন ঘটনা?
ইতিহাসের পাতা ঘাটলে উঠে আসে ডান্সিং প্লেগের কথা। ষোড়শ শতাব্দীতে, আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ১৫১৮ সালের জুলাই মাসে ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে ছড়িয়ে পড়েছিল ডান্সিং প্লেগ। রোমান শাসকদের অধীনে থাকাকালীনই এমন এক রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে সবাই পাগলের মতো নাচতে শুরু করেছিলেন এবং নাচতে নাচতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন।
কীভাবে ছড়াল ডান্সিং প্লেগ?
স্ট্রাসবার্গে ফ্রউ ট্রোফেয়া নামক এক তরুণী একদিন হঠাৎই একা একা রাস্তায় নাচতে শুরু করেছিলেন। একঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা নয়, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে একা একাই নেচে যাচ্ছিলেন ফ্রউ। কেন নাচছেন, তাও কাউকে বলেননি। ফ্রউকে নাচতে দেখে বাকিরাও নাচতে শুরু করেন।
রাতারাতি এক মাসের মধ্যেই এই নাচ রোগের আকার নেয়। অক্লান্তভাবে নাচতে নাচতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অনেকে। এভাবেই ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়। কেউ ক্লান্তিতে, কেউ স্ট্রোক হয়ে, কারোর আবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু হয়।
এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয় প্রশাসন। তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন, নাচই মুক্তির একমাত্র পথ। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। বাধ্য হয়ে সরকার প্রকাশ্যে নাচ করাই নিষিদ্ধ করে দেয়। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় প্রকাশ্যে গান বাজানোর উপরও। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ধীরে ধীরে রোগের প্রকোপ কমতে থাকে।
শুধু স্ট্রাসবার্গেই নয়, পরবর্তী সময়ে জার্মানি, হল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ডেও এই রোগ দেখা দেয়, যেখানে সাধারণ মানুষ বিনা কারণেই নাচতে শুরু করেন। তবে কোথাও রোগ স্ট্রাসবার্গের মতো মহামারির আকার নেয়নি।
এদিকে কোথা থেকে, কীভাবে এই রোগ ছড়িয়েছিল, তার কারণ আজও জানা যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন, এক ধরনের ফাঙ্গাস থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। পাউরুটি বা শস্যের ওপরে এমন এক ফাঙ্গি তৈরি হয়, যা অত্যন্ত বিষাক্ত। এতে সাইকোঅ্যাকটিভ কেমিক্যাল থাকায় যা খাওয়ার পরই সকলে পাগলের মতো নাচতে শুরু করেছিল।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রয়ারি/এমআর)

মন্তব্য করুন